ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

রোদ আর মেঘের লুকোচুরি নীলাচল

প্রকাশিত : ০৬:৪১ পিএম, ১৮ আগস্ট ২০১৭ শুক্রবার | আপডেট: ১০:৩১ পিএম, ২১ আগস্ট ২০১৭ সোমবার

রোদ আর মেঘের মাঝে লুকোচুরি নীলাচল পর্যটন কেন্দ্র। চূড়ায় গিয়ে দাঁড়ালেই মনে হবে যেন, আকাশের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২ হাজার ফুট উঁচুতে নীলাচলের অবস্থান। যতদূর চোখ যায় দৃষ্টি যায় চূড়া থেকে দেখা মেলে কাছে-দূরে সবুজে মোড়ানো নানা উচ্চতার পাহাড়ের সারি।

এখানে দাঁড়িয়ে দূর থেকে দেখা যায় বান্দরবান শহর আর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সাঙ্গু নদী। বান্দরবান জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গড়ে তোলা মনোরম এই পর্যটন কেন্দ্রে সাম্প্রতিক সময়ে নতুন যোগ করা হয়েছে একটি রিসোর্ট। তাই এখানে বেড়ানোর পাশাপাশি পর্যটকরা রাত যাপনের সুযোগ পাবেন।

কয়েকটি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র আছে এর একেবারে চূড়ায় পর্যটকদের জন্য। মূল পাহাড়ের শিখরের চারপাশেই মনোরম স্থাপনা শৈলীতে নির্মাণ করা হয়েছে এসব কেন্দ্র। এগুলো একটি থেকে থেকে অন্যটি একেবারেই আলাদা। আবার এটি একেক দিক থেকে পাহাড়ের দৃশ্যও একেক রকম। বর্ষা এবং বর্ষা পরবর্তী সময়ে এখানে চলে মেঘের খেলা। কিছুক্ষণ পর পরই দূর পাহাড় থেকে মেঘের ভেলা ভেসে আসে নীলাচলের চূড়ায়। চারপাশ ঢেকে ফেলে শীতল নরম পরশে।

নীলাচলে বাড়তি আকর্ষণ হল এখানকার নীলাচল স্কেপ রিসোর্ট। সাধারণ পর্যটকদের জন্য এ জায়গায় সূর্যাস্ত পর্যন্ত অনুমতি আছে। তবে রিসোর্টের অতিথিদের জন্য সর্বক্ষণই খোলা এ জায়গা।

শহর ছেড়ে চট্টগ্রামের পথে প্রায় তিন কিলোমিটার চলার পরেই হাতের বাঁ দিকে ছোট একটি সড়ক এঁকেবেঁকে চলে গেছে নীলাচলে। এ পথে প্রায় তিন কিলোমিটার পাহাড় বেয়ে পৌঁছুতে হয়। মাঝে পথের দুই পাশে ছোট একটি পাড়ায় দেখা যাবে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর মানুষের বসবাস।

নীলাচলে নতুন কয়েকটি জায়গা তৈরি করা হয়েছে পর্যটকদের জন্য। টিকেট ঘরের পাশেই ‘ঝুলন্ত নীলা’ থেকে শুরু করে ক্রমশ নীচের দিকে রয়েছে আরও কয়েকটি বিশ্রামাগার। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘নীহারিকা’ এবং ‘ভ্যালেন্টাইন’ পয়েন্ট। পাহাড়ের ঢালে ঢালে সাজানো হয়েছে এ জায়গাগুলো। একটি থেকে আরেকটি একেবারেই আলাদা। আবার একেক জায়গা থেকে সামনের পাহাড়ের দৃশ্যও একেক রকম।

নীলাচলের এক পাশে আছে ক্যাফে আর টি-স্টল। ক্যাফেটি গোল আকৃতির। ক্যাফের কাছে ফুলের বাগান। সেখানে মিনি চিড়িয়াখানায় আছে কয়েক জাতের বন্যপ্রাণী। কানে ভেসে আসে পাখিদের কলকাকলি। এক সময় বান্দরবানে প্রচুর বানর বিচরণ করত। বানরগুলো শহরের ধারেকাছের খাল বা ছড়া পাড়ি দিয়ে সারি বেঁধে পাশের জঙ্গলে যেত খাবারের খোঁজে। বানরের সারি বেঁধে খাল পারাপারের এমন দৃশ্য দূর থেকে দেখতে বাঁধের মতো মনে হতো। মারমা সম্প্রদায় তা দেখে নাম দেয় `ম্যাকছে`। যার অর্থ দাঁড়ায় `বানরের বাঁধ`। প্রচলিত আছে বানরের বাঁধ থেকেই নাকি বান্দরবান নামের সূচনা।

যেভাবে যাবেন: রাজধানী থেকে সড়ক পথে সরাসরি বান্দরবানে যাওয়া যায়। ঢাকার ফকিরাপুল, কমলাপুর ও সায়দাবাদ থেকে শ্যামলী পরিবহন, সেন্টমার্টিন পরিবহন ও বিআরটিসির এসি বাস যায়। ভাড়া ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২শ’ টাকা। এছাড়া এসব জায়গা থেকে শ্যামলী পরিবহন, সেন্টমার্টিন, সৌদিয়া পরিবহন, এস আলম পরিবহন, ইউনিক সার্ভিসের নন এসি বাসও যায় বান্দরবান। ভাড়া ৬শ’ থেকে ৭শ’ টাকা।

এছাড়া সড়ক, রেল কিংবা আকাশ পথে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে পৌঁছে সেখান থেকেও সহজেই যাওয়া যায় বান্দরবান। চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট এলাকা থেকে পূরবী, পূর্বানী পরিবহনের বাস সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলাচল করে। ভাড়া ৭০ থেকে ৮০ টাকা।

বান্দরবান শহর থেকে নীলাচল যাওয়ার জন্য ভাড়ায় পাওয়া যায় অটো রিকশা, চাঁদের গাড়ি (খোলা জিপ) ও জিপ। দলের আকার অনুযায়ী প্রয়োজনীয় বাহনটি ভাড়া নিতে হবে। অবস্থানের সময় অনুযায়ী নীলাচলে যাওয়া আসার জন্য অটো রিকশার ভাড়া পড়বে ৫শ’ থেকে ১ হাজার টাকা। আর চাঁদের গাড়ি কিংবা জিপ গাড়ির ভাড়া পড়বে ১ হাজার ২শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা।

নীলাচলে যেতে সড়কের টোল পরিশোধ করতে হয়। অটো রিকশা ৩০ টাকা, জিপ ৬০ টাকা। পর্যটন কমপ্লেক্সে জনপ্রতি প্রবেশ মূল্য ৩০ টাকা। পর্যটকরা সকাল থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নীলাচলে অবস্থান করতে পারবেন।

আর/ডব্লিউএন