ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

সিরাজগঞ্জ আ.লীগের কার্যালয় ও কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:০৪ পিএম, ৯ জুলাই ২০২০ বৃহস্পতিবার

দলীয় কোন্দল ও ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক বিজয় হত্যাকান্ডের পর সংকটময় পরিস্থিতিতে সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় বন্ধ এবং দলের সকল ইউনিটের রাজনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ রাখার সিদ্বান্ত নেয়া হয়েছে।

বুধবার জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকের পর থেকে দলীয় কার্যালয় বন্ধ রাখা হয়েছে এবং রাতে জেলা আওয়ামী লীগের এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে দলের সকল ইউনিটের রাজনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ রাখার সিদ্বান্তের বিষয়টি জানানো হয়।  

আওয়ামী লীগের রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন,আমরা দু'পক্ষকেই শান্তি বজায় রাখার কঠোর নির্দেশনা দিয়েছি। যারাই সহিংসতা করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সাংগঠনিক কর্মকান্ড বন্ধ রাখার তিনি বলেন, করোনার মধ্যে দলীয় কার্যালয়ে কী কাজ? আমরা কেন্দ্রীয় কার্যালয়েই তো সীমিত পরিসরে কাজ করছি। এখন তো সভা সমাবেশ করার সময় নয়। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর সময়। সে জন্য তাদের দলীয় কার্যালয় বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।

এদিকে, বুধবার রাতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল লতিফ বিশ্বাস ও ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক ডা: হাবিবে মিল্লাত মুন্না এমপি স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আওয়ামী লীগের সকল ইউনিট এবং সহযোগী সংগঠনগুলোকে করোনাকালে জনসমাবেশ ঘটে এমন রাজননৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ রাখার সিদ্বান্তের বিষয়টি জানানো হয়। কোন জরুরি বা বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণের পূর্বে অবশ্যই তা দলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককের সাথে পরামর্শ করার জন্য বিজ্ঞপ্তিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।  

বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করে পুলিশ সুপার হাসিবুল আলম জানান, জেলার আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে বর্তমান উদ্ভুত পরিস্থিতির সমাধানকল্পে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের যৌথ আহবানে বুধবার এক জরুরি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে সাময়িকভাবে দলীয় কার্যক্রম সীমিত করার অনুরোধ করা হয়। এরপর তাদের মধ্যে একমত হয়েই কার্যক্রম সীমিত করার সিদ্ধান্ত নেন নেতারা।

জেলা প্রশাসক ফারুক আহাম্মদ বলেন, প্রশাসনিক নির্দেশেই আমাদের এমন উদ্যোগ নিতে হয়েছে। আমরা আওয়ামীলীগসহ সকল অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে সংযত হওয়ার আহবান জানিয়েছি।  
 
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আবু ইউসুফ সুযর্য বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রশাসনকে দিয়ে এটি বাস্তবায়ন করছেন। ১৯৭১ সালের পর জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় বন্ধের ঘটনা এটিই প্রথম। 

তিনি আরও বলেন, এর আগে দলের অভ্যন্তরে ৭/৮টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। যার বিচার না হওয়ায় ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক বিজয় হত্যার মতো ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে প্রশাসনকে দিয়ে কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। এতেই বোঝা যায় জেলা কমিটির ওপর কেন্দ্রের কোনো আস্থা নেই।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুন বিকেলে জাতীয় নেতা প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিমের স্মরণে ছাত্রলীগ আয়োজিত দোয়া মাহফিলে যোগ দিতে যাওয়ার পথে শহরের বাজার ষ্টেশন এলাকায় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ও কামারখন্দ সরকারী হাজী কোরপ আলী ডিগ্রি কলেজ শাখার সভাপতি এনামুল হক বিজয়কে মাথায় কুপিয়ে জখম করে প্রতিপক্ষ। ৯ দিন লাইভ সাপোর্টে থাকার পর ৫ জুলাই সকালে তার মৃত্যু হয়। এঘটনায় বড় ভাই রুবেল বাদী হয়ে ২৭ জুন জেলা ছাত্রলীগের ২ সাংগঠনিক সম্পাদকসহ সংগঠনের ৫ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। এঘটনার পর ২৮ জুন মামলার আসামী জেলা ছাত্রলীগের ২ সাংগঠনিক সম্পাদক আল-আমিন ও শিহাব আহমেদ জিহাদকে দল থেকে সাময়িক বহিস্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। 

এ অবস্থায় ৭ জুলাই এনামুল হক বিজয়ের স্মরণে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। সেখানে একপক্ষ হামলা চালালে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে উভয়পক্ষে অন্তত: ৪০জন নেতাকর্মী আহত হন। এঘটনায় ছাত্রলীগের সভাপতি আহসান হাবিব খোকা ও সাধারণ সম্পাদ আব্দুল্লাহ বিন আহম্মেদ বাদী হয়ে পাল্টাপাল্টি ২টি মামলা করেছে। মামলায় নামীয় ও অজ্ঞাত মিলে ২৮০ জনকে আসামী করা হয়। এসব মামলায় গত ২ দিনে ২৪জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
কেআই/