ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

৪০ বছর যাবৎ মহাকাশে হাঁটছে এই দুই পথিক

প্রকাশিত : ০৭:০১ পিএম, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ শনিবার | আপডেট: ০৫:২২ পিএম, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ শনিবার

ভয়েজার-১ এবং ভয়েজার-২ নামে দুটি মাহাকাশযান মহাকাশে পাঠানো হয়েছে। পাঠানোর ৪০ বছর পার হয়েছে। প্রত্যেকটি কথাই তারা রেখে চলেছে। একের পর এক ‘স্টেশন’ গিয়ে ছুঁয়েছে একের পর এক মাইলস্টোন।

হাড়জমানো ঠাণ্ডায় আদিগন্ত, অতলান্ত মহাকাশে ঘন, জমজমাট, গা ছমছমে অন্ধকারে তারা ছুটে চলেছে। ৪০ বছর ধরে! দু’জনে দু’দিকে। মানবসভ্যতার পাঠানো প্রথম দুই মহাকাশযান। ভয়েজার-১ এবং ভয়েজার-২। মহাকাশেই যাদের এগিয়ে চলার জ্বালানি সৌরশক্তি বা সোলার পাওয়ার রয়েছে।  দুই ‘পথিক’ই মহাকাশে এগিয়ে চলেছে ঘণ্টায় ৩০ হাজার মাইলেরও বেশি গতিবেগে। নাসা জানাচ্ছে, সেই যাত্রাপথে আমাদের গ্যালাক্সির পরবর্তী নক্ষত্রের ‘রাজত্বে’ পৌঁছতে ভয়েজার-১ মহাকাশযানের সময় লাগবে আরও ৪০ হাজার বছর!

অজানা, অচেনা ব্রহ্মাণ্ডকে চিনতে জানতে দু’জনকে মহাকাশে পাঠানো হয়েছিল ৪ দশক আগে। ১৯৭৭-এ। দু’টিই নাসার মহাকাশযান। ভয়েজার-১ যাত্রা শুরু করেছিল ’৭৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। আর তার ‘যমজ’ ভয়েজার-২ যাত্রা শুরু করেছিল তার ১৬ দিন আগে। ’৭৭-এর ২০ অগস্ট।

’৮০-র নভেম্বরে শনিকে ‘বাই বাই’ করে ভয়েজার-১ ঢুকে পড়েছিল আমাদের ছায়াপথ মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির এমন এক জায়গায় যেখানে এর আগে সভ্যতা পৌঁছতে পারেনি কোনও দিন। এখনও পারেনি কেউ। সেটা আন্তর্নক্ষত্রমণ্ডলের এলাকা বা ইন্টারস্টেলার স্পেস। দু’টি নক্ষত্রের মাঝের অঞ্চল।

আজ থেকে ৫ বছর আগে ২০১২-র ২৫ অগস্ট সেই আন্তর্নক্ষত্রমণ্ডল ছাড়িয়ে আমাদের সূর্য, গ্রহ-উপগ্রহ আর সৌর ঝড়কে ঘিরে থাকা ম্যাগনেটিক বাবল্স বা চৌম্বক বুদবুদগুলিকে (হেলিওস্ফিয়ার) পিছনে ফেলে আরও অনেক অনেক দূরে পৌঁছে গিয়েছে ভয়েজার-১। এর আগে আর কোনও মহাকাশযানই সূর্যের হেলিওস্ফিয়ার টপকানোর সাহস দেখাতে পারেনি। ভয়ডর না করে আমাদের সৌরমণ্ডলের চৌহদ্দি পেরিয়ে সূর্য থেকে সবচেয়ে বেশি দূরে পৌঁছনোর সাহস যদি দেখাতে পেরে থাকে কোনও মহাকাশযান, তা হলে সেটা ভয়েজার-১। যা রয়েছে এখন সূর্য থেকে ২ হাজার ১০০ কোটি কিলোমিটার বা ১ হাজার ৩০০ কোটি মাইল দূরে।

