ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

স্বপ্নযাত্রা হয়ে গেল শেষ যাত্রা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:৫৮ পিএম, ৩০ মে ২০২০ শনিবার | আপডেট: ১০:৫৯ পিএম, ৩০ মে ২০২০ শনিবার

লিবিয়ায় পাচারকারীদের গুলিতে ২৬ জন নিহত এবং ১১ জন আহত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। আহতদের মধ্যে ছয়জন সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন, পাঁচজনের অবস্থা গুরুতর। এ যাত্রায় যেসব বাংলাদেশি হতাহত হয়েছেন, তারা সেখানে যান প্রায় তিন মাস আগে। পাচারকারীদের দালালরা তাদের স্বপ্ন দেখিয়েছিল ইউরোপের দেশ ইতালি নিয়ে যাওয়ার। সেই স্বপ্নের পথে বিপদসংকুল যাত্রায় শেষ পর্যন্ত তাদের দিতে হয়েছে জীবন।

ঘটনায় হতাহতদের জন্য লিবিয়া সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে। আহতদের মিজদাহ থেকে ত্রিপোলির কেন্দ্রীয় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। আর নিহত ২৬ জনের মরদেহের বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার সহায়তা চাওয়া হয়েছে।

লিবিয়ার ওই ঘটনায় বেঁচে যাওয়া বাংলাদেশিদের দেওয়া বর্ণনার উল্লেখ করে এক ভিডিও বার্তায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ৩৮ জন বাংলাদেশি নাগরিক প্রত্যেকের কাছ থেকে পাচারকারী দল আট থেকে ১০ হাজার মার্কিন ডলার নিয়েছিল। লিবিয়ায় নেওয়ার পর ত্রিপোলি থেকে প্রায় ১৮০ কিলোমিটার দূরে মিজদাহ শহরে নিয়ে পাচারকারী দল বাংলাদেশিদেরসহ কয়েকজন আফ্রিকান নাগরিককে জিম্মি করে আরও টাকা দাবি করে। এ জন্য তারা জিম্মিদের ওপর অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছিল। নির্যাতনের শিকার এসব মানুষ আরও টাকা দিতে অস্বীকার করায় তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে একজন আফ্রিকান পাচারকারী দলের প্রধানকে আক্রমণ করে মেরে ফেলে। ওই পাচারকারী মারা যাওয়ার পর পরই তার পরিবার ও দলের অন্যরা এলোপাতাড়ি গুলি চালানো শুরু করে। ফলে ঘটনাস্থলেই ২৬ বাংলাদেশি নিহত হন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ত্রিপোলির বাংলাদেশ মিশন লিবিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি দেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে জানিয়েছে। হতাহতদের ক্ষতিপূরণ এবং দোষী ব্যক্তিদের তথ্য দেওয়ারও দাবি জানানো হয়েছে। লিবিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছে। 

মন্ত্রী জানান, মিজদাহ শহরটি এক সপ্তাহ আগে ত্রিপোলি সরকার দখল করেছে। আগে এটি হাফতারপন্থিদের দখলে ছিল। এখনও কার্যত সেখানে কোনো প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। সেখানে এখনও মিলিশিয়াদের রাজত্ব। ফলে অপরাধীদের ধরে এনে কখন শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে, সেটি নিশ্চিত করে বলা মুশকিল।

দেশের ভেতরে পাচারকারীরা এখনও সক্রিয় আছে জানিয়ে আব্দুল মোমেন বলেন, এর আগে ইতালি যাওয়ার পথে নৌকাডুবির পরে বেঁচে যাওয়া ১৬ বাংলাদেশি আমাদের কাছে এ দেশের পাচারকারীদের বিষয়ে তথ্য দিয়েছিলেন। কোন ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে তারা সেখানে গিয়েছিলেন, সে তথ্য দিয়েছিলেন। আমরা কিছু গ্রেপ্তারও করেছিলাম। এবারও যারা বেঁচে আছেন তাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে দেশে পাচারকারী যারা আছে তাদের ধরা হবে। 

মন্ত্রী সাধারণ মানুষকে পাচারকারীদের খপ্পরে না পড়ার অনুরোধ জানান।

এদিকে লিবিয়ায় নিহত বাংলাদেশিরা কোন এজেন্সির মাধ্যমে সে দেশে গিয়েছিলেন, কারা তাদের নিয়েছে সে বিষয়ে ছায়া তদন্ত শুরু করেছে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের মানব পাচার ইউনিট।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিহতদের মধ্যে ২৪ জন এবং আহত ১১ জনের পরিচয় নিশ্চিত করতে পেরেছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী নিহত ২৪ জন হচ্ছেন- গোপালগঞ্জের সুজন, কামরুল; মাদারীপুরের জাকির হোসেন, সৈয়দুল, জুয়েল, ফিরোজ; রাজৈরের বিদ্যানন্দীর জুয়েল, মানিক; টেকেরহাটের আসাদুল, আয়নাল মোল্লা, মনির; ইশবপুরের সজীব, শাহীন; দুধখালীর শামীম; ঢাকার আরফান, টাঙ্গাইলের বিনোদপুরের লাল চান্দ, কিশোরগঞ্জের ভৈরবের রাজন, শাকিল, সাকিব, সোহাগ; রসুলপুরের আকাশ, মো. আলী; হোসেনপুরের রহিম ও যশোরের রাকিবুল।

আহত ১১ জন হচ্ছেন- মাদারীপুর সদরের তীর বাগদি গ্রামের ফিরোজ বেপারী, ফরিদপুরের ভাঙ্গার দুলকান্দি গ্রামের মো. সাজিদ, কিশোরগঞ্জের ভৈরবের শল্ফু্ভপুর গ্রামের জানু মিয়া, ভৈরবের জগন্নাথপুর গ্রামের সজল মিয়া, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের বামনডাঙ্গা বাড়ির ওমর শেখ, টাঙ্গাইলের বিনোদপুরের তরিকুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার বকুল হোসাইন, মাদারীপুরের রাজৈরের মো. আলী ও সম্রাট খালাসী, ভৈরবের সখিপুরের সোহাগ আহমেদ এবং চুয়াডাঙ্গার বাপ্পী। তারা সবাই ত্রিপোলি মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসাধীন।

এদিকে লিবিয়ায় অপহরণকারীদের গুলিতে মারা যাওয়া ২৬ বাংলাদেশির মরদেহ মিজদাতেই দাফন করা হবে বলে নিশ্চিত করেছে লিবিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা। খবর বিবিসি’র।

দূতাবাসের শ্রম বিষয়ক কাউন্সিলর অশরাফুল ইসলাম জানান, নিহতদের পরিবারের সাথে আলোচনার মাধ্যমে মিজদা শহরেই মরদেহগুলো দাফনের প্রক্রিয়া চলছে। তিনি বলেন, ‘লাশগুলো সেখানে (মিজদায়) দাফন করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। কাজেই এটা মেনে নিতেই হবে। মিজদা খুবই ছোট একটি অনুন্নত শহর, সেখানে লাশগুলো সংরক্ষণের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নেই।’ ঘটনাস্থল মিজদার একটি হাসপাতালে বর্তমানে লাশগুলো রয়েছে।

এসএ/