ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে বরইতলি ঝর্ণা (ভিডিওসহ)

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৬:১৪ পিএম, ২০ জুলাই ২০২০ সোমবার | আপডেট: ০৭:২৯ পিএম, ২০ জুলাই ২০২০ সোমবার

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনুপম নিদর্শন ঝর্ণা বা জলপ্রপাত। নাগরিক জীবনের ব্যস্ততা ফেলে ঝর্ণা জলে ভিজতে কার না ভালো লাগে। রূপ লাবণ্যের বাংলাদেশে পাহাড়-নদী সবুজে শ্যামলে সৌন্দর্য হাতছানি দিয়ে ডাকছে ভ্রমণ পিপাসুদের। দরকার শুধু একটু সময়ের। মনকে দু'দণ্ড শান্তি দিতে ঘুরে আসতে পারেন অপরুপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি পার্বত্য জেলা বান্দরবান এর নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের বরইতলী ঝর্ণা থেকে। 

ঘুমধুম ইউনিয়নের বরইতলী গ্রামের ৫-৬ কিলোমিটার ভিতরে তিনটি প্রকৃতিক ঝর্ণা রয়েছে। সেই ঝর্ণার সুন্দর দৃশ্য না দেখলে বুঝা যাবেনা প্রকৃতির অপরুপ লীলাভুমি এত মনোমুগ্ধকর। প্রতি বছর সরকারি ছুটি দিনে শত শত পর্যটকের আগমন ঘটে এখানে যা চোখে পড়ার মতো।যার পরতে পরতে ছুঁয়ে আছে প্রকৃতির এক অনাবিল শান্তির পরশ। চারদিক পাহাড় আর সবুজ বেষ্টনির পাথানলে মনে হবে প্রকৃতি তার মনোমুগ্ধতা দিয়ে মুখরিত করে রেখেছে প্রকৃতিকে। প্রকৃতির নান্দনিক তুলিতে আঁকা সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হবে যেকোনো ভ্রমণপিয়াসী মানুষ। ঝুম ঝুম শব্দে বয়ে চলা ঝর্ণাধারায় গা ভিজিয়ে মানুষ যান্ত্রিক জীবনের অবসাদ থেকে নিজেকে ধুয়ে সজীব করে তুলছে ঝর্ণা ধারায়।

এই ঝর্ণা জলে ভিজতে এসএসসি ২০১২ সালের ব্যাচের ১৮-২০ জন বন্ধুসহ চলে যায় জলপ্রপাতের দর্শন পেতে। এই ঝর্ণাতে অন্তত চার-পাঁচটি স্তর রয়েছে। বিস্ময়কর এই ঝর্ণাটির আকার আকৃতি ও গঠনশৈলির দিক দিয়ে এটা নিঃসন্দেহে ভ্রমণ পিপাসুদের বাড়তি আনন্দ দেবে। বন্ধুরা মিলে বিহারের পাশ দিয়ে লেবু বাগানের দিকে হাঁটা শুরু করি।

ঝিরিপথ দিয়ে হাঁটার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়েছে আমাদের। তারপরও মোস্তাক আর মিম পা পিচ্ছিলে পড়ে যায়। জয়নালের পা কেটে যায়। ঝিরিপথের পানির উপর দিয়ে ২-৩ ঘণ্টা হাঁটার পর দুটি পৃথক স্থানে ও তিনটি একই স্থানে ঝর্ণা দেখতে পাই। একটি ঝর্ণা থেকে অপরটির দূরত্ব প্রায় ২০ মিনিট থেকে ৩০ মিনিট পর্যন্ত। এখানে রয়েছে তিনটি ঝর্ণা। বড় ঝর্ণার একেকটি দূরুত্ব ২০ থেকে ৩০ মিনিট। তিনটি বড় ঝর্ণার আশপাশে আরো তিনটি ছোট ঝর্ণা রয়েছে। চমৎকার দৃশ্য দেখে প্রাণ জুড়িয়ে যায়,সৃষ্টিকর্তার অপরূপ সৃষ্টি।

