ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘নামে আছে কাজে নেই’ তালতলী ২০ শয্যা হাসপাতাল

বরগুনা প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০২:৫৯ পিএম, ৭ জুলাই ২০২০ মঙ্গলবার

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী আসনের উপজেলা তালতলীর ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল শুধু নামেই আছে কিন্তু কাজে নেই। করোনার এই মুহূর্তেও উপজেলার আড়াই লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সেবায় নেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।

নির্মাণাধীন ২০ শয্যা হাসপাতাল ভবনের দোতলার দু’কক্ষে ভেঙে যাওয়া ৫-৬টি বেড থাকলেও রোগী ভর্তির কোন কার্যক্রম চলেনি এ হাসপাতালে। নামধারী এ হাসপাতালে ইনডোর-তো চালু নেই বরং আউটডোর চালুর জন্য হাসপাতালের নামে নেই কোন ওষুধ বরাদ্দ। নেই ল্যাবরেটরি ও রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয়ে কোন ব্যবস্থা। এমনকি জরুরি কোন রোগীর উন্নত চিকিৎসা জন্য পাঠানোর মতো এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসও নেই। 

শুক্রবার সারাদিন ও অন্যান্য দিনগুলোতে সকাল সাড়ে ৯টার আগে ও বেলা দেড়টার পরে বন্ধ থাকে হাসপাতালটি। এ সকল সমস্যা সমাধানের জন্য জেলার আড়াই লাখ মানুষ সোশ্যালমাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়েছেন। এখানে ৫ জন এমবিবিএস এর পদ থাকলেও করোনার এই মুহূর্তে ডেপুটেশনে দিয়েছেন ৪ জন ডাক্তার। তবে উপস্থিত থাকেন মাত্র ২ জন।  

গত ৩১ মার্চ প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে বরগুনার সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জনের সাথে কথা বলেছেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী সিভিল সার্জনের কাছে স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে কথা বলেন। বিশেষ করে কয়েকবার (প্রধানমন্ত্রী) এ্যাম্বুলেন্সের কথা জিজ্ঞেস করলেও সিভিল সার্জন সকল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ্যাম্বুলেন্স রয়েছে বলে জানান। 

এ সময় সিভিল সার্জন জেলায় কোন সমস্যা নেই বলে প্রধানমন্ত্রীকে জানান। কিন্তু তালতলীর এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সমস্যার কথা বলেননি তিনি। প্রধানমন্ত্রীর এ হাসপাতালের সমস্যার কথা তুলে না ধরায় সোশ্যালমাধ্যম ফেসবুকে সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় ওঠে। 

বরগুনার তালতলী উপজেলা বাংলাদেশ সৃষ্টির পর থেকেই ছিল আওয়ামী লীগ ঘেষা। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তালতলী-আমতলী আসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছিলেন। তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি আমতলী উপজেলার দক্ষিণের ৩টি ইউনিয়নকে ৭টি ইউনিয়ন করে তালতলীকে উপজেলায় রূপান্তর করেন তিনি। 

তালতলী উপজেলা হওয়ার সাড়ে ৮ বছর অতিবাহিত হলেও এ উপজেলার প্রায় আড়াই লাখ মানুষ মৌলিক অধিকার স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তালতলী উপজেলায় রূপান্তর হওয়ার পর প্রশাসনিক প্রায় সকল অফিস-আদালত আসলেও নেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। তালতলী হাসপাতালের নামে ওষুধ বরাদ্দ না থাকায় উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বরাদ্দকৃত ওষুধপত্র দিয়ে চালাচ্ছে তালতলী ২০ শয্যা হাসপাতাল। সংকটে রয়েছে প্রয়োজনীয় জনবল ও চিকিৎসা উপকরণের। 

উপজেলার সচেতন নাগরিক পরিষদের নেতা ইদ্রিসুর রহমান হৃদয় জানান, ‘তালতলী হাসপাতালের নানাবিধ সমস্যা সমাধানের জন্য উপজেলার প্রায় আড়াই লাখ মানুষের ব্যবহারী সকল মোবাইল থেকে একযোগে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দাবি জানিয়েছি।’ 

তালতলী হাসপাতালের কর্মরত ডাক্তার মো. ফাইজুর রহমান জানান, ‘উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স তো দূরের কথা তালতলী হাসপাতাল হিসেবেও ওষুধপত্র পাইনি। এখানে পুরনো একটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। সেখানের বরাদ্দকৃত ওষুধ দিয়ে চালাচ্ছি। এখানে জনবলসহ স্বাস্থ্য সেবার রয়েছে নানাবিধ সমস্যা।’

উপজেলা আ’লীগ সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান রেজবী উল কবির জোমাদ্দার বলেন, ‘দেশে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এমপি মহোদয়কে সাথে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কাছে আড়াই লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নে তালতলীতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দাবি জানাবো।’

এআই//এমবি