ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার উপায় জানাবে ওয়েবিনার সিরিজ 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৩৩ পিএম, ১৩ জুলাই ২০২০ সোমবার

যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস আয়োজিত ডার্ক ওয়েব ও ক্রিপ্টোকারেন্সি বিষয়ক ওয়েবিনার সিরিজ আন্তঃদেশীয় অপরাধ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার উপায়গুলো জানাবে। এই ওয়েবিনার সিরিজে অংশ নিয়ে প্রায় ৫০ জন বাংলাদেশী ফৌজদারি বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা এবং আর্থিক বিশ্লেষক আন্তঃদেশীয় অপরাধমূলক কার্যক্রমে ডার্ক ওয়েব ও ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রযুক্তির ব্যবহার ও ভূমিকা এবং এই ধরনের প্রযুক্তি শনাক্ত ও প্রতিরোধ করার উপায় সম্পর্কে জানবেন। 

গত সপ্তাহে  যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের ওভারসিজ প্রসিকিউটোরিয়াল ডেভেলপমেন্ট, অ্যাসিস্টেন্স এন্ড ট্রেনিং (OPDAT) "ক্রিমিনাল ইনফ্লুয়েন্স অন দি ডার্ক ওয়েব এন্ড ইন দি ইউজ অফ ক্রিপ্টোকারেন্সি" শীর্ষক তিন পর্বের একটি ওয়েবিনার সিরিজ উদ্বোধন করেছে। বাংলাদেশের প্রায় ৫০ জন প্রসিকিউটর, তদন্তকারী, বিচারক, আর্থিক বিশ্লেষক, এবং সরকারি কর্মকর্তা ইন্টারনেটের মাধ্যমে একটি অনলাইন প্লাটফর্মে যুক্ত হয়ে জানবেন কীভাবে অপরাধী সংস্থাগুলো ডার্ক ওয়েব ও ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাদক পাচার, অর্থ পাচার এবং অন্যান্য ভয়ংকর ধরনের বেআইনী কর্মকান্ড পরিচালনা করে থাকে। কোর্সের প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের ডার্ক ওয়েব ও ক্রিপ্টোকারেন্সি বিষয়ক ইন্টারন্যাশনাল কমপিউটার হ্যাকিং এন্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অ্যাটর্নি জন ঘোষ।     

যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার ওয়েবিনার সিরিজের উদ্বোধন করে সকল অংশগ্রহণকারীসহ কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় সাহসিকতার সাথে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করার জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন যে, "তাদের জন্য আমার শ্রদ্ধা, প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা, কারণ তারা খুব কঠিন ও বিপজ্জনক কাজ খুব ভালোভাবে করছে।" রাষ্ট্রদূত মিলার সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশের কাজের প্রশংসা করে আরো বলেন, "(বাংলাদেশ) বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণের মধ্য দিয়ে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী কার্যক্রম জোরদার করেছে — অর্থ পাচার রোধে শক্তিশালী ও কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে, দেশজুড়ে সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী ট্রাইবুনাল পরিচালনা করছে, এবং কমপিউটার ও ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে সংঘটিত সন্ত্রাসী কার্যক্রমের তদন্ত ও বিচারে ডিজিটাল প্রমাণাদির ব্যবহার বাড়িয়েছে," এবং তিনি বাংলাদেশের প্রচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। 

এই সিরিজের প্রথম অধিবেশন "কমব্যাটিং ক্রিমিনাল ডার্ক ওয়েব মার্কেটপ্লেসেস ডিউরিং দি কোভিড-১৯ প্যানডেমিক"-এ মহামারী থেকে তৈরি হওয়া উদ্বেগ ও উত্কণ্ঠাকে পুঁজি করে লাভবান হওয়ার জন্য অপরাধীরা কীভাবে বেনামী ব্রাউজার ও ইন্টারনেটের গোপন বিষয়াদির মাধ্যমে ডার্ক ওয়েব ব্যবহার করে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, অপরাধীরা ডার্ক ওয়েব ব্যবহার করে ভুয়া টেস্ট কিট, নিম্নমানের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম, নকল ভ্যাকসিন ও চিকিত্সার ওষুধ বিক্রি করে, এবং এমনকি করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডিসমৃদ্ধ রক্ত বিক্রির অভিযোগ পর্যন্ত পাওয়া গিয়েছে। অধিবেশনের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা এই ধরনের অত্যন্ত নিন্দনীয় বেআইনী কর্মকাণ্ড শনাক্ত করা ও বাঁধা দেওয়ার উপায়গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

সিরিজের দ্বিতীয় ও তৃতীয় অধিবেশনে ক্রিপ্টোকারেন্সির উপর আলোকপাত করা হবে। বাংলাদেশে ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার ও রাখা বেআইনী। অধিবেশনে ডার্ক ওয়েব মার্কেটপ্লেসগুলোতে কীভাবে ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে অর্থ প্রদান করা হয় সে বিষয়ে আলোচনা করা হবে। "ইন্ট্রোডাকশন টু ক্রিপ্টোকারেন্সি এন্ড ব্লকচেইন টেকনোলজি" শীর্ষক দ্বিতীয় অধিবেশনে ক্রিপ্টোকারেন্সি ও ব্লকচেইনের মৌলিক ধারণাগুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে। বাংলাদেশের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব শেখ গোলাম মাহবুব অধিবেশনটিতে উদ্বোধনী বক্তব্য দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

তৃতীয় অধিবেশন "অ্যাডভান্সড ক্রিপ্টোকারেন্সি — ট্রেসিং ক্রিপ্টোকারেন্সি টু মেক কেসেস"-এ কীভাবে ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে বেনামী লেনদেন শনাক্ত করার মধ্য দিয়ে অপরাধীকে খুঁজে বের করতে হয় সেই বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে। বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ)-এর প্রধান মি. আবু হেনা মোঃ রাজি হাসান অধিবেশনটিতে উদ্বোধনী বক্তব্য দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। 

এই অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদ ও আন্তঃদেশীয় অপরাধমূলক কার্যক্রম মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকারের সাথে যৌথভাবে অনেক ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তারই অংশ হিসেবে "ক্রিমিনাল ইনফ্লুয়েন্স অন দি ডার্ক ওয়েব এন্ড ইন দি ইউজ অফ ক্রিপ্টোকারেন্সি" শীর্ষক তিন পর্বের এই ওয়েবিনার সিরিজ পরিচালনা করা হচ্ছে।  সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন মোকাবেলা করার জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সি কী ও পরিচয় গোপন করে এর ব্যবহার করার সুবিধাগুলো এবং সন্ত্রাসী ও আন্তঃদেশীয় অপরাধী নেটওয়ার্ক কীভাবে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং তাদেরকে শনাক্ত করার মাধ্যমে ডার্কওয়েব ও ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রযুক্তির ব্যবহার প্রতিরোধ করার উপায়গুলো যুক্তরাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থার সাথে যুক্ত খাতগুলোর মতো বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার সাথে যুক্ত খাতগুলোরও জানা অত্যাবশ্যক।    

যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের ওভারসিজ প্রসিকিউটোরিয়াল ডেভেলপমেন্ট, অ্যাসিস্টেন্স এন্ড ট্রেনিং (OPDAT) আয়োজিত তিন পর্বের ওয়েবিনার সিরিজসহ বাংলাদেশকে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী কার্যক্রমে যুক্তরাষ্ট ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৬৩.৫ মিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা দিয়েছে।

আরকে//