তবে অবশ্যই হাতে সময় নিয়ে যাওয়া ভালো। কারণ ঝর্ণা দেখে ফিরতে ফিরতে বেশ সময় লাগবে। সঙ্গে নিতে হবে খাবার। ফিরে আসার পথে ক্লান্ত হয়ে পড়বেন ঠিক তখন এই খাবার আপনাকে বাড়তি শক্তি যোগাবে। ছুটির দিনগুলোতে এখানে পর্যটকেরা সবুজের সমারোহ, পাহাড় আর ঝর্ণার অপরূপ মেলবন্ধন দেখতে ভিড় জমান। পাহাড়ের সবুজ রং আর ঝর্ণার স্বচ্ছ জল মিলেমিশে একাকার হয়েছে প্রাকৃতিক জলপ্রপাত বরইতলি ঝর্ণায়। প্রকৃতির নান্দনিক তুলিতে আঁকা এ ছবি দেখে মুগ্ধ হচ্ছে ভ্রমণপিয়াসী মানুষ।

কখন যাবেন
প্রাকৃতিক ঝর্ণার যৌবন হলো বর্ষাকালে। বর্ষাকালে প্রচন্ড গতিতে জলধারা গড়িয়ে পড়ে। শীতে তা কমে যেয়ে মাত্র একটি ঝর্ণাধারায় এসে ঠেকে। বর্ষাকালেই ঝর্ণার প্রাণ ফিরে পায়। তাই বর্ষাকালেই ঝর্ণা দর্শন ভালো দিক। তবে পাহাড়ধসের সতর্কতা বজায় রাখতে হবে। ভারী বর্ষণ হলে ঝিরিপথে পানির স্রোত বেশি থাকে। এতে করে যাওয়াটা অসম্ভব ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়।

কীভাবে যাবেন- 
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার মরিচ্যা স্টেশন থেকে পূর্বদিকে মরিচ্যা-পাতাবাড়ি হয়ে বরইতলী আঁকাবাঁকা রাস্তা দিয়ে সিএনজি/টমটম (ব্যাটারিচালিত গাড়ি) বরইতলী নামক স্থানে নামবেন। বাইক, নোহা ও মাঝারি বাস নিয়েও যাওয়া যাবে। স্টেশনের দক্ষিণ দিকের রাস্তায় হাঁটা শুরু করবেন। ১০ মিনিট হাঁটার পর একটা ব্রিজ পার হয়ে তার পূর্বদিকের বৌদ্ধমন্দির, ভাবনাকেন্দ্র বিহার। অবশ্যই বিহার পর্যন্ত সিএনজি ও বাইক নিয়ে যাওয়া সম্ভব।
 
যেসব সুবিধা পাবেন
একজন সাথে ট্যুর গাইড হিসেবে স্থানীয় (চাকমা) নিয়ে গেলে সুবিধা হয়। বরইতলী এলাকায় পর্যটকদের সাথে যাওয়ার জন্য অনেক চাকমা ছেলেরা অবস্থান করে। সকালে রওয়ানা দিতে হবে। ভাবনা কেন্দ্র থেকে সকাল ৯টা থেকে ১০টার দিকে হাঁটা শুরু করলে সুবিধা হয়। এসময় রওয়ানা দিলে ভালোমতো সবগুলো ঝর্ণা উপভোগ করে বিকালের মধ্যে ফিরে আসা যাবে। প্রয়োজনীয় ও চাহিদামত খাবার, পানি, লাঠি, ছুরি, কাপড় ও জুতো ইত্যাদি নিলে সুবিধা হবে। কারণ ওখানে দোকান নেই। সন্ধ্যার আগেই ওখান থেকে ফিরতে হবে।

সতর্কতা-
ঝর্ণায় যাওয়ার রাস্তা বেশ দুর্গম এবং পাথরের জায়গা পিচ্ছিল থাকতে পারে। তাই সতর্ক হয়ে পথ চলবেন। মারাত্মক কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ওই দুর্গম রাস্তা পাড়ি দিয়ে ফিরে আসা অনেক কঠিন হবে। তাই ট্র্যাকিং সহায়ক জুতা নিতে ভুলবেন না। তবে অবশ্যই পরিবেশ নোংরা করবেন না। সাথে নেয়া চিপস, পানির বোতল ইত্যাদি ফেলে আসবেন না।

বরইতলী সড়কে বিজিবির চেকপোস্ট থাকলেও ঝর্ণার চারপাশে দুর্গম এলাকায় নিরাপত্তার অভাব রয়েছে।  চারপাশে পাহাড় আর ঝিরিপথ। কোন ধরণের দুর্ঘটনা ঘটলে জানা সম্ভব নয়। মোবাইলের নের্টওয়াক নেই।

তবে এক্ষেত্রে সরকার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত আর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করল পর্যটকরা অবাধে ভ্রমণ করতে পারবে। পর্যটন শিল্পের ধার উন্মোচন হবে বলে স্থানীয়দের অভিমত। 
কেআই/

ভিডিওতে দেখুন-