ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

৪৬-এও তিনি অবিবাহিত ‘গীতা মা’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৪২ পিএম, ১৮ জুন ২০২০ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১১:৪৯ পিএম, ১৮ জুন ২০২০ বৃহস্পতিবার

গীতা কাপূর বলিউডের প্রথম সারির কোরিওগ্রাফার।

গীতা কাপূর বলিউডের প্রথম সারির কোরিওগ্রাফার।

গীতা কাপূর আজ বলিউডের প্রথম সারির কোরিওগ্রাফার। ছিল না বলিউডি কানেকশন, ছিল না কোনও খানদানি তকমাও, মুম্বইয়ের এক নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নিয়েও নিজের ইচ্ছাশক্তির উপর ভর করেই জুনিয়র আর্টিস্ট থেকে গীতা মা।

এসেছে প্রেম, ভেঙেওছে। কেমন ছিল সেই যাত্রাপথ? দেখে নেওয়া যাক। গীতার জন্ম ১৯৭৩ সালের ৫ জুলাই। নাচতে ভালবাসতেন ছোট থেকেই। নিয়মিত শিখতেনও। কিন্তু কোনওদিনই তথাকথিত নৃত্যশিল্পী হওয়ার ইচ্ছে ছিল না তাঁর। তিনি আকাশ ছুঁতে চেয়েছিলেন। তাঁর ইচ্ছে ছিল বিমানসেবিকা হওয়ার।

তিনি সেই মতো প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন। কিন্তু তাঁর চোখ বাধ সাধে। তিন বার বিমান সেবিকার পরীক্ষা দিলেও শারীরিক পরীক্ষার সময় বাদ পড়ে যান তিনি, কারণ  ছোটবেলাতেই দৃষ্টিশক্তি দুর্বল ছিল তার। এ দিকে সংসারের দায়িত্বও বাড়ছিল।

অনিচ্ছা সত্তেও বাধ্য হয়েই মাত্র ১৫ বছর বয়সে ফারাহ খানের নাচের গ্রুপে যোগদান করেন। এ দিকে কলেজে পড়ার সময়েই গীতার কাছে ছোট ছোট কাজের অফার আসতে থাকে। জুনিয়ত আর্টিস্ট হিসেবে নিজেও কাজ করতে শুরু করেন। খুব ছোট ছোট চরিত্রে শ্রীদেবীর 'খুদা গাওয়া', অনিল কপূরের 'নায়ক' ছবিতে অভিনয় করতে শুরু করেন তিনি। নাচের তালিমও একইসঙ্গে চলছিল। ফারাহের সঙ্গে গীতার পরিচয়টাও খানিক অদ্ভুত। ফারাহার গায়ে ছিল বলিউডের গন্ধ। কিন্তু গীতার গায়ে তেমন কিছুই নেই। তা সত্ত্বেও তাঁদের আলাপ হল কী করে? সে এক মজার কাণ্ড।

গীতার বাবা ফারাহের নাচ দেখে এক দিন মেয়ের সামনেই প্রশংসায় ফেটে পড়েন। গীতা ভীষণ রেগে যান। হিংসেও হয় মনে মনে। বাবা অন্য কোনও মেয়ের নাচ তাঁর থেকে ভাল বলবে, তা কী করে হয়? এর কিছু দিন পরেই গীতার কাছে একটি অনুষ্ঠানে নাচের প্রস্তাব আসে। জানা যায়, ওই অনুষ্ঠানে যাঁর মূলত যার নাচ করার কথা ছিল, তিনি হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়ায় গীতার ডাক পড়েছে। গীতাও মন-প্রাণ ঢেলে দেন সেই শো-তে। মেয়ের নাচ দেখে তাঁর বাবাও মুগ্ধ। এমনকি সেই অনুষ্ঠানটি যে শিল্পীর আদপে করার কথা ছিল তিনিও গীতাকে অভিবাদন জানান। সেই শিল্পী আর কেউ নন, সে ছিল  ফারাহ খান। নাচ দেখে তিনিই নিজেই গীতাকে তাঁর দলে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেন। গীতাও পুরনো হিংসা ভুলে যোগ দেন সেখানে। 

ফারাহর জন্যই কুছ কুছ হোতা হ্যয় ছবির 'তুঝে ইয়াদ না মেরি আয়ি' গানটি কোরিওগ্রাফ করার সুযোগ পান গীতা। নিজে অভিনয়ও করেন। এর পর দিল সে ছবির 'ছাঁইয়া ছাঁইয়া'-সহ আরও বেশ কিছু ছবিতে কোরিওগ্রাফার হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন তিনি। বাড়তে থাকে পরিচিতও। কিন্তু ফারাহর দলের অংশ হয়ে কাজ করা আর বেশিদিন ভাল লাগছিল না তাঁর। গীতা চাইছিলেন বলিউডে নিজের পরিচয় তৈরি করতে।

