ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১০ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রে ৬৫ লাখ পিপিই গাউন রপ্তানি বেক্সিমকোর

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:১৬ পিএম, ২৬ মে ২০২০ মঙ্গলবার

বিশ্বমানের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পারসোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট বা পিপিই) উৎপাদনকারী দেশের কাতারে যোগ দিলো বাংলাদেশ। দেশের টেক্সটাইল খাতের নেতৃত্বস্থানীয় ব্র্যান্ড বেক্সিমকো ২৫ মে রোববার মার্কিন ব্র্যান্ড হেইনস-এর কাছে ৬৫ লাখ পিপিই গাউনের একটি চালান পাঠিয়েছে। এই চালান পৌঁছাবে মার্কিন কেন্দ্রীয় জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের (ফেমা) কাছে।

এই মুহূর্তকে স্মরণীয় করে রাখতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল আর. মিলার। তারা যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে বেক্সিমকোর তৈরি করা পিপিই’র ওই চালানকে বিদায় জানান।

কভিড-১৯ রোগ বিশ্বব্যাপী এক নজিরবিহীন মহামারিতে রূপ নিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য পেশাজীবী ও সাধারণ মানুষকে নিরাপদ রাখতে পিপিই’র প্রয়োজনীয়তা তীব্র হয়ে দেখা দিয়েছে। তাই বেক্সিমকো দ্রুতই তাদের উৎপাদন সক্ষমতাকে ব্যবহার করে গাউন, মাস্ক ও কাভারঅলস তৈরি করার মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক এই মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শামিল হয়।

বেক্সিমকো টেক্সটাইলস-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও গ্রুপ পরিচালক জনাব সৈয়দ নাভেদ হোসেনের সূচনা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়।

তিনি বলেন, কোভিড-১৯ ভাইরাসের কারণে বিশ্বের কার্যপদ্ধতি পাল্টে গেছে। তাই বেক্সিমকোকেও জরুরি ভিত্তিতে সক্রিয় হতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘মাত্র ২ মাসের মধ্যে আমরা আমাদের বিশ্বমানের উৎপাদন, প্রযুক্তিগত ও ডিজাইন দক্ষতা ও সক্ষমতা প্রয়োগ করে পিপিই তৈরি করতে শুরু করি। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাপী অতিপ্রয়োজনীয় পিপিই-এর সরবরাহ বৃদ্ধিতে অবদান রাখে বেক্সিমকো।’

সৈয়দ নাভেদ হোসেন বলেন, ‘পিপিই উৎপাদনের নতুন কেন্দ্রস্থলে পরিণত হওয়ার জন্য জুতসই অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। এতে করে একদিকে যেমন বিশ্বব্যাপী মানুষ নিরাপদে থাকবে। আরেকদিকে বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থনীতিও সচল থাকবে এবং দেশের গার্মেন্ট খাতের ৪১ লাখ শ্রমিকের বিশাল কর্মীবাহিনীও ভালোভাবে জীবন যাপন অব্যাহত রাখতে পারবে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রত্যেকে এই প্রতিকূল পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটাতে চান, জীবন বাঁচাতে চান। বেক্সিমকো এক্ষেত্রে পথ দেখিয়ে চলছে।’

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বেক্সিমকোর অবদানের প্রশংসা করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, বাংলাদেশের মত বাকি বিশ্বও মহামারির সাথে লড়াইয়ে এক কঠিন সময় পার করছে। 

তিনি বলেন,‘এমন এক সংকটময় সময়ে বাংলাদেশ মাত্র দুই মাসের মধ্যে এই মুহুর্তে স্বাস্থ্য খাতের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিশ্বের এক গুরুত্বপূর্ণ বাজারে রপ্তানি করছে; তাও আবার ১০/২০ হাজার নয় ৬৫ লাখ পিস। এক এক অভাবনীয় অর্জন।’

বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল আর. মিলার বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে এই প্রথম বড় ধরণের পিপিই’র চালান যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘বিশ্ববাজারের জন্য বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যায় বৈশ্বিক মানের পিপিই উৎপাদনের পদক্ষেপকে স্বাগত জানায় যুক্তরাষ্ট্র। বেক্সিমকো ও হেইনস’র চুক্তিতে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এ দুটি মহান দেশ কোভিড-১৯ মোকাবেলায় কীভাবে লড়াই করছে।’

তিনি বলেন, এই সব কিছুই হয়েছে মাত্র দুই মাসে। ‘যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধের পর থেকে পরের দুই মাসের কথা একবার ভাবুন। বেক্সিমকো ও বাংলাদেশ যারপরনাই দ্রুত সময়ে পিপিই’র উৎপাদন শুরু করে। এর ফলেই আজকের এই এয়ারক্রাফটটি অতি প্রয়োজনীয় পিপিই নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে ছেড়ে যেতে প্রস্তুত। আমলাতান্ত্রিক ও ব্যবসায়িক উভয় দিক থেকে দুর্দান্ত গতিতে কাজ হয়েছে।’

অনুষ্ঠানে জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জামালউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বেক্সিমকোকে অর্থায়নের সুযোগ পেয়ে জনতা ব্যাংক গর্বিত। আমরা অন্যান্য রপ্তানিকারকদেরও অর্থায়ন করব যেন অর্থনীতির চাকা সচল থাকে; না হলে সব কিছু ভেঙে পড়বে।’

বেক্সিমকো ফার্মার ম্যানেজিং ডিরেক্টর নাজমুল হাসান এমপি এ অনুষ্ঠানকে ঐতিহাসিক আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘আজ আমরা বিপুল পরিমাণে বিশ্বমানের পিপিই উৎপাদনকারী দেশের কাতারে যোগ দিলাম।’ তিনি বলেন, ‘মহামারির প্রথম দিকে দেশে পিপিই’র প্রচুর চাহিদা ছিল এবং বেক্সিমকো পিপিই আমদানি করে দেশের স্বাস্থ্য খাতের প্রয়োজন মেটাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।’

‘কিন্তু চাহিদা বাড়তে থাকায় বিশ্বজুড়ে পিপিই’র স্বল্পতা দেখা দেয়। এরপর আমরা বৈশ্বিক চাহিদা মেটাতে পিপিই উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নিই। এখন আমরা শুধু দেশের জন্য প্রয়োজনীয় পিপিই সরবরাহই নয়; বরং বিশ্বে পণ্য মানের দিকে কড়া নজরদারির দেশগুলোতেও তা রপ্তানি করছি।’

বিশ্বমানের উৎপাদন ও গবেষণা স্থাপনা সমৃদ্ধ, বাংলাদেশের একমাত্র এফডিএ-সনদপ্রাপ্ত ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মা সম্প্রতি বিশ্বের প্রথম কোম্পানি হিসেবে রেমদেসিভিরের জেনেরিক সংস্করণ উৎপাদন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএ এই রেমদেসিভিরকে কোভিড-১৯ রোগের চিকিৎসায় জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। প্রাথমিক ক্লিনিক্যাল উপাত্ত থেকে জানা যাচ্ছে যে, এই ওষুধ কোভিড-১৯ ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর।
কেআই/