সারাদেশে পানিবন্দী কয়েক লাখ মানুষ, খাদ্য সংকট চরমে (ভিডিও)
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০২:১৯ পিএম, ১৪ জুলাই ২০২০ মঙ্গলবার
উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলসহ সারা দেশে দ্বিতীয় দফা বন্যা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়েছে। বিশেষ করে রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও নেত্রকোণায় ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে বন্যা। উজানের পাহাড়ি ঢল আর ভারি বর্ষণে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এতে করে এসব জেলায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। মাথা গোজার ঠাই টুকুও বানের পানিতে ভেসে যাওয়ায় নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন হাজার হাজার মানুষ। ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে চরম খাদ্য সংকটের। না খেয়েও দিন পার করছেন অনেকে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, যমুনা, তিস্তা, ধরলা, সুরমাসহ সবগুলো নদ-নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ ও তলিয়ে গেছে রোপা আমনের বীজতলা। ঘরবাড়ি, নলকূপ ও ল্যাট্টিন তলিয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। এসব এলাকায় খাবার, বিশুদ্ধ পানির সংকট সবচেয়ে বেশি। মানুষের পাশাপাশি ভয়াবহ সংকট দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যেরও।
সুনামগঞ্জে দ্বিতীয় দফা বন্যা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। জেলার ১১টি উপজেলায় ৩৫২টি আশ্রয় কেন্দ্রে ২ হাজার ২৯৭টি পরিবারের ৯ হাজার ১৯৩ জন আশ্রয় নিয়েছেন। সদর বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুরসহ বিভিন্ন উপজেলা ও চারটি পৌরসভার ৯৮ হাজার ৯৫৬টি পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্গম হাওর এলাকাগুলোতে এখনও পৌঁছেনি পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী।
এদিকে, গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলাসহ প্রধান নদ-নদীর পানি ঘন্টায় ৫ সেন্টিমিটারের বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে দ্বিতীয় দফার বন্যায় জেলার ৯টি উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী রয়েছে।
আগামী ১৮ জুলাই পর্যন্ত বন্যার পানি বৃদ্ধি পাবে এবং জেলায় বন্যার আর অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বন্যা মোকাবেলার পর্যাপ্ত সহযোগিতার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
সিরাজগঞ্জে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা ভারি বর্ষণে দ্বিতীয় দফা বন্যায় যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে করে প্লাবিত এলাকায় দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে।
গত ২৪ ঘন্টায় ৩২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে আজ মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্তত সপ্তাহ খানেক আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র।
এদিকে, পানি বৃদ্ধির ফলে চৌহালী, শাহজাদপুর, বেলকুচি, কাজিপুর ও সদর উপজেলার চরাঞ্চলগুলোর নিচু এলাকার হাজারো ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় মানুষের মাঝে দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। দ্বিতীয় দফায় সংকটে পড়েছে বানভাসিরা।
অন্যদিকে, লালমনিরহাটে উজানে ভারত থেকে পাহাড়ি ঢলের পানি কিছুটা কম আসায় গেল ১২ ঘন্টায় কমেছে তিস্তা ও ধরলার পানি। আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে তিস্তার পানি লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও জেলা সদরের কাউনিয়া পয়েন্টে তা ১৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আর ধরলা নদীর পানি সদর উপজেলার শিমুলবাড়ী পয়েন্টে প্রবাহিত হচ্ছে বিপদসীমার ১৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে।
নদীর পানি কিছুটা কমলেও দুর্গত এলাকাগুলো থেকে এখনও বানের পানি নেমে যায়নি। তলিয়ে রয়েছে রাস্তাঘাট, ফসলের খেত, নলকুপ ও ল্যাট্রিন। বাড়িঘরে এখনও হাটু ও গলা পর্যন্ত বানের পানি রয়েছে। রান্নার অভাবে বানভাসিদের নির্ভর করতে হচ্ছে শুকনো খাবারের উপর।
সরকারিভাবে ত্রাণ সহায়তা কিছুটা দেয়া হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল হওয়ায় বানভাসিদের ঘরে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট রয়েছে। তিস্তার বুকে দুর্গম চর ও দ্বীপচর থেকে অনেক মানুষ বসতভিটা ছেড়ে বাড়িঘর নিয়ে ছুটছেন নিরাপদ স্থানে। তাদের মাঝে রয়েছে চরম কষ্টের আহাজারি।
গেল বছরগুলোতে বন্যার সময় স্বেচ্ছাসেবক ও ব্যক্তি উদ্যোগে শুকনো খাবার পৌঁছে দেয়া হতো বানভাসিদের ঘরে ঘরে। কিন্তু এ বছর করোনার কারণে তাদেরকে দেখা যাচ্ছে না বানভাসিদের পাশে। ফলে করোনা মহামারিতে দফায় দফায় বন্যা পরিস্থিতি নদীপাড়ের বানভাসিদের কাছে মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নেত্রকোণায় সোমেশ্বরী ও উব্দাখালী নদীর পানি কমছে। তবে এখনও কলমাকান্দা, বারহাট্টা ও দুর্গাপুরের ২০টি ইউনিয়নের ৭০ হাজার মানুষ পানিবন্দী রয়েছে। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ, তলিয়ে গেছে রোপা আমনের বীজতলা।
সিলেটের সব নদীর পানি বেড়ে কানাইঘাটে সুরমার ডাইক ভেঙ্গে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া, ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, ওসমানীনগর ও সিলেট সদরসহ বিভিন্ন এলাকার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।
হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে কালনী, কুশিয়ারাসহ বিভিন্ন নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। প্লাবিত হয়েছে উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের রাস্তাঘাটসহ নীচু এলাকার বাড়িঘর।
এআই//এমবি