যেমন ভাবা সেই কাজ। গীতা বেরিয়ে আসেন ফারাহর গ্রুপ থেকে কিন্তু এটা বলিউড। এ খানে শুধু মাত্র গুণ থাকলেই হয় না। একই সঙ্গে দরকার নেটওয়ার্কিং, যা গীতার ছিল না। ফলে ব্যর্থ হয়ে তিনি আবার ফিরে আসেন ফারাহর কাছেই।

তাঁকে ফারাহ ফিরিয়ে না দিয়ে কাছে টেনে আবার কাজ দিতে শুরু করেন। এ দিকে ফারাহ সিনেমা পরিচালনার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় তাঁর নাচের গ্রুপের অনেকটা দায়িত্বই গীতার কাঁধে এসেই পড়ে। এর পর আর থামেননি গীতা। 'ম্যায় হু না’, 'থোড়া প্যায়ার থোড়া ম্যাজিক', 'হে বেবি'-সহ বিখ্যাত প্রযোজনা সংস্থাগুলির ছবির ডান্স কোরিওগ্রাফ করার দায়িত্ব তখন তাঁর উপর। ক্রমশ পরিচিত বাড়তে থাকে। ফারাহর ভাই সাজিদ খান এরই মধ্যে গীতাকে প্রেমপ্রস্তাব দেন। কিন্তু তা ফিরিয়ে দেন গীতা। শুধু সাজিদ খানই নন, ইন্ডাস্ট্রির অনেক নামি দামি পরিচালক, অভিনেতাও তাঁকে বিয়ে করার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। কিন্তু সেখানেও সটান না বলে দেন গীতা কাপুর। 

তিনি চেয়েছিলেন নিজের কেরিয়ার সাজাতে, আরও পোক্ত করতে। টাকা পয়সার অভাব কাটিয়ে উঠছিলেন, ইন্ডাস্ট্রির মানুষজনও তাঁকে ক্রমশ চিনতে শুরু করেছিল। কিন্তু সাধারণ মানুষ? নায়ক-নায়িকাদের নাচের পিছনে যে আরও বেশ কিছু মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রম থাকে সেই কনসেপ্টটাই তো অজানা ছিল সে সময়। ঠিক এই সময়েই রিয়ালিটি শো 'ডান্স ইন্ডিয়া ডান্স'-এ বিচারকের আসন গীতার জীবনে আশীর্বাদের মতো আসে। গীতাও রাজি হয়ে যান। দর্শকের বসার ঘরে ছোট পর্দার মাধ্যমেই জায়গা করে নেন। গীতা নাকি প্রেম করছেন। এই সময়েই শোনা গিয়েছিল, কিন্তু কার সঙ্গে? উঠতি মডেল এবং কোরিওগ্রাফার রাজীব। যদিও সে কথা গুঞ্জন বলে উড়িয়ে দেন গীতা। বলেন তাঁরা বন্ধু। একসঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় হাজির হলেও কখনও এই সম্পর্কের কথা স্বীকার করেননি তিনি। 

গীতার বয়স ৪৬ হয়ে গেলেও তিনি আজও অবিবাহিত। বিয়ের প্রসঙ্গ উঠলে সব সময়ই বলেছেন, এখনও সময় আসেনি। কিন্তু গীতা কাপূর তা সত্বেও গীতা মা হয়ে গেলেন কী করে? তাঁর ছাত্র-ছাত্রীদের পুরো ক্রেডিটটাই। গীতার নাচের অ্যাকাডেমিতে এক ছাত্রের নাম ফিরোজ। তিনিই প্রথম তাঁকে মা বলে ডাকতে শুরু করেন। যে ভাবে পরম মায়ায় কাজ শেখাতেন গীতা, তা যেন একেবারে মায়ের মতোই। ব্যস সেখান থেকেই শুরু হয়ে গেলো। রিয়ালিটির শো'র মঞ্চ হোক বা সাধারণ জনগণ, সবার কাছেই আজ তিনি ‘গীতা মা’। আকাশ ছুঁতে চেয়েছিলেন গীতা, ছুঁলেনও। তবে বিমানসেবিকা হয়ে নয়। নাচের মধ্যে দিয়েই পৌঁছে গেলেন উন্নতির শিখরে।

এসইউএ/এসি