ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

যৌন হয়রানি: জবি শিক্ষক চাকরিচ্যুত

প্রকাশিত : ১১:২১ এএম, ১০ জুলাই ২০১৭ সোমবার | আপডেট: ১০:২০ এএম, ১২ জুলাই ২০১৭ বুধবার

ছবি : চাকরিচ্যুত শিক্ষক রাজীব মীর

ছবি : চাকরিচ্যুত শিক্ষক রাজীব মীর


একাধিক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৪তম সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

বরখাস্ত হওয়া শিক্ষকের নাম মীর মোশারেফ হোসেন (রাজীব মীর)। তিনি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মীজানুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, রাজীব মীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এ কারণেই তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাংবাদিকতা বিভাগের কয়েকজন ছাত্রীর যৌন হয়রানির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত তিনিটি তদন্ত কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে রাজীব মীরকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া নাট্যকলা বিভাগের আরেক ছাত্রীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগের এক শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ৫ এপ্রিল গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এক ছাত্রী রাজীব মীরের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন। এ সময় তিনি মুঠোফোনে কথোপকথনের রেকর্ডসহ বিভিন্ন প্রমাণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে উপস্থাপন করেন। পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়াকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কর্তৃপক্ষ।

২৮ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় রাজীব মীরকে  সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে। পরে ওই বিভাগের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের আরও কয়েকজন ছাত্রী তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন। এসব অভিযোগ তদন্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেল।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক লাইসা আহমেদ লিসার নেতৃত্বে ওই সেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাদেকা হালিম, জগন্নাথের বাংলা বিভাগের শিক্ষক ড. হোসনে আরা বেগম জলিসহ আরও কয়েকজন শিক্ষক ছিলেন।

তদন্ত চলাকালে অভিযোগকারীরা মোবাইল রেকর্ড, ফেইসবুকে আলাপচারিতা ও মেসেজসহ বিভিন্ন প্রমাণাদি তুলে ধরেন। পাশাপাশি ছাত্রীদের সিনেমা হলে যেতে বাধ্য করা, বাসায় নিয়ে যাওয়া, একসাথে একাধিক ছাত্রীকে বিয়ের প্রলোভনে সম্পর্ক তৈরির চেষ্টাসহ নানা বিষয় উঠে আসে।

এই কমিটির তদন্তেও রাজীব মীর দোষী সাব্যস্ত হন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেলের প্রতিবেদনে রাজীব মীরের বিরুদ্ধে ‘জোর ব্যবস্থা` গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।

এ সময় এই শিক্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করে ক্যাম্পাসে আন্দোলনে নেমেছিল দুটি ছাত্র সংগঠন।

ওই দুই তদন্তে রাজীব মীরের অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার পর চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের তৎকালীন সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে প্রধান করে উচ্চতর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় গত নভেম্বরে। ওই কমিটির অন্য দুই সদস্য ছিলেন- শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব বেলায়েত হোসেন তালুকদার ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক নূরে আলম আবদুল্লাহ।

এই কমিটি নভেম্বরে রাজীব মীরকে অভিযোগকারী শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি করে উভয়পক্ষের বক্তব্য শোনে। তাদের তদন্তেও অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় রাজীবের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।