ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

সাতক্ষীরার কলারোয়ায় পান বাজারে ধস! বিপাকে চাষীরা

জুলফিকার আলী,কলারোয়া(সাতক্ষীরা)প্রতিনিধি: 

প্রকাশিত : ০৭:৩৭ পিএম, ১৯ জুন ২০২০ শুক্রবার

সাতক্ষীরার কলারোয়ায় আম্ফানের ক্ষতি এখনও ঠিক ভাবে কাটিয়ে উঠতে পারেন নি পান চাষীরা। তার উপরে পানের দাম নেই বল্লেই চলে। এমতাবস্থায় পান চাষীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। 

জানা গেছে, গত মে মাসের ২০ তারিখে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। লন্ডভন্ড হয়ে যায় পানের বরজ। এর প্রভাবে চরম ক্ষতির মুখে পড়েন উপজেলার বিভিন্ন এলাকার পান চাষীরা। সর্বশান্ত হয়েছেন কেউ কেউ, ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি অনেকের। তারপরেও থেমে নেই কৃষকের সমস্যা। পানের বাম্পার ফলন সত্বেও বাজার মূল্য কম থাকায় পান চাষীরা পড়েছে বিপাকে। যে কারণে এ বছর পান চাষ করে লাভের পরিবর্তে ব্যাপক লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। 

পান চাষীরা জানান, পূর্বে যে পানের পোন প্রতি ২৫০ টাকায় বিক্রি হতো, এখন সেই পান বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৮০/১০০ টাকায়। আগে যে পান ৩০/৪০টাকা বিক্রি হতো এখন সেই পান পোন প্রতি ৫/১০ টাকা। উপজেলার জয়নগর এলাকার পান চাষী আনন্দ জানান, ঘূর্ণিঝড়ে তার ৭ বিঘা পানের বরজ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। সেটি দাঁড় করাতে ১০/১২ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু তার এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে খুববেশি সময় লাগতো না, যদি পূর্বের মত পানের দাম হতো। তিনি আরো জানিয়েছেন, বর্তমানে ৪/৫ গাদি পান বিক্রি করে যে টাকা পাচ্ছেন, তা আগের এক গাদি পানের দামের সমান। 

একই ইউনিয়নের কৃপারামপূর গ্রামের হান্নান খাঁ জানিয়েছেন, তারও ১বিঘা বরজের পান মাটিতে শুয়ে গেছে। যার কারণে অভাব এখন তার দোরগোড়ায়। ঋণ নিয়ে বরজটি দাঁড় করিয়েছিলেন। এখন সংসার চালাতেই হিমসিম খেতে হচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার পান চাষীরা একই তথ্য জানান। পান চাষীরা আরো জানান, হঠাৎ করে পানের বাজার কমে যাওয়ায় ঋন ও জন-মজুরির টাকা কি ভাবে শোধ করবেন তার উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না তারা। অনেক পান চাষীরা ঋণ নিয়ে পান চাষ করে তারা এখন চরম বিপাকে পড়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ অঞ্চলের বরজের পান বেশিরভাগই বিক্রি হয় সাতক্ষীরার ঝাউডাংগা, তালার পাটকেলঘাটা, কেশবপুরের বিভিন্ন হাটবাজারে। এসব বাজারে পানের দাম তিন ভাগের এক ভাগ কমে গেছে। ফলে কলারোয়ার পান চাষীরা পড়েছেন চরম বিপাকে, দুশ্চিন্তার যেন শেষ নেই। তারা পানের বাজারের ধস নামার কারণ হিসাবে চিহ্নিত করছেন করোনা ভাইরাস কেও। 

এছাড়া পান দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থান্তরিত করা যাচ্ছে না। চা ও পানের দোকান গুলো আংশিক খোলা থাকাও একটি কারণ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পান বিক্রির টাকায় সংসার চালানো তো দূরের কথা, বরজ চাষের খরচও ওঠাতে পারছেন না। সংসার ও বরজ চাষের খরচ যোগাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। অন্য দিকে বরজের জনমজুরির দাম লাগামহীন ভাবে বেড়েই চলেছে। প্রতিদিন ৫/৬ ঘন্টা বরজের কাজের মজুরি ৬০০/৮০০টাকা। এমনিভাবে পানের দাম কম থাকলে পান চাষীরা পান চাষের আগ্রহ হারাবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পানের বাজার স্বাভাবিক ভাবে পরিচালিত করতে সরকারি সহায়তার জন্য পান চাষীরা আহবান জানিয়েছেন।

আরকে//