রোহিঙ্গাদের ফেরাতে মিয়ানমারকে চাপ দেওয়া হচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশিত : ১০:৪৩ পিএম, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৪:১৬ পিএম, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ শুক্রবার
সেনা অভিযানের মুখে রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমার সরকারের উপর চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবনে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এমিন এরদোয়ানের সঙ্গে বৈঠকের পর নিজের দল আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে একথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একেকটা ঘটনা ঘটছে, আর মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে আশ্রয়ের আশায় ছুটে আসছে। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি তাদের সহযোগিতা করতে। সাথে সাথে আমরা মিয়ানমার সরকারকেও চাপ দিচ্ছি। তাদের দেশের মানুষ যারা আমাদের দেশে আছে; তাদের যেন ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, সেটাই আমরা চাই।
গত ২৪ আগস্ট রাখাইনে সেনা ও পুলিশ চৌকিতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর সেনা অভিযান শুরু করে দেশটির সরকার। সেনাবাহিনী ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ শুরু করে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ অভিমুখে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে। শুরুতে কড়াকড়ি করলেও এরই মধ্যে দেড় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে বলে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা দাবি করছে। এ প্রেক্ষাপটে সমস্যার সমাধান ও রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশসহ বিশ্ব সম্প্রদায় মিয়ানমার সরকারকে আহ্বান জানিয়েছি। কিন্তু দেশটির রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি বরাবরই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি সন্ত্রাসী বলে অভিহিত করেছে।
রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে মেনে নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনের বৈঠকে বলেন, তারা মিয়ানমারেরই নাগরিক। তারা আজকে কেন অন্য দেশে রিফিউজি হয়ে থাকবে। কোনো দেশের মানুষ অন্য দেশে রিফিউজি হয়ে থাকা তো সে দেশের জন্য সম্মানজনক না। এটা মিয়ানমারকে উপলব্ধি করতে হবে। যারা আমাদের দেশে চলে এসে আশ্রয় চাচ্ছে; তাদের নিরাপত্তা দেওয়া উচিৎ, ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিৎ… তাদের জীবন জীবিকার ব্যবস্থা করে দেওয়া উচিৎ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই ৭৮ সাল থেকে রিফিউজি ঢুকছে। রেজিস্ট্রার যা আছে, তার থেকে আনরেজিস্ট্রার বেশি। মিয়ানমারে একেকটা ঘটনা ঘটে, সেখান থেকে লোক চলে আসে।
পালিয়ে বাংলাদেশে আসতে গিয়ে নৌকাডুবির ঘটনায় নারী ও শিশুর মৃত্যুর ঘটনার কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, সব থেকে মানবেতর অবস্থা হচ্ছে; এই নারী ও শিশুরা যে কষ্ট পাচ্ছে। দুধের শিশুরা মারা যাচ্ছে, নারীরা মারা যাচ্ছে। এটা শুনতেই কষ্ট লাগে। এটা সহ্য করা যায় না।
উল্লেখ্য, মিয়ানমারে জাতিগত নিপীড়নের শিকার হয়ে ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করছে। এদের ফেরত নিতে বরাবরাই অস্বীকার করে আসছিল দেশটির জান্তা সরকার। এর মধ্যেই ২০১২ সালের পর গত বছর মিয়ানমারে রাখাইন প্রদেশে সেনা অভিযানের মুখে পুনরায় বাংলাদেশমুখী হয় মুসলিম রোহিঙ্গারা। তবে নতুন করে শরণার্থী নিতে নারাজি বাংলাদেশ সীমান্তে কড়া পাহারা বসায়।
গত বছর মিয়ানমারে ঐতিহাসিক পরিবর্তনে গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় বসলে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানের আশা দেখা দিলেও মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির ভূমিকায় আন্তর্জাতিক মহল হতাশ।
ডব্লিউএন