ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

কারাবাসে থেকেই প্রাচীন গণিত সমস্যার সমাধান

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:৩৬ পিএম, ২৪ জুন ২০২০ বুধবার | আপডেট: ১১:১৯ পিএম, ২৪ জুন ২০২০ বুধবার

যুক্তরাষ্ট্রে খুনের দায়ে কারাদণ্ডাদেশ পাওয়া এক আসামি কারাগারেই উচ্চতর গণিতের দীক্ষা নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, প্রাচীন জটিল এক গাণিতিক সমস্যারও সমাধান করে ফেলেছেন তিনি। যা প্রকাশ হয়েছে গণিত বিষয়ক একটি গবেষণা জার্নালেও। খবর ডয়চে ভেলে’র। 

হলিউডের চলচ্চিত্রে এমন ঘটনা হয়তো প্রায়ই দেখা যায়। কিন্তু ক্রিস্টোফার হ্যাভেনস যা করেছেন তা গল্পকেও হার মানায়। স্কুলের গণ্ডি পেরুতে পারেননি তিনি, পাননি কোনো চাকরিও। এক পর্যায়ে হয়ে পড়েন মাদকাসক্ত। পেয়েছেন খুনের দায়ে ২৫ বছরের কারাদণ্ড। চল্লিশ বছর বয়সি হ্যাভেনস এর মধ্যে নয় বছর কাটিয়েছেন, আরও ১৬ বছরের বন্দিজীবন তার সামনে।

কিন্তু জেলে তার দিনগুলো আর আট-দশজন কয়েদির মতো নয়। বন্দি দশায় নিজেকে তিনি গণিতপ্রেমী হিসেবে আবিষ্কার করেন। শুরু করেন উচ্চতর গণিতের পাঠ নেয়া। জেলখানায় তা মোটেও সহজ ছিল না। চিঠি পাঠিয়ে তিনি যে বইগুলোর অর্ডার দিতেন বাহিরে সেগুলো আটক করত কারারক্ষীরা।

অবশেষে একটি দফারফা করেন তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। অন্য বন্দিদের অঙ্ক শেখানোর বিনিময়ে শুধু পাঠ্যবই আনার অনুমতি দেয়া হয় তাকে। কিন্তু সেগুলো তার জন্য যথেষ্ট ছিল না। এক পর্যায়ে তিনি গণিতের জার্নালের বিভিন্ন সংখ্যার প্রকাশকদের কাছে চিঠি লিখতে শুরু করেন। বিভিন্ন হাত ঘুরে একটি চিঠি আসে গণিতের অধ্যাপক উমব্যার্তো চেরুতির কাছে। সিয়াটলে বন্দি হ্যাভেনসের অঙ্কের দৌড় জানতে তিনি একটি জটিল গাণিতিক সমস্যা পাঠান তাকে। কিছুদিনের মধ্যেই ১২০ সেন্টিমিটার লম্বা কাগজে বিরাট এক ফর্মুলা লিখে সঠিকভাবেই সমাধান পাঠান হ্যাভেনস।    

অধ্যাপক চেরুতি সেসময় প্রাচীন একটি গ্রিক গাণিতিক সমস্যা বা তত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করছিলেন, যার উপর ভর করে এমনকি গড়ে উঠেছে আধুনিক ক্রিপ্টোগ্রাফি। সেই গবেষণায় তিনি সঙ্গী করেন হ্যাভেনসকে। জেলে বসে কোনো ক্যালকুলেটর বা ডিজিটাল ডিভাইস ছাড়াই প্রথমবারের মতো সংখ্যার সেই ধাঁধা উন্মোচন করে ফেলেন হ্যাভেনস।

তার প্রমাণকে বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যা করতে সহায়তা করেন চেরুতি। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে এই দুইজনের যৌথ গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে গণিতের জার্নাল ‘রিসার্চ ইন নাম্বার থিওরি’তে। হ্যাভেনস যে শুধু নিজে গাণিতিক সমস্যার সমাধান করছেন তাই নয়। জেলখানায় অনেক বন্দির মধ্যেই তিনি সংখ্যার মোহ ছড়িয়ে দিয়েছেন। তাদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন ম্যাথ ক্লাব, যার সদস্য এখন ১৪ জন। জেলের বাকি ১৬ বছরের বন্দি জীবন গণিতেই ডুবে থাকতে চান হ্যাভেনস। যাকে তিনি দেখছেন সমাজের প্রতি তার ঋণ শোধ হিসেবে। কে জানে হ্যাভেনসের এই গল্পই হয়তো সামনে দেখা যাবে হলিউডের কোনো সিনেমাতে।


এমএস/