ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

আম্পানে শার্শায় বেশি ক্ষতি কৃষি ও বিদ্যুতে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৭:৫১ পিএম, ২৫ মে ২০২০ সোমবার

সুপার সাইক্লোন আম্পানের তান্ডবে যশোরের শার্শা উপজেলা ও বেনাপোল পোর্ট থানা এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অসংখ্য কাঁচা ও আধাপাকা বাড়ি, বিভিন্ন ধরনের গাছপালা ভেঙে গেছে। লিচু ও আমের প্রায় পুরোটাই নষ্ট হয়েছে। কয়েক'শ বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে গেছে। তার ছিড়েছে অসংখ্য স্থানে। বেনাপোল স্থলবন্দরও বিপুল ক্ষতি মুখে পড়েছে।
 
এদিকে ভারতীয় পানির চাপে বেনাপোলের বাহাদুরপুর ইউনিয়নের স্বরবাংহুদা কুদলার হাট এলাকার জমির ফসল প্লাবিত হয়েছে। করোনা প্রাদুর্ভাবে চাহিদা অনুযায়ী ক্ষেত মজুর ও ধান বাহনে যানবাহন না মেলায় ঐ এলাকার কয়েকজন কৃষকের কৃষি জমির ইরি ফসল মাঠেই পড়েছিলো বলে জানান ভূক্তভোগীরা। আম্পান ঝড় বৃষ্টিতে ভারত হতে আসা পানির চাপ বৃদ্ধিতে কুদলার নদী খাল উপচে পানিতে প্লাবিত হয় কৃষি জমির ধান। দিন দিন ঐ এলাকাসহ আশেপাশের এলাকায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভারত সীমান্ত সংলগ্ন ঘিবা, স্বরবাংহুদা, রঘুনাথপুর, মানকিয়াসহ বিভিন্ন গ্রামের  কৃষি জমির ফসল ভারত হতে আসা পানিতে বিনিষ্ট হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন। পানির চাপ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব এলাকার চাষীদের চোখে মুখে এখন হতাশার ছাপ।

ভূক্তভোগী কৃষক ইউসুফ আলী জানান, ইরি ফসল পানিতে প্লাবিত হয়ে তার লাখ টাকার ক্ষতি সাধিত হয়েছে। কি ভাবে দেনা শোধ করবো তা ভেবে পাচ্ছি না।

গত বুধবার বিকালে সুপার সাইক্লোন আম্ফান প্রথমে পশ্চিমবঙ্গে আঘাত করে এবং রাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এরপর রাতে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম ও পশ্চিমের বিভিন্ন জেলার উপর তান্ডব চালিয়ে যায়। বাংলাদেশে এসব অঞ্চলেই আমের চাষ হয় হয় সবচেয়ে বেশি। তাই আম পাড়ার ঠিক আগে আমের ব্যাপক ক্ষতি করে গেছে আম্পান। পঁচিশ লাখ টাকা বিনিয়োগে ৫০ বিঘার ২৫টি আমবাগান কিনে বছর শেষে সাড়ে সাত থেকে আট লাখ টাকা লাভের স্বপ্ন দেখছিলেন উপজেলার জামতলার আমচাষি গোলাম আজম। 

তিনি বলেন, এ বছর আমাদের স্বপ্ন শ্যাষ। আম্ফানে ২৫টি বাগানের সব আম পড়ে গেছে। এখন চোখি অন্ধকার দেখছি। ঘূর্ণিঝড় আমাদের পথে বসালো। ধারদেনা করে বাগানের পেছনে খরচ করেলাম। এখন ওদের টাকা দেব কী করে তাই ভাবছি।
বাগআঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইলিয়াছ কবীর বকুল বলেন, এই ইউনিয়নের ১৪টি গ্রাম উলটপালট করে দিয়ে গেছে। কাঁচা ও আধাপাকা সব বাড়ি ভেঙে গেছে। কোনো গাছগাছালি আর ভালো নেই। এই এলাকায় দুই জনসহ উপজেলায় ঘর চাপা ও দেয়াল চাপা পড়ে মারা গেছে ৫জন। কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তার পরিসংখ্যান পরে জানা যাবে।

এই ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর খাদ্য সহায়তা হিসেবে শনিবার ৭৯০ পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার ও অন্যান্য খাদ্য সামগ্রী (চাল, ডাল, আলু, তেল ইত্যাদি) বিতরণ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৌতম কুমার শীল বলেন, উপজেলায় কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, যার পরিমাণ দেড়শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। আমের ৮০ শতাংশ ঝরে পড়েছে। লিচুর পুরোটাই ঝরে গেছে। আম ও লিচুর ক্ষতির পরিমাণ অন্তত ৩০ কোটি টাকা। পেঁপে ও কলা বাগান সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু কিছু জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।  

যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির শার্শা জোনাল অফিসের ডিজিএম হাওলাদার রুহুল আমিন বলেন, সুপার সাইক্লোন আম্ফানের তান্ডবে উপজেলার বিদ্যুৎ সেক্টরে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি তো আর টাকায় নিরুপন করা সম্ভব না। বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙেছে দুইশ‘র উপরে। আমরা এখনও অ্যাসেসমেন্ট করতে পারিনি। তার ছিড়েছে কয়েক হাজার জায়গায়। কিছু কিছু জায়গায় বিদ্যুত সরবরাহ করা গেছে। এখনো অনেক স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায়নি। আমাদের কর্মীরা দিনরাত কাজ করছে। 

বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার বলেন, ঝড়ে বন্দরের ১৫টি শেডের টিন উড়ে গেছে। ১৬টি গেইট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১২০ ফুট সীমানা প্রাচীর ভেঙে পড়ে গেছে। ২৫টি বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়েছে। বন্দরের আবাসিক এলাকার গাছগাছালির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত শেডগুলোর সংস্কার কাজ চলছে। প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২০ লাখ টাকা হবে বলে মন্ত্রাণালয়কে জানিয়েছি।

শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলক কুমার মন্ডল বলেন, আম্ফানের তান্ডবে উপজেলার ১১টি ইউনিয়নই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে বাগআঁচড়া, কায়বা, গোগা ও বেনাপোল ইউনিয়নের ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। পূর্ণাঙ্গ তালিকা এখনও পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেছি তাতে ৩০ হাজারের মতো কাঁচা ও আধাপাকা বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রাথমিক ধারণা করছি। 
কেআই/