ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

‘কর্মহীনতায় তৈরি হতে পারে সামাজিক চ্যালেঞ্জ’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:০৮ পিএম, ১১ জুলাই ২০২০ শনিবার

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে কর্মহীন মানুষ শহর ছেড়ে যেভাবে গ্রামে চলে যাচ্ছে তাতে নতুন সামাজিক চ্যালেঞ্জ তৈরি হতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন সাউথ এশিয়ান ইকোনমিক মডেলিং- সানেম’র নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান।

শনিবার সানেম আয়োজিত নেটিজেন ফোরাম অষ্টম পর্বের ভার্চুয়াল আলোচনার মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, শহর থেকে গ্রামে এক ধরনের উল্টো অভিবাসন বা রিভার্স মাইগ্রেশন হচ্ছে। যে নিম্নআয়ের পরিবারগুলো গ্রামে ফিরে যাচ্ছে, সেখানে গিয়ে তারা কোনো কাজ নাও পেতে পারে এবং এতে করে নতুন সামাজিক চ্যালেঞ্জও তৈরি হতে পারে।

সরকারি বিশাল আকারের প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ বিতরণের গতি শ্লথ উল্লেখ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের অর্থায়নের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে একমাত্র অবলম্বন না ধরে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সক্রিয় করার প্রস্তাব করেন তিনি।

ব্যাংকিং খাতের নানা প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতার জন্য প্রণোদনা বিতরণ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। প্রণোদনা বিতরণ ও বাস্তবায়নে একটি মনিটরিং ব্যবস্থা দাঁড় করানোর ওপরও জোর দেন তিনি।

সেলিম রায়হান বাংলাদেশে চলমান মহামারী পরিস্থিতির সার্বিক অবস্থা এবং সংশ্লিষ্ট আর্থ-সামাজিক চ্যালেঞ্জগুলোর ওপরে একটি প্রেজেন্টেশন তুলে ধরেন।

সেখানে দেখানো হয়েছে, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা বাড়লেও পরীক্ষার সংখ্যা সেই অনুপাতে বাড়েনি। বিশেষজ্ঞদের মতে, দৈনিক কমপক্ষে বিশ হাজার পরীক্ষা করা উচিত। কিন্তু সমন্বয়হীনতা ও তথ্য-উপাত্তের অভাবে সেটি হচ্ছে না।

অন্যদিকে ঠিকমত লকডাউন বাস্তবায়ন না করায় মহামারী পরিস্থিতির ক্রমাবনতি ঘটছে। একইসঙ্গে পরীক্ষায় দুর্নীতি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। এ ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

বাংলাদেশের অর্থনীতির সংকট নিয়ে সেলিম রায়হান বলেন, নিম্নমুখী আমদানি বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।

রেমিট্যান্সের রেকর্ড প্রবাহ নিয়ে অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের মতামত তুলে ধরে তিনি বলেন, আশঙ্কা করা হচ্ছে যে বর্তমানে যে রেমিট্যান্স আসছে সেটি প্রবাসী শ্রমিকদের শেষ সঞ্চয়। প্রবাসী শ্রমিকদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের দেশে ফেরত আসার আশঙ্কা আরও বাড়ছে। বিশ্ব অর্থনীতির অবস্থারও উন্নতির কোনো সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে না।

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বা রিজার্ভ কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে, বছর কয়েক আগে প্রস্তাবিত সার্বভৌম বন্ডের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এটি একটি সম্ভাবনা হলেও এ ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে।

তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতির ফলে প্রকৃত আয় কমে গেছে। আত্মকর্মসংস্থানে নিয়োজিতদের পুঁজি শেষ হয়ে যাচ্ছে। উদ্যোক্তাদের বাজারে টিকে থাকাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য ক্রমাগত সুযোগও সংকুচিত হচ্ছে।

স্বাস্থ্য খাত, ব্যাংক খাত ও কর আদায়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানের কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, এবারের বাজেটে রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে সেটি অবাস্তব, অন্যদিকে কর আদায়ে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের উদ্যোগ নেই। রাতারাতি প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে ওঠা হয়তো সম্ভব নয়, কিন্তু অন্তত সঠিক দিকে পদক্ষেপ নেয়া দরকার।

সানেমের গবেষণা পরিচালক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সায়েমা হক বিদিশা বলেন, বেকার হয়ে যেসব মানুষ গ্রামে চলে যাচ্ছে তাদের সন্তানদের পড়াশুনা বিঘ্নিত হতে পারে। অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়তে পারে।

গ্রামীণ মজুরি কমে যেতে পারে। স্কুল থেকে ঝরে পড়ার হার বৃদ্ধি পেতে পারে, বাল্য বিবাহ বৃদ্ধি পেতে পারে, লিঙ্গ বৈষম্য আরো বেড়ে যেতে পারে।

তিনি বলেন, “এক্ষেত্রে মানবসম্পদের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব মোকাবেলায় গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণ ও গ্রামাঞ্চলে সুযোগ-সুবিধা বিস্তৃত করা দরকার। এটি কৃষি উদ্যোক্তাদের জন্য একটি ভালো সুযোগও হতে পার।

তবে যেহেতু ব্যাংকিং খাতের নাজুক অবস্থা ও নিম্নমুখী রপ্তানির জন্য বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ কমে গেছে, গ্রামাঞ্চলে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করা বেশ কঠিন। এক্ষেত্রে আইসিটি ডিভিশন স্থানীয় সরকারের সাথে মিলে গ্রামাঞ্চলে তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির চেষ্টা করতে পারে।

সানেমের রিসার্চ ইকোনমিস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক মাহতাব উদ্দিনও আলোচনায় অংশ নেন।

আরকে//