গত ৪ দশক ধরে মহাকাশের আরেক ‘পথিক’ ভয়েজার-২ আজ থেকে ২৮ বছর আগে, ১৯৮৯’র অগস্টে নেপচুনকে ছেড়ে রওনা হয়ে গিয়েছে আন্তর্নক্ষত্রমণ্ডল বা ইন্টারস্টেলার স্পেসের দিকে। আর কয়েক বছরের মধ্যেই তারও ঢুকে পড়ার কথা আন্তর্নক্ষত্রমণ্ডলে।

ভয়েজার-২’ই প্রথম মহাকাশযান যা আমাদের সৌরমণ্ডলের বাইরের দিকে থাকা ৪টি গ্রহ- বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুনের কান ঘেঁষে বেরিয়ে গিয়েছে। এই ভয়েজার-২ মহাকাশযানই প্রথম গিয়েছিল ইউরেনাস আর নেপচুনের মুলুকে। এটাই প্রথম মহাকাশযান যা বৃহস্পতি, ইউরেনাস ও নেপচুনের বলয়ের (রিং) ছবি তুলতে পেরেছিল।

নাসা জানিয়েছেন, পৃথিবীর বাইরে ভিন গ্রহের অচিন মুলুকেও যে জীবন্ত আগ্নেয়গিরি রয়েছে, সবার আগে তার হদিশ দিয়েছিল ভয়েজার-১। দেখিয়েছিল বৃহস্পতির চাঁদ আইও’তেই রয়েছে জীবন্ত আগ্নেয়গিরি। যা থেকে এখনও বেরিয়ে আসছে লাভাস্রোত। পৃথিবীর বাইরে অন্য গ্রহেও যে বজ্রবিদ্যুৎ হয়, ভয়েজার-১’ই প্রথম তার সন্ধান পেয়েছিল বৃহস্পতিতে। আর মহাকাশের প্রথম দুই লম্বা দৌড়ের ঘোড়াই প্রথম জানিয়েছিল পৃথিবীর মতো অতলান্ত মহাসাগর রয়েছে বৃহস্পতির চাঁদ ইউরোপাতেও। এখানেই শেষ নয়। ভয়েজার-১ মহাকাশযানই প্রথম পৃথিবীর বাইরে কোনও ভিন গ্রহের ভিন মুলুকে এমন বায়ুমণ্ডলের হদিশ পেয়েছিল, যেখানে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে নাইট্রোজেন। শনির চাঁদ টাইটানে।

পাসাডেনায় নাসার জেট প্রোপালসন ল্যাবরেটরির (জেপিএল) মিডিয়া সেলের অন্যতম মুখপাত্র এলিজাবেথ লান্ডুই মেলে জানিয়েছেন, হেলিওস্ফিয়ার ছাড়িয়ে প্রথম আন্তর্নক্ষত্রমণ্ডলে ঢুকে পড়ার কৃতিত্ব দেখানো ছাড়াও ভয়েজার-১’ই প্রথম কোনও মহাকাশযান যা মহাজাগতিক রশ্মির (কসমিক রে) তীব্রতা মাপতে পেরেছিল। প্রথম মাপতে পেরেছিল আন্তর্নক্ষত্রমণ্ডলের চৌম্বক ক্ষেত্রের পরিমাণও। নক্ষত্রদের মৃত্যুর সময় যে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ (সুপারনোভা) হয়, সেখান থেকে মহাকাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়া পদার্থ দিয়েই গড়ে ওঠে আন্তর্নক্ষত্রমণ্ডলের পদার্থ। সেই আন্তর্নক্ষত্রমণ্ডলের পদার্থের ঘনত্বও প্রথম মাপতে পেরেছিল ভয়েজার-১ মহাকাশযানই। সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

এম/ডব্লিউএন