ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

চীন-মার্কিন বৈরিতা বিপজ্জনকের দিকে যাচ্ছে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:১৮ পিএম, ২৬ মে ২০২০ মঙ্গলবার

বিশ্বে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার জন্য চীনকে অভিযুক্ত করে একের পর এক বিবৃতি দিয়ে চলছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর ফলে দেশ দুটির সম্পর্কে তিক্ততা দেখা দিয়েছে। রোববার ওয়াশিংটনের প্রতি বেইজিংয়ের স্পষ্ট কিছু বার্তায় তা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এর ফলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন চীন-মার্কিন বৈরিতা আরও বিপজ্জনকের দিকে এগুচ্ছে। খবর বিবিসি’র

রোববার বেইজিংয়ে বিশেষ এক সংবাদ সম্মেলনে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড প্যানডেমিক নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে একের পর এক “মিথ্যা ভিত্তিহীন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব” ছড়িয়ে যাচ্ছে। মার্কিন কিছু রাজনীতিবিদ দুই দেশের মধ্যে নতুন এক শীতল যুদ্ধ শুরুর পাঁয়তারায় লিপ্ত হয়েছে যার ফল কারো জন্যই শুভ হবে না।

চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন “আমেরিকাকে বদল করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা চীনের নেই। সুতরাং চীনকে বদলের অবাস্তব যে স্বপ্ন আমেরিকা লালন করছে, তা তাদের পরিহার করা উচিৎ।”

যুক্তরাষ্ট্রকে সাবধান করে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “গত কয়েক দশক ধরে দুই দেশের সহযোগিতার ফলে যে সুফল তৈরি হয়েছে, তা নষ্ট করলে তাতে আমেরিকার নিজের ক্ষতি তো হবেই, পুরো বিশ্বের স্থিতিশীলতা এবং সচ্ছলতা হুমকিতে পড়বে।”

সম্প্রতি হোয়াইট হাউজের বাণিজ্য বিষয়ক উপদেষ্টা পিটার নাবারো বলেন যে, “চীন করেনাভাইরাসে আক্রান্ত লাখ লাখ মানুষকে বিমানে উঠিয়ে সারা পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিয়েছে। যাতে একটি প্যানডেমিক তৈরি হয়।” এ কথায় প্রচণ্ড ক্ষেপে গেছে বেইজিং।

কিছু দিন আগে ফক্স বিজনেস নেটওয়ার্কের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, “করোনাভাইরাস প্যানডেমিক আরো একবার প্রমাণ করেছে যে, পণ্য এবং সেবার জন্য চীনের ওপর থেকে সবধরনের নির্ভরতার ইতি টানতেই হবে।”

পরাশক্তির এই দুটি দেশের বক্তব্যে অধিকাংশ পর্যবেক্ষক অবশ্য মনে করেন, বেশ আগে থেকেই বিশ্বের শীর্ষ দুই অর্থনীতির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, বৈরিতা দিনে দিনে বাড়ছে। করোনাভাইরাস প্যানডেমিক তাতে নতুন একটি মাত্রা যোগ করেছে মাত্র।

বেইজিং ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর চায়না অ্যান্ড গ্লোবালাইজেশনের প্রেসিডেন্ট ওয়াং হুহাইওর মতে, ১৯৭৯ সালে দুই দেশের মধ্যে পুরোমাত্রায় কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠান পর পারস্পরিক অবিশ্বাস এত খারাপ আরও কখনো হয়নি।

যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা এশিয়া সোসাইটির মার্কিন-চীন সেন্টারের পরিচালক অরভিল শেল বিজনেস ইনসাইডার পত্রিকাকে বলেন, “আমরা একটি শীতল যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে।“

হংকংয়ের ব্যাপটিস্ট ইউনিভার্সিটির রাজনীতির অধ্যাপক জ্যঁ পিয়ের সেবাস্টিয়ান লন্ডনের ফিনানশিয়াল টাইমস পত্রিকাকে বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন নতুন এক ধরনের শীতল যুদ্ধের মুখোমুখি হয়েছে।”

কুয়ালালামপুরে মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব চায়নার অধ্যাপক ড সৈয়দ মাহমুদ আলী বিবিসিকে বলেন, বেশ অনেকদিন ধরেই চীনকে আমেরিকা তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তির প্রতি প্রধান হুমকি হিসাবে বিবেচনা করছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ১৯৯২ সালে যুক্তরাষ্ট্র তাদের যে জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল নেয়, তাতে পরিষ্কার বলা আছে, আর কোনদিনই বিশ্বের কোথাও তারা এমন কোন শক্তিকে মাথাচাড়া দিতে দেবে না, যারা আমেরিকাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে।

ড. আলী মনে করেন, অনেকদিন ধরেই চীনকে তারা ভবিষ্যতে সেই ধরনের একটি চ্যালেঞ্জ মনে করছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিষয়ক সরকারি সমস্ত নথিপত্র, দলিলে তা স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে। এটি শুধু ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্ত নয়, সুযোগ পেলেই চীনকে ঘায়েল করার বিষয়ে আমেরিকার রাজনৈতিক অঙ্গনে এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একধরনের ঐক্যমত্য রয়েছে।

এএইচ/