ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

পাকিস্তানিকে বিয়ে করলেন জয়পুরহাটের তরুণী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৫:২২ পিএম, ২২ মে ২০২০ শুক্রবার | আপডেট: ০৫:৫১ পিএম, ২২ মে ২০২০ শুক্রবার

মুরসালিন সাবরিনা ও মুহাম্মদ উমের- ছবি একুশে টিভি।

মুরসালিন সাবরিনা ও মুহাম্মদ উমের- ছবি একুশে টিভি।

মহামারী করোনা ভাইরাসও দমাতে পারেনি ভালোবাসাকে, মানবিকতাই এখানে বড় বিষয়- সেটা পাকিস্তানই হোক আর যুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরিয়াই হোক। করোনার কারণে বাধ্য হয়ে সুদূর ভীনদেশী পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মুলতান শাহরুখনে আলম কলোনীর যুবক মুহাম্মদ উমেরকে অনলাইনেই বিয়ের কাজ সেরে ফেললেন জয়পুরহাট পৌর শহরের কাশিয়াবাড়ি এলাকার মেয়ে মুরসালিন সাবরিনা। 

বৃহস্পতিবার (২১শ মে) বিকেলে কনের বাড়িতে অল্প কিছু সংখ্যক স্বজন ও স্থানীয় প্রতিবেশিদের উপস্থিতিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এ বিয়ে সম্পন্ন করেন মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, জয়পুরহাট পৌর শহরের কাশিয়াবাড়ি এলাকার পাঁচবিবি সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা মোজাফ্ফর হোসেনের দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে মুরসালিন সাবরিনা আমেরিকান অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয় ‘ইউনিভার্সিটি অফ দ্য পিপল’-এ লেখাপড়া করছেন ২০১৮ সাল থেকে। সেখানে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হন সাবরিনা। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করা অবস্থায় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিজস্ব ওয়েবসাইট ইয়েমার মাধ্যমে পরিচয় ঘটে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মুলতান শাহরুখনে আলম কলোনীর যুবক প্রকেীশলী মুহাম্মদ উমের-এর সঙ্গে। উমের-এর বাবা বিলাল আহম্মেদ সবজি ও ফল ব্যবসায়ী।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের পরিচয় থেকে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০১৯ সালে তাদের এই প্রেমের সম্পর্ক জানাজানি হয় উভয়পক্ষের অভিভাবকদের মাঝে। এরপর উভয় পরিবারের অভিভাবকরা তাদের বিবাহ সম্পন্নের সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্ত মোতাবেক উমের এবং তার পরিবার বাংলাদেশে আসার জন্য ২০২০ সালের ৭ ফেরুয়ারি ভিসার জন্য আবেদন করেন। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে জয়পুরহাটে সাবরিনা এবং তার পরিবারের খোঁজখবর নেয় স্থানীয় গোয়েন্দা সংস্থা। ভিসা নিয়ে মার্চ মাসেই উমের-এর পরিবার বাংলাদেশে এসে বিয়ে সম্পন্ন করার কথা ছিলো। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে আর আসা হয়নি। ফলে করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে স্থগিত হয়ে যায় তাদের বিয়ে।

তাদের প্রেমের এই সম্পর্ক উভয় পরিবার মেনে নিলেও আপত্তি তোলেন উমের-এর বাবা বিলাল আহম্মেদ। তিনি তাদের যোগাযোগের বৈধতা দিতে সাবরিনার বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অনলাইনে বিয়ে সম্পন্নের প্রস্তাব করেন। বিষয়টি মেনে নিয়ে উভয় পরিবার বৃহস্পতিবার বিকেলে অনলাইনে তাদের বিয়ে সম্পন্নের সিদ্ধান্ত নেন। সে অনুযায়ী ওইদিন বিকেল ৫টায় সাবরিনার বাড়িতে স্বজন ও স্থানীয় প্রতিবেশিদের নিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বিয়ের আয়োজন করা হয়। অনলাইনে তাদের বিয়ে পড়ান মওলানা মোস্তাফিুজর রহমান। এ সময় অনলাইনে সাবরিনার কবুল পড়া শোনানো হয় বর উমের এবং তার বাবা বিলাল অহম্মেদকে। একইভাবে অনলাইনে উমেরও সাবরিনাকে স্ত্রী হিসেবে কবুল করে নেন।

কনে মুরসালিন সাবরিনা জানান, আমি সবার কাছে দোয়া চাইছি। আসলে এভাবে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল না। ওর পরিবার বাংলাদেশে আসবে, আমরা একত্রিত হবো তারপর বিয়ে হবে- এমনটাই কথা ছিল। কিন্ত করোনা ভাইরাসের কারণে ওরা বাংলাদেশে আসতে পারল না এবং দেরী হচ্ছে। যে কারণে ওর বাবা আমার বাবাকে ফোন করে বলে এভাবে তো ছেলে-মেয়ে উভয়ের সম্পর্ক রাখা ঠিক না। এজন্য কবুলটা অনলাইনের করে ফেলি। ওর বাবা খুব ধার্মিক মানুষ, এজন্যই এ কথা বলে আমার পরিবার তাতে রাজি হয়ে যায়। আসলে দেশ কোন বিষয় নয়, মানুষ যদি ভালো হয় তাহলে যে কোন দেশেই যাওয়া সম্ভব। এখানে মানবিকতা বড় বিষয়, সেটা পাকিস্তানই হোক আর যুদ্ধ বিদ্ধস্ত সিরিয়াই হোক। তারপরও আমার পরিবারও বিষয়টাকে মেনে নিয়েছে এজন্যই সম্ভব হয়েছে।

মুরসালিন সাবরিনার বাবা ব্যাংক কর্মকর্তা মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, পাকিস্তানি ছেলের সাথে মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক প্রথমে আমি মানতে চাইনি। কিন্তু পরে খোঁজখবর নেওয়ার পর তাদের খুব ভালো লেগেছে। পরিবারও খুবই ভালো। তাই মেয়ের বিয়ে দিতে সম্মত হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই বিয়ে সম্পন্ন করেছি। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই জামাই এবং তার পরিবার দেশে এসে অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে মেয়েকে নিয়ে যাবেন। তিনি মেয়ে-জামাইয়ের জন্য দেশবাসির কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন।

পৌর এলাকার কাশিয়াবাড়ী মহল্লার নূরানী মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা আবু হাসান বলেন, করোনা পার্দুভাবের মধ্যে বিয়ের অনুষ্ঠান করা সম্ভব নয়, এজন্য এখন অনলাইনেই বিয়ে সম্পন্ন হচ্ছে।

এনএস/