ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

ছাত্রলীগ নেতা নিহত: পাল্টাপাল্টি আরও দুই মামলায় আসামি ৩৫০

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১১:০১ এএম, ১২ জুলাই ২০২০ রবিবার

ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক বিজয়

ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক বিজয়

সিরাজগঞ্জে নিহত ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক বিজয় স্মরণে মিলাদ মাহফিলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় সদর থানায় পাল্টাপাল্টি আরও ২টি মামলা হয়েছে। মামলায় নামীয় ও অজ্ঞাত মিলে ৩৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ নিয়ে ওই সংঘর্ষের ঘটনায় মামলার সংখ্যা দাঁড়ালো ৪টিতে। 

এর আগে ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক পাল্টাপাল্টি ২টি মামলা করেছেন। যেখানে নামীয় ও অজ্ঞাত মিলে ২৮০ জনকে আসামি করা হয়। এছাড়াও এই সংঘর্ষের কারণে দলের মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়ায় আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির হস্তক্ষেপে গত বুধবার থেকে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় বন্ধ এবং সকল অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের দলীয় কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।   

সদর থানার ওসি হাফিজুর রহমান জানান, ‘শনিবার (১১ জুলাই) জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল হকের স্ত্রী মুক্তা খাতুন বাদী হয়ে তার স্বামীকে মারধরের অভিযোগে এনে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় ৭৫ জনের নাম উল্লেখ এবং ১০০/১৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। এর আগে সংঘর্ষে আহত গয়লার আহম্মেদ শেখের পক্ষে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রাশেদ খান গত ৯ জুলাই একটি মামলা দায়ের করেন। যেখানে ৮১ জনের নাম উল্লেখ এবং ৩০/৪০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। ’

তিনি বলেন, ‘ঘটনার পরই জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসান হাবিব খোকা এবং সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ বিন আহম্মেদ বাদী হয়ে পৃথক ২টি মামলা দায়ের করেন। মামলা দুটিতে নামীয় ও অজ্ঞাত মিলে ২৮০ জনকে আসামি করা হয়।’ 

ওসি আরও বলেন, ‘ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক বাদী হয়ে দায়ের করা মামলা দুটির তদন্ত করছেন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গোলাম মোস্তফা। মুক্তা খাতুন ও রাশেদ খানের দায়ের করা মামলা দুটির তদন্ত করছেন থানার পরিদর্শক (অপারেশন) নুরুল ইসলাম। এসব মামলায় গতকাল পর্যন্ত ২৫ জনকে গ্রেফতারের পর জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।’

জেলা যুব লীগের সদস্য মুক্তা খাতুনের দায়ের করা মামলার শীর্ষ পর্যায়ের আসামীরা হলেন, জেলা যুবলীগের সভাপতি রাশেদ ইউসুফ জুয়েল, জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারল সম্পাদক জিহাদ আল ইসলাম, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ বিন আহম্মেদ, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আসাদুজ্জামান সোহেল, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকিরুল ইসলাম লিমন, সদর উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের আহ্বায়ক মোয়াজ্জেম হোসেন মন্ডল, সদস্য মুলিবাড়ির হাজী মজনু, সয়দবাদ ইউপি সদস্য মুলিবাড়ির আব্দুল মোমিন, পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ শাহাদত হোসেন, যুবলীগ নেতা কল্যাণীর ফরিদ আহম্মেদ, দত্তবাড়ির মো. হোসেন, আবু মুসা ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক পীর সুমন প্রমুখ।  

অপরদিকে, সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রাশেদ খানের দায়ের করা মামলার শীর্ষ পর্যায়ের আসামিরা হলেন, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌরসভার প্যানেল মেয়র হেলাল উদ্দিন, তার ভাই সদর থানা আওয়ামী লীগের সদস্য বেলাল হোসেন, সংঘর্ষে আহত জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল হক, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসান হাবিব খোকা, সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসিম রেজা নুর দিপু, শহর যুবলীগের আহ্বায়ক এমদাদুল হক এমদাদ, ট্রাক মালিক গ্রুপের সভাপতি টি এম রিজভী. সাংগঠনিক সম্পাদক সোহাগ, জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদ জামিউর রহমান উল্লাস ও শহর ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল মতিন প্রমুখ।  

প্রসঙ্গত, গত ৭ জুন নিহত ছাত্রনেতা এনামুল হক বিজয় স্মরণে মিলাদ মাহফিলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে উভয়পক্ষে অন্তত ৪০ জন নেতাকর্মী আহত হয়। টানা দুই ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলাকালে উভয়গ্রুপে অন্যান্য সংগঠনের নেতাকর্মীরাও যুক্ত হন। 

এর আগে ২৬ জুন জাতীয় নেতা প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিমের স্মরণে ছাত্রলীগ আয়োজিত দোয়া মাহফিলে যোগ দিতে যাওয়ার পথে শহরের বাজার ষ্টেশন এলাকায় এনামুল হক বিজয়কে মাথায় কুপিয়ে জখম করে প্রতিপক্ষ। ৯ দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর ৫ জুলাই সকালে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় বড় ভাই রুবেল বাদী হয়ে ২৭ জুন জেলা ছাত্রলীগের ২ সাংগঠনিক সম্পাদকসহ সংগঠনের ৫ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। 

এ মামলায় বর্তমানে ৩ জন জেল হাজতে, একজন জামিনে এবং প্রধান আসামী পলাতক রয়েছে। ঘটনার পর ২৮ জুন মামলার আসামি জেলা ছাত্রলীগের ২ সাংগঠনিক সম্পাদক আল-আমিন ও শিহাব আহমেদ জিহাদকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। 

নিহত এনামুল জেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ও কামারখন্দ সরকারি হাজী কোরপ আলী ডিগ্রি কলেজ শাখার সভাপতি ছিলেন।  

এআই//এমবি