ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

কোরবানি কেনো?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:৪০ পিএম, ২৯ জুলাই ২০২০ বুধবার | আপডেট: ০১:০৫ পিএম, ৩০ জুলাই ২০২০ বৃহস্পতিবার

কোরবানি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এবং দিনের একটি নিদর্শন। যা সামর্থ্যবান মুসলমানদের জন্য অবশ্য পালনিয়। কোরবানি দেওয়ার মতো অর্থ বা সম্পদ থাকলে ইসলামে কোরবানি দেওয়া ওয়াজিব। ইসলামে কোরবানির বিধান তথা শরিয়ার মর্যাদা নিয়ে আলিমগণ দুটি মত ব্যক্ত করেছেন : 

১. ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মুহাম্মদ, ইমাম যুফার, রবিআহ, লাইস ইবন সাআদ, ইমাম আওযায়ী, সুফিয়ান ছাওরির মতে কোরবানি ওয়াজিব।

এ ব্যাপারে ইমাম মালিক ও ইমাম আবু ইউসুফের দুটি করে মত পাওয়া যায়, তার মধ্যে একটি মত অনুযায়ী কোরবানি ওয়াজিব। এটাকে হানাফি মাযহাবের সিদ্ধান্ত হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। তারা কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার পক্ষে যেসব দলিল পেশ করেন তার মধ্যে রয়েছে :

ক. মহান আল্লাহর বাণী, ‘তুমি তোমার রবের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করো ও কোরবানি দাও।’ [সুরা আল-কাওছার : ২] 

এ আয়াতের তাফসিরে এসেছে তুমি ঈদের নামাজ আদায় করো ও কোরবানি প্রদান করো। এখানে আল্লাহ আদেশসূচক শব্দ ব্যবহার করেছেন, যা সাধারণভাবে আবশ্যকতার হুকুম রাখে। আর রসুল (স)-এর জন্য আবশ্যক হলে তা উম্মতের জন্যও আবশ্যক।

খ. মহানবি (স)-এর বাণী, ‘সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি কোরবানি করে না সে যেন আমাদের সাথে ঈদগাহে না আসে।’ [ইবনু মাজাহ] 

হাদিসটিতে কোরবানি পরিত্যাগকারীদের বিরুদ্ধে কঠিন সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে, এ ধরনের সতর্কবার্তা সাধারণত ওয়াজিব পরিত্যাগকারীদের ব্যাপারেই দেওয়া হয়। 

গ. রাসুলুল্লাহ (স)-এর বাণী, ‘যে ব্যক্তি (ঈদের) নামাজের আগে কোরবানি করেছে সে যেন (নামাজের পরে) তার পরিবর্তে পুনরায় একটি ছাগি যবেহ করে, পক্ষান্তরে যারা এখনো যবেহ করেনি তারা যেন আল্লাহর নামে যবেহ করে।’ [সহিহ মুসলিম] 

এ হাদিস থেকেও কোরবানি ওয়াজিব হওয়া প্রমাণিত হয়।

২. ইমাম মালিকের অধিকতর নির্ভরযোগ্য মত, ইমাম আবু ইউসুফের দুটি অভিমতের একটি এবং শাফিয়ি ও হাম্বলি মাযহাবের সিদ্ধান্ত মতে, কোরবানি সুন্নতে মুআক্কাদাহ। হযরত আবু বকর, উমর, বিলাল, আবু মাসউদ রা. এবং তাবেয়িগণের মধ্যে সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব, আতা, আলকামা প্রমুখ এ মত পোষণ করতেন। তাদের দলিল :

ক. রসুলুল্লাহ (স)-এর বাণী, ‘যখন জিলহজ মাসের প্রথম দশক শুরু হবে এবং তোমাদের কেউ যদি কোরবানি করাতে চায় সে যেন তার চুল ও নখ না কাটে।’ [মুসলিম] 

এ হাদিসে ‘কোরবানি করাতে চায়’ দ্বারা প্রতীয়মান হয় কোরবানি করা বা না করার এখতিয়ার আছে, যদি এটা ওয়াজিব হতো তবে এ ধরনের এখতিয়ার থাকতো না। 

খ. ইমাম বায়হাকি বর্ণনা করেছেন, আবু বকর ও উমর রা. এক দুই বছর পরপর কোরবানি করতেন এই আশঙ্কায় যে অন্যরা এটাকে ওয়াজিব মনে না করে। 

কোরবানি নিয়ে মহাগ্রন্থ আল কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ছেলে যখন পিতার কাজকর্মে অংশগ্রহণ করার মতো বড় হলো, তখন ইব্রাহিম একদিন তাকে বলল, ‘হে আমার প্রিয় পুত্র! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, তোমাকে কোরবানি দিতে হবে। এখন বলো, এ ব্যাপারে তোমার মত কী? ইসমাইল জবাবে বলল, ‘হে আমার পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তা-ই করুন। ইনশাল্লাহ! (আল্লাহর ইচ্ছায়) আপনি আমাকে বিপদে ধৈর্যশীলদের একজন হিসেবেই পাবেন।’- সূরা সাফফাত

‘আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্যে কোরবানিকে ইবাদতের অংশ করেছি। যাতে জীবনোপকরণ হিসেবে যে গবাদি পশু তাদেরকে দেয়া হয়েছে, তা জবাই করার সময় তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে আর (সবসময় যেন মনে রাখে) একমাত্র আল্লাহই তাদের উপাস্য। অতএব তাঁর কাছেই পুরোপুরি সমর্পিত হও। আর সুসংবাদ দাও সমর্পিত বিনয়াবনতদের, আল্লাহর নাম নেয়া হলেই যাদের অন্তর কেঁপে ওঠে, যারা বিপদে ধৈর্যধারণ করে, নামাজ কায়েম করে আর আমার প্রদত্ত জীবনোপকরণ থেকে দান করে।’- সূরা হজ

‘কোরবানির পশুকে আল্লাহ তাঁর মহিমার প্রতীক করেছেন। তোমাদের জন্যে এতে রয়েছে বিপুল কল্যাণ। অতএব এগুলোকে সারিবদ্ধভাবে বাঁধা অবস্থায় এদের জবাই করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করো। এরপর এরা যখন জমিনে লুটিয়ে পড়ে, তখন তা থেকে (মাংস সংগ্রহ করে) তোমরা খাও এবং কেউ চাক না চাক সবাইকে খাওয়াও। এভাবেই আমি গবাদি পশুগুলোকে তোমাদের প্রয়োজনের অধীন করে দিয়েছি, যাতে তোমরা শুকরিয়া আদায় করো।’- সূরা হজ

‘(কিন্তু মনে রেখো) কোরবানির মাংস বা রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না, আল্লাহর কাছে পৌঁছায় শুধু তোমাদের নিষ্ঠাপূর্ণ আল্লাহ-সচেতনতা। এই লক্ষ্যেই কোরবানির পশুগুলোকে তোমাদের অধীন করে দেয়া হয়েছে। অতএব আল্লাহ তোমাদের সৎপথ প্রদর্শনের মাধ্যমে যে কল্যাণ দিয়েছেন, সেজন্যে তোমরা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করো। (হে নবী!) তুমি সৎকর্মশীলদের সুসংবাদ দাও যে, আল্লাহ বিশ্বাসীদের রক্ষা করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো বিশ্বাসঘাতক, অকৃতজ্ঞকে পছন্দ করেন না।’- সূরা হজ
এসএ/