ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সম্প্রচার সংবাদকর্মীদের চিকিৎসাসেবা দেবে হলি ফ্যামিলি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০২:৫৯ পিএম, ২৪ মে ২০২০ রবিবার | আপডেট: ০৩:০৫ পিএম, ২৪ মে ২০২০ রবিবার

হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল- ছবি সংগৃহীত।

হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল- ছবি সংগৃহীত।

মরণঘাতী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সম্প্রচার সংবাদকর্মীদের চিকিৎসা সেবায় এগিয়ে এলো হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল। বেসরকারি টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন অ্যাটকো, ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার-বিজেসি এবং হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মধ্যে শনিবার (২৩ মে) এক সমঝোতা চুক্তি সই হয়।

সম্প্রচার সংবাদকর্মী ও তাদের পরিবার করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবেন। এ জন্য হলি ফ্যামিলিতে ৫০টি আসন সংরক্ষণ থাকবে। আক্রান্তদের আইসোলেশনে রাখা এবং কোভিড-১৯ পরীক্ষা করে চিকিৎসা দেয়া হবে। চিকিৎসা ব্যয় বহন করবে সরকার, হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল ও মালিকদের সংগঠন-অ্যাটকো। 

শনিবার সমঝোতা চুক্তি হওয়ার পর এই তিন পক্ষের মধ্যে একটি অনলাইন মিটিং হয়। সেখানে বিজেসির চেয়ারম্যান রেজোয়ানুল হক সাংবাদিকদের করোনা চিকিৎসায় এগিয়ে আসায় হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল ও অ্যাটকোকে ধন্যবাদ জানান। অ্যাটকোর সিনিয়র সহ সভাপতি মোজাম্মেল বাবু আশা প্রকাশ করেন, সম্প্রচার কর্মীদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা সাংবাদিকদের কাজের ষ্পৃহা আরও বাড়িয়ে দেবো। 

অ্যাটকোর সভাপতি অঞ্জন চৌধুরী বলেন, সাংবাদিকদের প্রয়োজনের সময় অ্যাটকো সব সময় পাশে ছিল এবং ভবিষ্যাতেও থাকবে।

বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মহাসচিব ফিরোজ সালাহ উদ্দিন বলেন, চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে। হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মোর্শেদ বলেন, চিকিৎসক ও সাংবাদিক উভয়ই সামনের কাতারের সৈনিক। পারষ্পারিক সহযোগিতার মাধ্যমে এই দুর্যোগ মোকাবেলা করা হবে। 

রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা: মোহাম্মদ হাবিবে মিল্লাত এমপি বলেন, সাংবাদিকরা মানুষের জন্য কাজ করে তাদের চিকিৎসা সেবা দেয়ার ব্যবস্থা করতে পেরে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি গর্বিত। সমঝোতা স্মারক সই অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিজেসির সদস্য সচিব শাকিল আহমেদ।

উল্লেখ্য, করোনা উপসর্গ দেখা দেয়া সংবাদকর্মী ও তাদের পরিবার প্রথমে বিজেসির টেলি মেডিসিনের আওতায় আসবেন পরে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করা হবে। টেলি মেডিসিন সেবা দিচ্ছে বিজেসির স্বাস্থ্য সহযোগী অলওয়েল ডট কম। এর বাইরে গাজী গ্রুপ ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সহযোগিতায় সাংবাদিকদের করোনা পরীক্ষা প্রতিদিন চলছে মহাখালীতে।

এদিকে, দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ইতিমধ্যে অর্ধশতাধিক সম্প্রচার সাংবাদকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, দেশের পুরো গণমাধ্যমের হিসেবে যা শতাধিক। এর মধ্যে তিনজন মারাও গেছেন। আক্রান্তদের সহকর্মী ও পরিবারের সদস্যদের অনেকে রয়েছেন ঝুঁকির মধ্যে। 

