ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

লঞ্চডুবিতে ২০ দফা সুপারিশ করে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৭:৫১ পিএম, ৭ জুলাই ২০২০ মঙ্গলবার

বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবির ঘটনায় ২০ দফা সুপারিশ করে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। সদরঘাট থেকে ভাটিতে ৭/৮ কিলোমিটার অংশে অলস বার্দিং উঠিয়ে দেওয়া, সদরঘাটের কাছে কোনও টার্মিনাল না রাখাসহ ২০ দফা সুপারিশ দিয়েছে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি।

মঙ্গলবার (৭ জুলাই) বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবির ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে সচিবালয়ে নৌ-পরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে কথা বলেন। এসময় তিনি জানান, দুর্ঘটনা কেন ঘটলো তা তদন্তের স্বার্থে প্রকাশ করছি না, পুলিশী তদন্ত শেষ হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে এই ঘটনা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলেই মনে হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।

প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, তদন্ত প্রতিবেদনে সদরঘাট টার্মিনালের আশেপাশে খেয়াঘাট না রাখাসহ ২০ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। নৌআইনে শাস্তির মেয়াদ ও জরিমানার পরিমাণ যুগোপযোগী করে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।

প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, ভিডিও ফুটেজ অনুযায়ী নৌদুর্ঘটনাটি এখনো হত্যাকাণ্ড বলেই মনে হয়। তবে, ঘাতক লঞ্চটির ফিটনেসে ঘাটতি নেই। পুলিশি তদন্তে এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড প্রমাণিত হলে ৩০২ ধারায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

২৯ জুন সকালে রাজধানীর শ্যামবাজার সংলগ্ন বুড়িগঙ্গা নদীতে চাঁদপুর রুটে চলা ময়ূর-২ লঞ্চের ধাক্কায় মুন্সীগঞ্জ থেকে আসা ‘মর্নিং বার্ড’ লঞ্চ ডুবে যায়। এতে ৩৪ জন প্রাণ হারায়। ওই লঞ্চডুবির ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। কমিটিকে পরবর্তী সাত কর্মদিবসের মধ্যে দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটন, দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তি/সংস্থাকে শনাক্তকরণ এবং দুর্ঘটনা প্রতিরোধে করণীয় উল্লেখ করে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ দিতে বলা হয়।

সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত কমিটির সুপারিশের বিস্তারিত তুলে ধরে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী জানান, প্রতিবেদনে ২০টি সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশগুলো যাচাই বাছাই করে দেখা হচ্ছে। যেগুলো সম্ভব দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। যেগুলো বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ সেগুলো সময় নিয়েই বাস্তবায়ন করা হবে। প্রয়োজনে এ নিয়ে সরকারের উচ্চ মহলের পরামর্শও গ্রহণ করা হবে।

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, মামলার তদন্তের স্বার্থে দুর্ঘটনার কারণ জানানো যাচ্ছে না। তিনি বলেন, প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে বিচার কাজ শুরু হবে। মূল তদন্ত যেটা হচ্ছে আইনি প্রক্রিয়ার জন্য সেই তদন্তটা যেন কোনোভাবে বিঘ্নিত না হয় সেজন্য এটা জনসমক্ষে প্রকাশ করছি না। আমরা একটা শৃঙ্খলার মধ্যে আনার চেষ্টা করছি।

২০ দফা সুপারিশ
ভবিষ্যতে নৌ দুর্ঘটনা এড়াতে তদন্ত কমিটি যে ২০ দফা সুপারিশ করেছে, সংবাদ সম্মেলনে সেগুলো পড়ে শোনান নৌ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেসবাহ উদ্দিন। সেগুলো হলো:

১. সদরঘাট থেকে ভাটিতে সাত থেকে আট কিলোমিটার এবং উজানে তিন থেকে চার কিলোমিটার অংশে বার্থিং উঠিয়ে দিতে হবে। ওই অংশে পন্টুন ছাড়া কোথাও নৌযান নোঙ্গর করে রাখা যাবে না। নদীর ওই অংশ থেকে পর্যায়ক্রমে শিপইয়ার্ড ও ডকইয়ার্ড উঠিয়ে দিতে হবে।

২. সদরঘাট টার্মিনালের আশপাশে কোনো খেয়াঘাট রাখা যাবে না। ওয়াইজঘাটের উজানে খেয়াঘাট স্থানান্তর করা যেতে পারে।

৩. লঞ্চের সামনে, পেছনে, মাস্টার ব্রিজে, ইঞ্জিন রুমে, ডেকে সিসিটিভি ক্যামেরা বসাতে হবে। মাস্টারের দেখার সুবিধার জন্য ব্যাক ক্যামেরার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া লঞ্চে পর্যায়ক্রমে ওয়াকি-টকি ব্যবহার চালু করতে হবে।

৪. লঞ্চ বা জাহাজ ঘাট ত্যাগ করার আগেই ভয়েজ ডিক্লারেশন দাখিল বাধ্যতামূলক করতে হবে। লঞ্চে কতজন যাত্রী বহন করা হচ্ছে, ডেক সাইডে এবং ইঞ্জিনে কারা কারা কর্মরত, তা ভয়েজ ডিক্লারেশনে উল্লেখ করতে হবে।

৫. ফিটনেসবিহীন লঞ্চ চলাচল বন্ধ করতে হবে। প্রত্যেক লঞ্চে জীবন রক্ষাকারী লাইফ জ্যাকেট ও লাইফ বয় রাখতে হবে।

৬. সকল নদীপথে বিভিন্ন নৌযানের গতি সীমা নির্ধারণ করে দিতে হবে। ঢাকা সদরঘাটে নৌযানের গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য টাওয়ার স্থাপন ও সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে।

৭. লঞ্চে মেকানিকাল স্টিয়ারিংয়ের পরিবর্তে ইলেট্রো হাইড্রলিক স্টিয়ারিং প্রবর্তন করার উদ্যোগ নিতে হবে।

৮. যাত্রীবাহী লঞ্চে মেইন ইঞ্জিনে লোকাল কন্ট্রোল সিস্টেমের পরিবর্তে ব্রিজ কন্ট্রোল সিস্টেম চালুর ব্যবস্থা নিতে হবে পর্যায়ক্রমে।

৯. ‘সাংকেন ডেক’ লঞ্চ পর্যায়ক্রমে উঠিয়ে দিতে হবে। প্রশস্ত ও ব্যস্ত নদীতে এ ধরনের নৌযান চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রশস্ত ও ব্যস্ত নদীতে যথাযথ সনদধারী মাস্টার ও ড্রাইভার ছাড়া নৌযান পরিচালনা করা যাবে না। ডিসপেনসেশন সনদের প্রথা বাতিল করতে হবে।

আরকে//