ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বন্যায় ভেসে গেছে দোহার-নবাবগঞ্জের মৎস্য চাষিদের স্বপ্ন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৬:২৯ পিএম, ২৭ জুলাই ২০২০ সোমবার | আপডেট: ০৬:৩০ পিএম, ২৭ জুলাই ২০২০ সোমবার

কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি আর পদ্মা, ইছামতি ও কালীগঙ্গা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট বন্যার পানিতে ভেসে গেছে ঢাকার দোহার ও নবাবগঞ্জ এই দুই উপজেলার প্রায় ১১৫০টি পুকুরের মাছ ও মাছের পোনা ভেসে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন প্রায় ৯ শতাধিক মৎস্য চাষি। সব মিলিয়ে ক্ষতি হয়েছে আনুমানিক ৯ কোটি ২০ লাখ টাকা। অবকাঠামোগত ক্ষতিও হয়েছে অনেক পুকুরের।

করোনার এই মহামারিতে দুর্যোগ কাটিয়ে ওঠার আগেই আবার বন্যার পানিতে পুকুরের মাছ ও রেনু পোনা ভেসে যাওয়ায় এমন ক্ষতিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন দোহার ও নবাবগঞ্জের মৎস্যচাষিরা। বন্যায় ভেসে গেছে মৎস্য চাষিদের স্বপ্ন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দোহার উপজেলার রাইপাড়া, কুসুমহাটি, নয়াবাড়ি, মাহমুদপুর, বিলাসপুর, সুতারপাড়া, নারিশা ইউনিয়নে প্রায় পুকুর রয়েছে ৫৪০ টি। এর মধ্যে প্রায় ৪৫০টি পুকুর তলিয়ে গিয়ে প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকার মাছ ও রেনু পোনা ভেসে গেছে। এছাড়া নবাবগঞ্জ উপজেলার জয়কৃষ্ণপুর, বারুয়াখালী, শিকারীপাড়া, যন্ত্রাইলসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রায় ৭০০টি পুকুর  বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়েছে। এতে ক্ষতির পরিমান প্রায় ৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
  
জানা যায়, এই দুই উপজেলার মৎস্য চাষীদের মধ্যে অনেকেই ধার দেনা বা এনজিওদের কাছ থেকে ঋণ গ্রহন করে পুকুরে মাছ চাষ করেছিলেন। কিন্তু আকস্মিক ভাবে বন্যার পানিতে সব তলিয়ে যাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন এই সব মৎস্য চাষিরা। এরই মধ্যে এনজিও গুলো ঋণের কিস্তি আদায়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। অথচ সরকার থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত কিস্তি আদায়ে চাপ না দেওয়ার জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করে। কিন্তু এনজিওকর্মীরা সরকারের নির্দেশ তোয়াক্কা না করেই কিস্তির টাকা আদায়ের জন্য চাপ দেওয়া সমস্যা পড়েছে মৎস্য চাষিরা। 

দোহার উপজেলার রাইপাড়া ইউনিয়নের জামালচর গ্রামের দিলরুবা মৎস্য খামার ও খান মৎস্য খামারের মালিক ফিরোজ খান ও লিপন খান জানান, আমাদের দুই ভাইয়ের প্রায় ৮টি পুকুর ভেসে গিয়ে অন্তত ১৫ লাখ টাকার মাছ ও রেনু পোনা পানিতে ভেসে গেছে। আর হঠাৎ করে এবার বন্যা হওয়ায় আমাদের এত টাকার মাছ গুলো কোথাও বিক্রি বা অন্য  কোন পুকুর স্থানান্তরও করতে পারি নাই। এক রাতের মধ্যে আমাদের সব গুলো পুকুর ভেসে গেছে বন্যার পানিতে।

এছাড়া পানিতে পুকুর তলিয়ে যাওয়ায় দোহার উপজেলা যুবলীগের সদস্য ও মৎস্য খামারী মো. শাহীনের প্রায় ৫ লাখ, নরেশ রাজবংশী ২০ লাখ, ফজলু শেখের ১৫ লাখ এবং বানাঘাটা গ্রামের মো. মাসুদের ২০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তারা।

নবাবগঞ্জ উপজেলার ভাওয়ালিয়া গ্রামের মৎস্য চাষি নিপু ট্রেডার্সের মালিক অনুপম দও নিপু জানান, প্রায় ১২ একর জমিতে পুকুর খনন করে তিনি মাছের চাষ করেছে। বন্যার পানিতে আমার পুকুর তলিয়ে গিয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ১৫ থেকে ১৬ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। পানি বাড়লে ক্ষতির পরিমান দাঁড়াবে ২০ লাখ। 

দোহার উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোসাম্মৎ লুৎফর নাহার জানান, দোহার উপজেলায় প্রায় ৫৪০টি পুকুর রয়েছে। এর মধ্যে ৪৫০টি পুকুর তলিয়ে মাছ ও রেনু পোনা ভেসে যাওয়ায় মৎস্য চাষিদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ মৎস্য চাষিদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। খুব শীঘ্রই আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের তালিকা প্রেরণ করবো ।

অপরদিকে, নবাবগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রিয়াংকা সাহা জানান, নবাবগঞ্জ উপজেলায় অনন্ত ১২০০ পুকুর রয়েছে। এর মধ্যে ৭০০ পুকুর বন্যার পানিতে তলিয়ে কয়েক কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। আমরা আমাদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে ক্ষতিগ্রস্থ মৎস্যচাষিদের সার্বিকভাবে সহযোগিতার ব্যবস্থা করবো।
কেআই/