ঢাকা, সোমবার   ০৩ নভেম্বর ২০২৫

সুদানে গণহত্যার নেপথ্যে আমিরাতের স্বর্ণ ব্যবসার যোগসাজশ

একুশে ডেস্ক

প্রকাশিত : ১৬:০৮, ২ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৬:৪০, ২ নভেম্বর ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

আফ্রিকার বুকে যেখানে যুদ্ধের ধোঁয়া, সেখানে মরুর বুকে উঠছে সোনার প্রাসাদ। রক্তের দামে কেনা সোনা এখন ঝলমল করছে মরুর বুকে, আর আফ্রিকার দরিদ্র মানুষের ঘামে ভিজে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বিলাসবহুল আকাশচুম্বী দালান। আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফ যুদ্ধের নামে মানুষের জীবন আর মাটির নিচের স্বর্ণ লুটে নিচ্ছে, তারপর সেই সম্পদ গোপনে আরব আমিরাতের বাজারে পাচার করছে। 

দুবাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসার জৌলুসের পেছনে তাই লুকিয়ে আছে এক ভয়াবহ বাস্তবতা সুদানের রক্ত, ঘাম আর অশ্রু। 

আফ্রিকার অন্যতম বৃহত্তম দেশ সুদান প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। বিস্তীর্ণ কৃষিজমি, গ্যাস এবং স্বর্ণে সমৃদ্ধ, যার মধ্যে স্বর্ণ উৎপাদনে দেশটি মহাদেশের তৃতীয় স্থানে। এ কারণে সুদানকে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে সংযুক্ত আরব আমিরাত ইউএই। পাশাপাশি দেশটির ভৌগোলিক অবস্থানও বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এটি লিবিয়ার প্রতিবেশী, যেখানে আবুধাবি বিদ্রোহী কর্তৃপক্ষকে সমর্থন করে এবং লোহিত সাগর উপকূলে অবস্থিত যা তেলবাহী জাহাজ চলাচলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক নৌপথ।

২০২১ সালে সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান ও আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফ-এর প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো যৌথভাবে ক্ষমতা দখলের পর থেকে সুদানকে কেন্দ্র করে ইউএই’র ভূরাজনৈতিক আগ্রহ আরও বেড়েছে। সম্পদ, অবস্থান ও প্রভাব এই তিন কারণেই সুদান এখন মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষমতার রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রবিন্দু।

সুদানে সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফ’র মধ্যে ভয়াবহ সংঘাত চলছে। আরএসএফের নেতা মোহাম্মদ হামদান দাগালো দীর্ঘদিন ধরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছ থেকে আর্থিক ও সামরিক সহায়তা পেয়ে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ অভিযোগ করেছে, আরএসএফ সুদানের দারফুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলে গণহত্যা, জাতিগত নিধন ও নারী নির্যাতনের মতো যুদ্ধাপরাধে জড়িত। যদিও ইউএই এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে, তবুও বিশ্লেষকদের মতে, দাগালোর আর্থিক নেটওয়ার্ক এবং অস্ত্র সরবরাহের বড় অংশই আবুধাবি হয়ে আসে, যা সুদানের চলমান সংঘাতকে আরও জটিল করে তুলছে।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, গোয়েন্দা রিপোর্ট ও মানবাধিকার সংগঠনের দাবি সুদানে আরএসএফের গণহত্যা নেপথ্যে আরব আমিরাতের স্বর্ণের যোগসাজশ রয়েছে।

সুদানে সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের মধ্যে চলমান রক্তক্ষয়ী সংঘাতে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। আরএসএফের নেতা মোহাম্মদ হামদান দাগালোর বাহিনী বিশেষ করে দারফুর অঞ্চলে নির্বিচারে হত্যা, নারী ধর্ষণ, গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়া ও জাতিগত নিধনের মতো নৃশংসতা চালাচ্ছে বলে জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ। পশ্চিম সুদানের মাসালিত জাতিগোষ্ঠীকে টার্গেট করে যে সহিংসতা চালানো হয়েছে, তা আনুষ্ঠানিকভাবে ‘গণহত্যা’ হিসেবে ঘোষণা করেছে ওয়াশিংটন। এ পর্যন্ত লাখো মানুষ দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।

মানবাধিকার সংস্থা ও কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, আরএসএফের অস্ত্র ও অর্থের বড় উৎস সংযুক্ত আরব আমিরাত।  সীমান্তবর্তী ঘাঁটি ও বিমানবন্দর ব্যবহার করে ইউএই থেকে আরএসএফের কাছে নিয়মিতভাবে অস্ত্র ও সরঞ্জাম পৌঁছানো হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া, হেমেতির স্বর্ণ ব্যবসার বড় অংশই দুবাই হয়ে রপ্তানি হয়, যার অর্থ যুদ্ধ চালানোর তহবিল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে, সুদানের রক্ত ও অশ্রুর বিনিময়ে সমৃদ্ধ হচ্ছে দুবাইয়ের সোনার বাজার—এমন অভিযোগ তুলেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। 

অপরদিকে আরব আমিরাতের সহযোগিতায় আরএসএফ এর হাতে এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় লাখ মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে। গৃহহীন হয়েছেন প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ। ইতিহাসের বড় মানবিক বিপর্যয়ের এটি একটি।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, চলমান সংঘাতে দশ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত, লক্ষাধিক নারী নৃশংসভাবে ধর্ষণের শিকার এবং এক কোটির বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইউএই। 

তবে বিশ্লেষকদের মতে, দাগালোর ব্যক্তিগত আর্থিক নেটওয়ার্ক ও যুদ্ধ সক্ষমতার মূলে রয়েছে আবুধাবির সহায়তা। তাদের ভাষায়, সুদানের রক্তে লেখা হচ্ছে আরব উপসাগরের সোনালী লিপি।

এএইচ


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি