ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

করোনার ভয়ে রোগীকে হাসপাতালেই ঢুকতে দিলেন না চিকিৎসক 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১১:১৫ এএম, ২৮ জুন ২০২০ রবিবার

করোনা ভাইরাসজনিত শ্বাসকষ্ট নিয়ে চাঁপাইনবাগঞ্জ সদর হাসপাতাল চিকিৎসা নিতে এসে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্য বিভাগের উদাসিনতা ও টালবাহানায় রাজশাহী মিশন হাসপাতালে যেতে বাধ্য হয়েছেন মরণব্যাধির এক রোগী। এ নিয়ে শহরে আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি হলেও স্বাস্থ্য বিভাগ মনগড়া কথা বলে দায় সেরেছেন।

গত শুক্রবার মধ্যরাতে অমানবিক এ ঘটনা ঘটলেও গভীর গোপনীতার তথ্য ফাঁস হয় গতকাল সন্ধ্যার পর। তোলপাড় সৃষ্ট হয় স্থানীয় সচেতন মহলে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুক্রবার মধ্যরাতে প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে চিকিৎসার জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে ছুটে যান এক করোনায় আক্রান্ত এক রোগী। বিষয়টি পূর্বেই জানতে পেরে এবং রোগী হাসপাতালে পৌঁছার আগেই হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মূল গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন জরুরি বিভাগের চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা। 

এ অবস্থায় রোগী তার স্বজনদের সহযোগিতায় সরকারি হাসপাতালে এলে, এ হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার কোন ব্যবস্থা না থাকায় তাকে রাজশাহী মিশন হাসপাতালে চলে যেতে বলেন চিকিসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। তাদের এমন অমানবিক আচরণে বিমূঢ় হয়ে মা ও বড় বোনের কাঁধ ধরে হেঁটে হেঁটে হাসপাতাল প্রাঙ্গণ থেকে ফিরে যান সেই রোগী। প্রথমে অ্যাম্বুলেন্স না পেলেও পরে সদর হাসপাতালের সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে করে রাত প্রায় দুটোর দিকে রাজশাহী যান তিনি।

ভুক্তভোগী করোনা আক্রান্ত রোগী চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার পুরুষ নাগরিক। শনিবার সন্ধ্যার পর ফোনে তিনি ও তার স্বজনরা জানান, ‘করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে বাসায় ছিলেন তিনি। হঠাৎ শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে খোঁজখবর নেয়ার দায়িত্বে থাকা একজন স্বাস্থ্য পরিদর্শককে ফোনে বিষয়টি জানানো হয় এবং তিনি জেলা সরকারি হাসপাতালে যেতে বলেন। এর প্রেক্ষিতে রিকশায় হাসপাতালের গেটে যেতেই ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসারসহ (ইএমও) স্বাস্থ্যকর্মীরা জরুরি বিভাগের গেট ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। দূর থেকেই রিকশা থামাতে বলেন তারা।’ 

ভুক্তভোগী জানান, ‘এসময় জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার সাবদুল আলম বলেন কাগজপত্র করে দিচ্ছি রাজশাহী মিশন হাসপাতালে চলে যান। এখানে কোন চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। তাকে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানালেও তিনি তা দিতে পারেননি। তাদের সবার আচরণ ছিল তাড়িয়ে দেয়ার মতো। এ সময় হাসপাতালের সামনে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের খোঁজকরি। তারাও যেন কিভাবে বিষয়টি জানতে পেরে রোগীকে নিয়ে যেতে অসম্মতি জানায়।  ব্যর্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাবার সময় রাত ২টার দিকে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স যেতে রাজি হলে রাজশাহী রওনা দিই। রাত সাড়ে তিনটার দিকে রাজশাহী মিশন হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি।’

এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সিভিল সার্জন জাহিদ নজরুল চৌধুরী জানান, ‘বিষয়টি আসলে সেরকম নয়। হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ না থাকায় এবং হাসপাতালের ইএমও নতুন হওয়ায় রোগীকে ভর্তি করতে ভয় পেয়েছে। তবে করোনা রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা শিগগিরই করা হবে। এরপর থেকে কোন করোনা রোগী এলে ডাক্তার মুন আহম্মেদকে রোগীর দেখভালের দায়িত্ব দেয়া হবে। তবে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা চালু না হওয়া পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রাজশাহী পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করবে।’

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার নাদিম সরকার জানান, ‘রোগীকে অক্সিজেন দেওয়ার মত কোন ব্যবস্থা ছিল না। পালস্ অক্সিমিটার হাতে পেয়েছি আজ (শনিবার)। হাইফ্লো ক্যানুলা হাতে পাইনি এখনও। ঢাল-তলোয়ার না থাকার মতই অবস্থা আমাদের। তবে খুব শিগগিরই এর ব্যবস্থা হবে। তবে হাসপাতালের নবনির্মিত ভবনে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থায় ৫৬টি অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। কিন্তু গণপূর্ত বিভাগ সংযোগ স্থাপন করেছে মাত্র তিনটির সঙ্গে। একসঙ্গে পাঁচজন রোগীর অক্সিজেন প্রয়োজন পড়লে দেওয়া সম্ভব হবে না।’

তাৎক্ষণিকভাবে অ্যাম্বুলেন্স সুবিধা না দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি জানান, ‘হাসপাতালে মাত্র দুটি অ্যাম্বুলেন্স। চালক দু’জনের মধ্যে একজন ছুটিতে ছিলেন। আর একজন রোগী নিয়ে গিয়েছিলেন রাজশাহীতে। সেখান থেকে ফিরে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী নিয়ে যেতে দেরি হয়েছে।’

এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য ইএমও সাবদুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী জান্নাতই- নূর জানান, ‘সবগুলোর পাইপ আমাদের কাছে নেই। তবে ১২টি প্রস্তুত রয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চাহিদা দিলেই সংযোগ দেওয়া হবে।’

এআই//