ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

জিপিএ-৫, তবুও অনিশ্চিত মাসুদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৬:১২ পিএম, ৪ জুন ২০২০ বৃহস্পতিবার

মাসুদ ইসলাম- ছবি একুশে টেলিভিশন।

মাসুদ ইসলাম- ছবি একুশে টেলিভিশন।

মাসুদ ইসলাম। হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া ছেলেটি অভাবের সংসারে একটু হলেও স্বচ্ছলতা আনতে পড়াশুনার পাশাপাশি সুযোগ পেলেই খানসামার কাজ করতেন। স্কুল বন্ধের দিনগুলোতে ছুটে যেতেন বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের বাড়িতে। এর মাঝেও পড়াশুনা চালিয়ে গেছে সে। ঢাকা জেলার দোহার উপজেলার কাটাখালী মিছের খান উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়ে জিপিএ-৫ পাওয়ার কৃতিত্ব দেখিয়েছে সে। মাসুদের পরিশ্রম ও ইচ্ছাশক্তি তাকে আজ সাফল্য এনে দিয়েছে। সার্থক হয়েছে তার সংগ্রামী জীবন।

জানা যায়, তিন ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয় মাসুদ। বাবা খাদেমুল ইসলাম পেশায় একজন রিকশাচালক। প্রায় ত্রিশ বছর ধরে রিকশার প্যাডেলে ঘুরিয়ে চলে তার সংসারের চাকা। বাবার মতো মাসুদের জীবনও সংগ্রামে ঘেরা। সারাদিন রিকশা চালিয়ে বাবা যা আয় করতেন তা খুবই নগণ্য। তাই সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে মাসুদ খানসামার কাজ করতেন। ছেলের এমন সাফল্যের পরও তার উচ্চ শিক্ষা নিয়ে চিন্তিত বাবা খাদেমুল ইসলাম।

মাসুদ এখন পড়তে চায় ঢাকার সেন্ট যোসেফ কলেজে। মাসুদের এই সাফল্য আঁধার ঘরে আলোক রশ্মি ছড়ালেও অর্থাভাবে এখন প্রায় অনিশ্চিত তার উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন। মাসুদ স্বপ্ন দেখে বড় হয়ে সে ডাক্তার হবে, দেশের হতদরিদ্র মানুষদেরকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা দিবে। মাসুদের এমন মনোবাসনা ও সাফল্যে খুশি হয়ে তার স্বপ্ন পূরনে সহযোগিতা করতে এগিয়ে এসেছেন ঢাকার দোহার উপজেলার কাঠালীঘাটা গ্রামের জার্মান প্রবাসী রোমান মিয়া ও সুন্দরীপাড়া এলাকার আবাসন ব্যবসায়ী মো. আয়ূইব আলী।

জিপিএ-৫ পাওয়া মাসুদ বলে, আমার বাবা-মা অনেক কষ্টে আমাকে পড়াশোনা করিয়েছে। বাবা দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে রিকশা চালিয়ে অনেক কষ্টে সংসার ও আমাদের তিন ভাইয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাতো। আমি ডাক্তার হয়ে বাবা মায়ের কষ্ট লাঘব করতে চাই।

মা-বাবা ও ভাইদের সঙ্গে মাসুদ ইসলাম- ছবি একুশে টেলিভিশন। 

তিন ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে মাসুদের পিতা খাদেমুল ইসলামের কষ্টের সংসার। বিশ বছর আগে জীবিকার তাগিদে পঞ্চগড় সদর উপজেলার মালকাডাঙ্গা থেকে দোহারে আসেন তিনি। এরপর বাড়ি ভাড়া নিয়ে উঠেন কাটাখালী গ্রামের মেজর আলমাসের বাড়িতে। সেখানে ছিলেন দীর্ঘ ১২ বছর। তারপর ভাড়া আসেন মাহবুব খানের বাড়িতে। এখানে স্ত্রী ও সন্তানদেরকে নিয়ে একটি ঘরের দুটি রুম ভাড়া নিয়ে থাকেন তিনি। অনেক কষ্টে ধার দেনা ও কিস্তি নিয়ে একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা ক্রয় করেছেন খাদেমুল। যার কিস্তি এখনো বয়ে বেড়াতে হচ্ছে তাকে। দারিদ্রতার সাথে তীব্র লড়াই করে জীবিকা নির্বাহ করলেও তিন সন্তানকেই করাচ্ছেন পড়াশোনা। কাটাখালী মিছের খান উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে তার মেঝ ছেলে মাসুদ এ প্লাস পেলেও বড় ছেলে নয়ন ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে পেয়েছেন এ গ্রেড। ছোট ছেলে সাগর হোসেনও পড়াশোনা করছেন একই বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণিতে।

মাসুদের বাবা খাদেমুল ইসলাম বলেন, আমি পড়ালেখা কিছুই জানিনা। এক কথায় নিরক্ষর, রিকশা চালিয়ে অনেক কষ্টে তিন সন্তানকে পড়াশোনা করাচ্ছি। কিন্তু আমি সবসময় চেয়েছি আমরা সন্তানেরা শিক্ষিত হোক। আমার মেঝ ছেলে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছে। বড় ছেলে এ গ্রেড পেয়েছে। আজ আমার পরিশ্রম সার্থক হয়েছে। আমার ইচ্ছে মাসুদকে ডাক্তার বানানো। আমার সাধ আছে কিন্তু সাধ্য নেই। 

এনএস/