ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

হালদায় ডিম সংগ্রহে রেকর্ড

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:৩৪ পিএম, ২৩ মে ২০২০ শনিবার

দেশের প্রকৃতি-পরিবেশ ও প্রতিবেশ করোনাকালেও দিলো শুভবার্তা। মা-মাছের ডিম সংগ্রহে গেল এক যুগের রেকর্ড ভাঙলো হালদা। এ পর্যন্ত রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউশ (কার্প) বড় জাতের মা-মাছের ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে। যা ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ আহরণ।

এবার হালদায় ডিম দিতে দলে দলে এসেছে মা মাছ। ঘূর্ণিঝড় আম্পান হানা দেওয়ার পরও এ বছর ডিম সংগ্রহে হালদা পাড়ের জেলেরা ভেঙেছেন অতীতের সব রেকর্ড।

সর্ত্তারঘাট থেকে মদুনাঘাট পর্যন্ত দীর্ঘ ১৬ কিলোমিটার জুড়ে ডিম আহরণের উৎসব চলে। যে ডিম তথা মৎস্যবীজ থেকে সারাদেশে উৎপাদিত হবে শত শত কোটি টাকার মাছ। এ মুহূর্তে হালদা পাড় জেলে, এলাকাবাসী ও মৎস্যজীবীদের আনন্দ-উৎসবে মাতোয়ারা।

২৮০টি নৌকায় প্রায় ৭০০ জেলে চলতি বছর সংগ্রহ করেছেন ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম। গত ১২ বছরে কখনো এত ডিম আহরণ করতে পারেননি জেলেরা। গত বছর সংগৃহীত ডিমের পরিমাণ ছিল মাত্র সাত হাজার কেজি। সংগৃহীত এসব ডিম রেণুতে পরিণত করতে উৎসবমুখর কর্মযজ্ঞে মেতে উঠেছেন হালদার জেলেরা।

হালদাই দেশের একমাত্র নদী যেখানে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউশ মাছ বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে এসে ডিম ছাড়ে। কেবল এই নদী থেকেই নিষিক্ত সেই ডিম সরাসরি সংগ্রহ করতে পারেন জেলেরা। নদীর পাড়ে থাকা ছোট ছোট কুয়ায় পুরোপুরি প্রাকৃতিক উপায়েই সেইসব ডিম থেকে ফুটানো হয় রেণু। রুই-কাতলা-মৃগেলের সেই রেণু এরপর ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।

হালদার অনন্য বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে নদী গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, হালদা নদীর ডিম বা মাছের রয়েছে স্বতস্ত্র বৈশিষ্ট্য। মিঠাপানির বিভিন্ন উৎসে পাওয়া মাছ এক বছরে যত বড় হয়, হালদা নদীর মাছ একই সময়ে বাড়ে তিন গুণেরও বেশি। বড় হওয়ার অনুকূল পরিবেশ পেলে হালদা নদীর কাতলা মাছ হয় ২৫ থেকে ৩০ কেজি পর্যন্ত। এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি।

গতকাল দিনভর জেলেরা ডিম সংগ্রহ করেন। রেণু পোনা ফোটানোর জন্য মাটির নার্সারি কুয়ায় ছুটেছেন। হালদা নদীর রামদাস হাট পয়েন্টসহ বিভিন্ন স্থানে ড. মনজুরের গবেষক দল মা-মাছের ডিম ছাড়ার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে করেন। প্রথম দিকে নাপিতের ঘোনা, আমতুয়াসহ তিনটি স্থানে প্রথমে মা-মাছ ডিম ছাড়ে। এরপর আরও এক ডজন স্থানে ডিম ছাড়ে। বিশেষ জালে আহরণও চলে। এবার হালদার কাগতিয়া আজিমের ঘাট, খলিফার ঘোনা, পশ্চিম গহিরা অংকুরী ঘোনা, বিনাজুরী, সোনাইর মুখ, আবুরখীল, খলিফার ঘোনা, সাত্তারঘাট, দক্ষিণ গহিরা, মোবারকখীল, মগদাই, মদুনাঘাট, উরকিচর, গড়দুয়ারা, নাপিতের ঘাট, সিপাহির ঘাট, আমতুয়া, মার্দাশা এলাকায় ডিম আহরণ হয় বেশিহারে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, অমাবস্যার ‘জো’-তে মা-মাছেরা ডিম ছেড়েছে। এরআগে আবহাওয়া-প্রকৃতি অনুক‚ল না থাকায় হালদায় পরপর তিন ‘জো’ গেছে ডিমশূন্য। অনিশ্চয়তায় হাজারো জেলে ছিলেন উৎকণ্ঠিত অপেক্ষায়। ঘূর্ণিঝড় আম্পান কেটে যেতেই বজ্রবৃষ্টির সাথে উজানের ঘোলাস্রোতে হালদায় ডিম ছাড়ার অনুক‚ল পরিবেশ তৈরি হয়। গত বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ির পাহাড়ি এলাকায় অতিবৃষ্টিতে আসে তীব্র ঘোলাস্রোত। সেই সাথে উত্তর চট্টগ্রামে হয় বজ্রবৃষ্টি। হালদায় মা-মাছের ডিম ছাড়ার জন্য এটাই আবহাওয়াগত পূর্বশর্ত।

এসএ/