ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

শখের নার্সারিতেই ব্যাপক সফলতা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৪:০৫ পিএম, ৯ জুন ২০২০ মঙ্গলবার

নিজের নার্সারিতে সহকর্মী অ লেখকের সঙ্গে বৃক্ষপ্রেমিক আঃ রাজ্জাক। ছবি- একুশে টেলিভিশন।

নিজের নার্সারিতে সহকর্মী অ লেখকের সঙ্গে বৃক্ষপ্রেমিক আঃ রাজ্জাক। ছবি- একুশে টেলিভিশন।

নার্সারি করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের সৌখিন বৃক্ষপ্রেমিক আব্দুর রাজ্জাক। চুনারুঘাট উপজেলা শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে পড়াঝার স্কুল সংলগ্ন হরিহরপুর গ্রামে ৫ বিঘা জমিতে তিনি গড়ে তুলেছেন ৩০০ দেশি-বিদেশী প্রজাতির বিশাল ভাণ্ডার। তবে থেমে নেই জাত সংগ্রহ। কোন নতুন গাছ বা প্রজাতির নাম শুনলেই তিনি ছুটে যান, সংগ্রহ করে আনেন তা।

এ বিষয়ে বৃক্ষপ্রেমিক আঃ রাজ্জাক জানান, এক সময় তিনি সরকারি অফিসে চাকুরী করতেন। ১৯৮৫ সালে চাকুরীতে থাকাকালীন বাড়ির আশেপাশে অল্প পরিসরে গাছের চারা সংগ্রহ করে ছোট পরিসরে নার্সারী শুরু করেন। পরবর্তিতে ২০১৬ সালে চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করে নার্সারীর আকার বড় করেন। নাম দেন ভাই ভাই নার্সারী।

তিনি জানান, গত কয়েক বছরের ব্যবধানে পুরো হবিগঞ্জ জেলায় তিনি ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন। বিভিন্ন কৃষি ও প্রযুক্তি মেলায় তিনি নিয়মিতই স্টল নিয়ে হাজির হন। মেলার প্রদর্শনীগুলোতে অংশ নিয়ে সেরা হওয়ার পুরস্কারও জিতে নিয়েছেন কয়েকবার। বর্তমানে তার নার্সারীতে ৫ জন শ্রমিক কাজ করেন। পাশাপাশি তার দুই ছেলে ও ভাতিজা তাকে সহযোগিতা করছেন।

ভাই ভাই নার্সারিতে আম বারি-৪, সূর্যডিম, কাটিমন, সূবর্ণরেখা, আম্রপালীসহ প্রায় ৫০ জাতের দেশি-বিদেশি আমের চারা রয়েছে। এছাড়াও চায়না-৩ লিচু, বেদানা লিচু, মুম্বাই লিচু, জাম, ভিয়েতনামী কাঁঠাল, পেয়ারা, রামভুটান, সাতকরা, থাই পেয়ারা, লটকন, আমলকি, কদবেল, পেপেঁ, সফেদা, ভিয়েতনামী নারিকেল,জামরুল, থাই মিষ্টি তেঁতুল, বেদেনা, ডালিম, আপেল, সাদা আপেল, কমলা, নাসপাতি, বেল, চালতা, আমড়া, ড্রাগন ফল,আক্সগুর, মিষ্টি জলপাই, করমচা, বুবি, চায়না কমলা, কাশ্মিরীকুল, বাউকুলসহ  প্রায় শতাধিক দেশী বিদেশী প্রজাতির ফলের চারা রয়েছে। অপরদিকে শোভাবর্ধনকারী গোলাপ, মুসেন্দা, রঙ্গন, বেলি, চার ধরনের জবা, জুঁই, গন্ধরাজ, হাসনাহেনা, বাগানবিলাস, সাদা জিনিয়া, কসমস, সূর্যমুখী, পাতাবাহার, কৃষ্ণচূড়া, মাধবীলতা, ক্রিসমাস ট্রি, ফিজিয়াম, ডালিয়া, নয়নতারাসহ প্রায় ১০০ দেশী বিদেশী প্রজাতির ফুলের চারা পাওয়া যায়।

এছাড়াও বারমাসি সজিনা, এলাচি, দারুচিনি, লবঙ্গ, তেজপাতা, গোলমরিচ, এলোভেরা, শতমূলী, তুলসীসহ বিভিন্ন মসলা, ঔষধী গাছ, কাঠের গাছ, সবজি চারা পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃক্ষ গবেষক কৃষিবিদ ফয়সাল আহমদ সোহান জানান, তিনি কয়েকবার আঃ রাজ্জাকের নার্সারী পরিদর্শন করেছেন। অজোপাড়া গাঁয়ে একটা নার্সারীতে এভাবে ফুল, ফলদ, সবজী, ঔষধী চারার ব্যাপক সংগ্রহ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তিনি বলেন, ‘গাছ লাগানোটা হতে পারে আমাদের সামাজিক বন্ধন ও সুস্থ বিনোদনের উৎস। তাছাড়া পরিবর্তিত জলবায়ুর বিরূপ প্রতিক্রিয়া থেকে বাঁচতে বৃক্ষরোপনের বিকল্প নেই।’ 

বৃক্ষ গবেষক কৃষিবিদের পরামর্শ, দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তায় বাড়ির ছাদে টবে অথবা বাড়ির আশেপাশে পতিত জমি ফলে না রেখে সবজি, ফলজ ও ঔষধী গাছ লাগানো উচিত।

চুনারুঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জালাল সরকার বলেন, ‘আব্দুর রাজ্জাক একজন বৃক্ষপ্রেমী। তিনি দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা সংগ্রহ করেন। প্রতিবছর তিনি জেলা এবং উপজেলায় বিভিন্ন কৃষি ও প্রযুক্তি মেলায় অংশগ্রহণ করেন এবং পুরস্কার জিতে নেন। নার্সারীকে আরো সমৃদ্ধ করতে উনাকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।’

লেখক- শিক্ষার্থী, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

এনএস/