ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

কবি বেলাল মোহাম্মদ এর সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকীতে বিনম্র শ্রদ্ধা

কাজী ইফতেখারুল আলম তারেক

প্রকাশিত : ১১:২৯ পিএম, ৩০ জুলাই ২০২০ বৃহস্পতিবার

ঋষি তুল্য মানব কবি বেলাল মোহাম্মদ এর সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। সুমহান মুক্তিযুদ্ধের  ইতিহাসের সাক্ষী ২০১৩ সালের এই দিনে রাজধানীর এ্যাপোলো হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভোর ৪টা ১০ মিনিটে  চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

বাঙালির ক্রান্তিকালে,ইতিহাসের বাঁক পরিবর্তনের সময় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ  মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যে জনযুদ্ব হয়েছিলো, ঠিক সময়ে তিনি প্রেরণার বাতিঘর হিসেবে তিনি জাতিকে মুক্তিযুদ্বের সঠিক তথ্য দিতে, মুক্তিকামী জনতাকে প্রেরণা দেয়ার লক্ষে "স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র" প্রতিষ্ঠা করেন। যিনি নিজেই একটি ইতিহাস ও ইতিহাসের উপাদান কবি বেলাল মোহাম্মদ ।

যুদ্বকালীন সময়ে এই বেতার কেন্দ্র ছিলো বাঙালির একমাএ আশ্রয় স্থল। জীবনবাজি রেখে তিনি বাঙালির অমূল্য ইতিহাসের ধারক বাহকের ভূমিকা পালন কররে গেছেন। বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে  হত্যার পরে তাকে দিয়ে  ভাবে মিথ্যা ইতিহাস লেখাতে চেয়েছে। তিনি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে কাজ করেছেন,আর তাই সত্যে অবিচল থেকে জাতিকে ঘোষণা বিতর্কের কলংক থেকে বাঁচিয়েছেন।

তিনি একাধারে কবি, পুঁথিপাঠক ও সুসাহিত্যিক ছিলেন। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৭৬টি। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অসমান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ ২০১০ সালে কবিকে  স্বাধীনতা পুরুষ্কারে ভূষিত করা হয়। পুরুষ্কারটি তিনি বাংলাদেশ বেতারকে দান করে গেছেন। এমনকি প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে "মুজফফর - লালমোহন ওয়ার্কসপ" করে গেছেন। দেরীতে হলেও তাঁর অবদানের প্রতি সুবিচার করা হয়েছে।

জাতির এই বীর কন্ঠসেনাপতি কে নিজ বাসভূম সন্দ্বীপে সম্মান জানাতে,ও সন্দ্বীপের তরুণ প্রজন্মের সামনে  মুক্তিযুদ্বের এই জীবন্ত কিংবদন্তী কবি বেলাল মোহাম্মদকে তুলে ধরতে সন্দ্বীপ ফ্রেন্ডস সার্কেল এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে  ২০১০ সালের ২০ নভেম্বর সন্দ্বীপ পাবলিক হাই স্কুলের অডিটোরিয়ামে নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে  "ফ্রেন্ডস সার্কেল এ্যাওয়ার্ড -২০১০ "আজীবন সম্মাননা  পুরুষ্কার প্রদান করা হয়। সংবর্ধনার জবাবে তিনি আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেছিলেন, আমি তরুণদের দলে যোগ দিলাম, আমি আপনাদেরই সন্তান। আপনাদের পাশে থাকব সব সময়। তিনি কথা রেখেছেন, মৃত্যু অবধি আমাদেরকে ভালোবাসা দিয়ে, উৎসাহ- অনুপ্রেরণা দিয়ে সংগঠনটির পাশে থেকেছেন। এরপর এই সংগঠনটি দিনে দিনে পত্র-পল্লবে বিকশিত হয়েছে।

এছাড়া তিনি আমার সম্পাদিত  'উওর ফাগ্লুনী' সাহিত্য ম্যাগাজিনের মোড়ক উন্মোচন করেন। সেদিনের সংবর্ধনায় বক্তব্যে কবি বেলাল মোহাম্মদ বলেছিলেন- "স্বাধীনতা ঘোষণা  আমি জীবন্ত সাক্ষী"।

মৃত্যু শয্যায় অবধি বেলাল ভাইয়ের পাশে থেকেছি।এখনো তার স্মৃতি ছবি ও কর্ম দেশ মাতৃকার প্রতি তার অবদানকে স্মরণ করি। চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণার জন্য তার দেহটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করে গেছেন।
তিনি আমার অন্তর মানস গড়ে দিয়েছিলেন। কবির মোহময় সান্নিধ্যে এসে তাঁর উন্নত জীবনবোধ,মানবতাবোধ সম্পর্কে সঠিক গভীর ধারণা পেয়েছি।

বেলাল মোহাম্মদ সর্ম্পকে বিশিষ্টজনরা বলেছেন, বেলাল মোহাম্মদ যা বিশ্বাস করতেন তার জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। তারা বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কোন শক্তিকে এ দেশে কোন দিন মাথাচারা দিয়ে উঠতে না দিলেই, তার প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানো হবে এবং তার আত্মা শান্তি পাবে।  

লেখক, সাংবাদিক ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রেরকর্মী কামাল লোহানী বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে তিনি ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন। তার হাতে গড়া এই বেতার কেন্দ্র সে সময় যে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে। এজন্য মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী প্রত্যেক মানুষ তাকে আজীবন মনে রাখবে। 

বিশিষ্ট অভিনেতা ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কর্মী সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, বেলাল মোহাম্মদ যা বিশ্বাস করতেন তার জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বাধীনতার ঘোষণা পাল্টে দেওয়ার জন্য তাকে যেমন প্রলোভন দেওয়া হয়েছিল, তেমনি চাপও প্রয়োগ করা হয়েছিল তার উপর। তিনি এতটাই দৃঢ়চেতা মানুষ ছিলেন যে, কোন প্রলোভন বা চাপ তাকে দমাতে পারেনি। অবশ্য এ জন্য তাকে বহু বছর বিদেশে থাকতে হয়েছে।

বেলাল মোহাম্মদ আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে এমন একটি প্রয়োজন উপাদান যাকে বিশ্লেষণ করলে ত্যাগ আর মানব প্রেমের সংজ্ঞা খুঁজে পাওয়া যাবে।মুক্তিযুদ্বের চেতনার উপর প্রতিক্রিয়াশীল জনগোষ্ঠী যখনি উঠে পরে লেগেছে ঠিক তখনি জাতির ক্রান্তিকালে তিনি কলম ধরে সদা পাহারা দিয়েছেন সঠিক ইতিহাস। এজন্য তাকে জোট সরকারের সময়ে দীর্ঘদিন নির্বাসনে জীবন কাটাতে হয়েছে। সত্য বলার অপরাধে তার একমাএ সন্তানকে হারাতে হয়েছে।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম এই সংগঠক ১৯৩৬ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার মুছাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মায়ের নাম মাহমুদা খানম ও বাবার নাম মৌলভী মোহাম্মদ ইয়াকুব। ছাত্র জীবন থেকে রাজনীতিতে জড়িয়ে  পড়েন। ছাত্র ইউনিয়নের চট্টগ্রাম কমিটির অন্যতম সদস্য হিসেবে ভাষা আন্দোলনসহ নানা আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। তিনি ১৯৬৪ সালে তিনি দৈনিক আজাদ পত্রিকার সাব-এডিটর হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।

আরকে/