ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

গৌরবময় ৬৮ বছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

রাবি সংবাদদাতা

প্রকাশিত : ০৩:০২ পিএম, ৬ জুলাই ২০২০ সোমবার

প্রাচ্যের ক্যামব্রিজ খ্যাত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকাল ১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই। প্রতিষ্ঠার ৬৭ বছর অতিক্রম করে ৬৮ বছরে পা রেখেছে দেশের এই বিদ্যাপীঠ। আলোকিত করেছে দেশকে। আলোকিত করেছে এই বিদ্যাপীঠে পড়ুয়া সকল শিক্ষার্থীদের। 

শুধু দেশই নয় দেশের সীমানা ছাড়িয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি গৌরব ও ঐতিহ্যে বিশ্বময় উদ্ভাসিত। শত-সহস্র স্মৃতিমাখা ক্যাম্পাসের মায়ায় জড়িয়ে আছে লাখো শিক্ষার্থী।

ব্রিটিশ আমলে রাজশাহী অঞ্চলের শিক্ষাদীক্ষা উন্নয়নের জন্য ১৮৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় রাজশাহী কলেজ। কিন্ত এর কিছুদিন পরেই বন্ধ হয়ে যায় এসব কার্যক্রম। সে সময়েই রাজশাহীতে একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রয়োজন অনুভূত হয়। ভাষা আন্দোলনের কিছুদিন আগে থেকেই মূলত রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরু হয়।

১৯৫২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি শহরের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রাজশাহী কলেজ প্রাঙ্গণে সমবেত হয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ পাসের দাবি তোলে। ক্রমেই তা তীব্র হতে থাকে। এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানাতে গিয়ে কারারুদ্ধ হন ১৫ ছাত্রনেতা ৷ পরে ছাত্রজনতার পক্ষ থেকে ঢাকায় একটি ডেলিগেশন পাঠানো হয়। যাতে সদস্যদের মধ্যে মরহুম আবুল কালাম চৌধুরী ও আব্দুর রহমানের নাম উল্লেখযোগ্য৷ 

এভাবে একের পর এক আন্দালনের চাপে স্থানীয় আইন পরিষদ রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়। এই আন্দোলনে একাত্ব হন পূর্ববঙ্গীয় আইনসভার সদস্য প্রখ্যাত আইনজীবী মাদার বখশ৷

১৯৫৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ভুবন মোহন পার্কে আরও একটি জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মাদার বখশ সরকারকে হুঁশিয়ার দিয়ে বলেন, ‘যদি রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন না হয় তবে উত্তরবঙ্গকে একটি স্বতন্ত্র প্রদেশ দাবি করতে আমরা বাধ্য হব।’

মাদার বখশের এই বক্তব্যে সাড়া পড়ে দেশের সুধী মহলে এবং সাথে সাথে টনক নড়ে সরকারেরও। অবশেষে ১৯৫৩ সালের ৩১ মার্চ প্রাদেশিক আইন সভায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা আইন পাস হয়। নতুন উপাচার্য প্রফেসর ইতরাত হোসেন জুবেইরীকে সঙ্গে নিয়ে মাদার বখশ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। এ দুজনকে যুগ্ম সম্পাদক করে মোট ৬৪ সদস্য বিশিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়। এর পৃষ্ঠপোষক ছিলেন তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনার এম এ খুরশীদ৷ একই বছর ৬ জুলাই প্রফেসর ইতরাত হোসেন জুবেইরীকে উপাচার্য নিয়োগ করে বিশ্ববিদ্যালয় আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। 

শুরুতে ১৬১ জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম ক্লাস শুরু হয় রাজশাহী কলেজে। উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের দফতর প্রতিষ্ঠা করা হয় পদ্মা তীরের বড়কুঠি নামে পরিচিত ঐতিহাসিক নীল কুঠির উপর তলায়। বড়কুঠির কাছেই তৎকালীন ভোলানাথ বিশ্বেশ্বর হিন্দু একাডেমিতে চিকিৎসা কেন্দ্র ও পাঠাগার তেরি করা হয়। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দফতর স্থাপন করা হয় জমিদার কুঞ্জমোহন মৈত্রের বাড়িতে। শহরের বিভিন্ন স্থানে ভাড়া করা বাড়িতে গড়ে ওঠে ছাত্রাবাস। রাজশাহী কলেজ সংলগ্ন ফুলার হোস্টেলকে রুপান্তরিত করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস হিসেবে। বড়কুঠি এলাকার লালকুঠি ভবন ও আরেকটি ভাড়া করা ভবনে ছাত্রী নিবাস স্থাপন করা হয়।

১৯৫৮ সালে বর্তমান ক্যাম্পাসে দালান-কোঠা ও রাস্তাঘাট নির্মাণ শুরু হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম স্থানান্তর করা হয় মতিহারের নিজস্ব ক্যাম্পাসে এবং ১৯৬৪ সালের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অফিস ও বিভাগ এখানে স্থানান্তরিত হয়। এই ক্যাম্পাসটি গড়ে ওঠে অস্ট্রেলিয়ান স্থপতি ড. সোয়ানি টমাসের স্থাপত্য পরিকল্পনায়।

আজকের এ অবস্থানে আসতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে। হাজারো ইতিহাস, ঐতিহ্য, স্বাধীনতা সংগ্রাম, নানা ঘটনার সাক্ষী এই বিদ্যাপীঠ। মুক্তিযুদ্ধ তথা অধিকার আদায়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ কর্মকর্তা- কর্মচারীগণ। 

বর্তমানে এর শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩৮ হাজার ২৩১ জন। নয়টি অনুষদের ৫৮টি বিভাগে পাঠদান চালু রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে ৬টি উচ্চতর গবেষণা ইন্সটিটিউট ও ১৩টি একাডেমিক ভবন।

এআই//