ঢাকা, শনিবার   ০৪ মে ২০২৪,   বৈশাখ ২০ ১৪৩১

ভারতে দিনে আক্রান্ত হবে ৩ লাখ!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:১৪ পিএম, ৮ জুলাই ২০২০ বুধবার

প্রাণঘাতি করোনার আঘাতে জর্জরিত দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত। যেখানে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৭ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। যার শেষ এক লাখ হতে সময়ে লেগেছে মাত্র ৪ দিন। আর মোট আক্রান্তের মধ্যে গতমাসেই সংক্রমিত হয়েছে ৪ লাখ। সংক্রমণের এই হার অব্যহত থাকলে সামনে ভয়াবহ অবস্থায় পড়তে যাচ্ছে নরেন্দ্র মোদির দেশ। 

গবেষণা প্রতিষ্ঠান ম্যাসাচুসেট্‌স ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির (এমআইটি) বরাত দিয়ে আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ সময়ে কার্যকরি কোন ভ্যাকসিন কিংবা টিকা আবিষ্কার না হলে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভারতে প্রতিদিন প্রায় তিন লাখ মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন করোনায়। শুধু এখানেই শেষ নয়, এখনকার পরিস্থিতি না বদলালে বিশ্বে করোনাক্রান্ত দেশগুলোর তালিকায় শীর্ষে পৌঁছে যাবে ভারত। পেছনে ফেলে দেবে আমেরিকা, ব্রাজিল ও রাশিয়াকে।

এর প্রথম ধাপ দেখা যাবে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের মধ্যে। এ সময়ে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলেও জানিয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, ৮৪টি দেশে বিশ্বের জনসংখ্যার ৬০ শতাংশের উপর সমীক্ষা চালিয়ে ভারতের পক্ষে রীতিমতো উদ্বেগজনক এই পূর্বাভাস দিয়েছে এমআইটি-র স্লোয়ান স্কুল অফ ম্যানেজমেন্ট। গবেষকদের দাবি, আগামী ৮ মাসে করোনা সংক্রমণে আরও উদ্বেগজনক পরিস্থিতি দেখা দেবে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আমেরিকায়। 

গবেষকদের দাবি, কোনও কার্যকরি টিকা না বেরলে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভারতে করোনায় আক্রান্ত হবেন দৈনিক ২ লাখ ৮৭ হাজার মানুষ। আর আগামী মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে গোটা বিশ্বে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছবে ২০ থেকে ৬০ কোটির মধ্যে।

যদিও কলকাতার চিকিৎসক, বিশেষজ্ঞদের একাংশ এমআইটি-র এই সমীক্ষাকে ততটা গুরুত্ব দিতে রাজি হচ্ছেন না। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অরিন্দম বিশ্বাস বলছেন, ‘আমি এমআইটি-র অঙ্ক কষে একটা সংখ্যা বলে দেওয়াকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। আমাদের দেশের সরকার প্রয়োজন হলে কিছু ব্যবস্থা নেবেন এই রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য। তার ফলে, এমআইটি-র হিসাব মিলবে না বলেই আমার বিশ্বাস। আগামী দিনে দেশে কোভিড পরীক্ষাকেন্দ্র অনেক বাড়বে। প্রয়োজনে আরও অনেক কোভিড হাসপাতাল হবে। এই সমীক্ষায় মানুষ অযথা আতঙ্কিত হয়ে পড়বেন।’

এমআইটি-র স্লোয়ান স্কুল অফ ম্যানেজমেন্টের গবেষকরা এই সমীক্ষা চালাতে গিয়ে দু’টি বিশেষ মডেল ব্যবহার করেছেন। একটি, ‘এসইআইআর (সাসেপ্টেব্‌ল, এক্সপোজ্‌ড, ইনফেকশাস, রিকভার্ড)’। অন্য মডেলটি পুরোপুরি গাণিতিক। কোনও সংক্রামক ব্যাধির সংক্রমণ কতটা হতে পারে, তার আঁচ পেতে যে মডেলটি আকছারই ব্যবহার করে থাকেন এপিডিমিয়োলজিস্টরা।

এমআইটি-র সমীক্ষা জানিয়েছে, টিকা না বেরলে আগামী ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যায় বিশ্বের সব দেশকেই টপকে যাবে ভারত। তার ঠিক পরেই থাকবে আমেরিকা। ওই সময় আমেরিকায় করোনায় দৈনিক আক্রান্ত হবেন ৯৫ হাজার মানুষ। দক্ষিণ আফ্রিকায় দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা হবে ২১ হাজার। আর ইরানে ১৭ হাজার এবং ইন্দোনেশিয়ায় ১৩ হাজার।

তৃতীয়ত, কোভিড পরীক্ষার হার যদি এখনকার মতোই থাকে আর যদি এক জন সংক্রমিত সর্ববাধিক আরও ৮ জনকে সংক্রমিত করেন, তা হলে কী হবে?

সমীক্ষা এও জানিয়েছে, যত বেশি সম্ভব কোভিড পরীক্ষা হবে, ততই সংক্রমণ রোখার কাজটা সহজ হবে। পরীক্ষার হার এখনকার মতোই থাকলে বিশ্বের ৮৪টি দেশে আগামী ফেব্রুয়ারির শেষে করোনাক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হবে সাড়ে ১৫ কোটি। আর কোভিড পরীক্ষার হার যদি দিনে ০.১ শতাংশ বাড়ে, তা হলে ওই ৮৪টি করোনা আক্রান্তের সংখ্যা আগামী ৮ মাসে বেড়ে হবে ১৩ কোটি ৭০ লাখ।

এমআইটি-র এই সমীক্ষা এও জানিয়েছে, করোনা আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যায় গোটা বিশ্বেই গলদ থেকে যাচ্ছে। আক্ষরিক অর্থে, যত জন করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন বা মারা যাচ্ছেন, তার সঠিক হিসাব দেওয়া হচ্ছে না।

গবেষকরা বলেছেন, ‘আমাদের হিসাবমতো এ বছরের ১৮ জুন পর্যন্ত বিশ্বে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৮ কোটি ৮৫ লাখ মানুষ। মৃত্যু হয়েছে ৬ লক্ষ মানুষের। যা সংক্রমণের সরকারি হিসাবের চেয়ে ১১.৮ গুণ বেশি। আর মৃতের সংখ্যার সরকারি হিসাবের চেয়ে বেশি ১.৪৮ গুণ।’

অথচ, জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১৮ জুন পর্যন্ত বিশ্বে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৮২ লাখ ৪০ হাজার মানুষ। মৃতের সংখ্যা ৪ লাখ ৫৪ হাজার ৬১০ জন। 

এআই//এমবি