এ অবস্থায় ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার-বিজেসি মনে করে, সাংবাদিকদের সুরক্ষা ব্যবস্থা, আক্রান্ত ও কোয়ারেন্টাইনে থাকাদের খাদ্য সহায়তা এবং চিকিৎসা সুবিধার নিশ্চয়তা দেয়া জরুরি। তাই বিজেসি এগুলো করার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। উদ্যোগগুলো হলো-

১. প্রথমেই মার্চ মাসে বিজেসি টেলিভিশন সাংবাদিকদের জন্য প্রত্যেক হাউজে মাস্ক, নিজেদের তৈরি করা হ্যান্ড সেনিটাইজার, হ্যান্ড গ্লভস, পিপিই পৌঁছে দেয়।

২. দ্বিতীয় দফায় চাল, আটা, ডাল, তেল, চিনি, আলু, লবনসহ খাদ্য সামগ্রীর ব্যাগ উপহার হিসেবে দেয়া হয় যাদের প্রয়োজন সেইসব সদস্যের কাছে। অনেকে বিজেসির অফিসে এসেও এসব সামগ্রী নিয়ে গেছেন। 

৩. বিজেসি সাংবাদিকদের জন্য করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন মহাখালীতে একটি কমিউনিটি সেন্টার আমাদের দিয়েছে। সেই সেন্টারে একটি ল্যাব স্থাপন হয়েছে। এই কার্যক্রমে ল্যাব, কীট, টেকনিশিয়ান ও ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা করছে গাজী গ্রুপ। তত্ত্বাবধান করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রতিদিন ৩০ জন সাংবাদিকের পরীক্ষা হয় সেখানে। এতে ধরা পড়ছে করোনা পজিটিভ।

৪. এই পরিস্থিতিতে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া কতো কঠিন তা ভুক্তভোগীরাই জানেন। তাই বিজেসি রাজধানীর দুটি হাসপাতালের সঙ্গে কথা বলেছে। হলি ফ্যামিলি ও আনোয়ার খান হাসপাতাল। তারা টেলিভিশন সাংবাদিকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভর্তির ব্যবস্থা করবেন এবং চিকিৎসা দেবেন।

৫. রোগীদের হাসপাতালে নেয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থাও করেছে বিজেসি। পাথওয়ে এই সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছে।

৬. আমাদের এই উদ্যোগ দেখে আরও অনেকে এগিয়ে এসেছে। বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বিজেসিকে কয়েকদিন আগে ১০ হাজার মাস্ক, ৩ হাজার পিপিই ও সেনিটাইজার দিয়ে সহায়তা করেছে। এর মধ্যে আছে ব্র্যাক, কারুপণ্য রংপুর, টেক্সটাউন, পানাম গ্রুপ। এইসব সামগ্রী আমরা এখন সংবাদকর্মীদের মধ্যে বিতরণ করছি। হাউস প্রতিনিধিরা সেগুলো নিয়ে তার হাউসের সদস্যদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন।

৭. সংবাদকর্মীদের টেলি চিকিৎসা পাওয়ার জন্য ওলওয়েল এর সঙ্গেও চুক্তি করেছে বিজেসি। এতে করে টেলিফোনে চিকিৎসা সেবা নেয়া যাচ্ছে যেকোন সময়।

৮. এই দুর্যোগে সংবাদকর্মীদের কী কী বিধিনিষেধ মানা উচিত, কেমন করে মাঠে কাজ করতে হবে তার জন্য এমআরডিআই এর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করে গাইড লাইন প্রস্তুত করে বিজেসি।

৯. বিজেসি তথ্যমন্ত্রীর সাথে দেখা করে এই দুর্যোগে সাংবাদিকদের জন্য প্রণোদনা দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তবে তথ্যমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেলে সাংবাদিকদের করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।

১০. টেলিভিশন মালিকদের কাছে সংবাদকর্মীদের বেতন নিয়মিত দেয়া ও চাকরিচ্যুত না করার আহ্বান জানিয়েছে বিজেসি।

এনএস/