ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

মাতব্বররা উপদেশ দেন, কিন্তু রোহিঙ্গাদের নেন না: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:০৮ পিএম, ২২ মে ২০২০ শুক্রবার

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে প্রভাবশালী দেশগুলোর অবস্থানের সমালোচনা করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেছেন, ‘এত দরদ থাকলে ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলো এই শরণার্থীদের নিতে যেতে পারে। বাংলাদেশ ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। আমাদের পক্ষে এর বেশি আর সম্ভব নয়।’ তিনি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহবান জানান।

শুক্রবার এক ভিডিও বার্তায় সাংবাদিকদের মন্ত্রী বলেন, ‘যারা বিশ্বে বড় বড় মাতব্বর। যারা সব সময় আমাদের উপদেশ দেন, তারা কিছু রোহিঙ্গা নিতে পারেন। তবে তারা নেন না।’ সম্প্রতি ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘আমি উনাদের বলেছি, আমাদের দেশের মানুষের বার্ষিক আয় হল দুই হাজার ডলার আর আপনার হল ৫৬ হাজার ডলার। আর আমার এখানে ১২০০ লোক প্রতি বর্গকিলোমিটারে থাকে। আর আপনার দেশে ১৫ জন লোক প্রতি বর্গকিলোমিটারে থাকে। আপনি নিয়ে যান না কেন? আপনার যদি এত দরদ থাকে, ওদেরকে বেটার লাইফ দেবেন, নিয়ে যান আপনার দেশে। অসুবিধা কি? আমরা কাউকে আটকাব না। রিলোকেট দেম। যে কোনো দেশে নিয়ে যান। বড় বড় প্রতিষ্ঠান… হিউম্যান রাইটস ওয়াচ প্রায় দুঃখ করেন… ওনাদের দেশে নিয়ে যান না কেন? উনাদের ক্যালিফোর্নিয়া ইজ আ ল্যান্ড অফ ইমিগ্র্যান্ট। ওখানে নিয়ে যান আপনারা। আমরা, কাউকে নিতে আপত্তি নাই।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন আরও বলেন, ‘ঝামেলা হয় আন্দামান সিতে, ভারত মহাসাগরে। যখনই ঝামেলা হয় তখনই সবাই শুধু বাংলাদেশের দিকে তাকায় থাকে। ভাবখানা এমন, যেহেতু আমরা তাদেরকে আগে ১১ লাখ আশ্রয় দিয়েছি, বাকিগুলোরও দেন। রোহিঙ্গা সমস্যা দুনিয়ার যেখানে হবে, তাদেরকে আপনারা সাহায্য দেন। আমরা বলেছি যে, আমরা পারব না। আমাদের আর কোনো জায়গা নাই। আর অন্যদেরও রেসপনসিবিলিটি আছে। আর রোহিঙ্গা আমাদের একার সমস্যা না, এটা বিশ্বের সমস্যা।’

২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট থেকে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন অভিযানের মুখে ঘর-বাড়ি ছেড়ে বাংলাদেশে আসতে থাকে রোহিঙ্গারা; এই সংখ্যা কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখ ছাড়ায়। আগে থেকে বাংলাদেশে অবস্থান করছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা। এর মধ্যে কিছু রোহিঙ্গাদের গত মাসের মাঝামাঝিতে টেকনাফ উপকূল থেকে উদ্ধার করা হয়। তাদের কক্সবাজারের কয়েকটি কেন্দ্রে আশ্রয় দিয়ে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহযোগিতা নিয়ে জরুরি মানবিক সহায়তা দিয়ে আসছে বাংলাদেশ সরকার। আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি।

এর মধ্যে সমুদ্রপথে ঝুঁকি নিয়ে পূর্ব-এশিয়ার বিভিন্ন দেশে যেতে চাওয়া রোহিঙ্গারা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে খবরের শিরোনাম হয়েছে অনেকবার। সাগরে ভাসার সময় এসব শরণার্থীর কষ্টগাঁথা ফুটে ওঠার পর তাদেরকে আশ্রয় দিতে বাংলাদেশকে আহবান জানায় বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে মিয়ানমারের ওপর চাপ না বাড়িয়ে উল্টো বাংলাদেশের ওপর দায়িত্ব বর্তানোর সমালোচনা করে আসছে সরকার। আন্তর্জাতিক সমুদ্র সীমা থাকা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে অন্য দেশগুলোর প্রতিও আহবান জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ চলতি মাসের শুরুতে সাগরে ভাসতে থাকা ২৭৭ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে ভাসানচরে পাঠিয়েছে সরকার।

এমএস/এসি