ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

হাসান টুটুলের ২ কবিতা

-হাসান টুটুল

প্রকাশিত : ০৫:১৭ পিএম, ৫ আগস্ট ২০২০ বুধবার | আপডেট: ০৭:২৭ পিএম, ৫ আগস্ট ২০২০ বুধবার

হাসান টুটুল

হাসান টুটুল

১.            রোমন্থনের ভাঁজে 

সাতসকালে নোলক পরা নতুন প্রিয়া দেখতে নেই
পূর্ণিমা চাঁদ দেখবে বলে খোলা মাঠে থাকতে নেই।
নকশী কাঁথা বুণনগুলো সুতো খুলে দেখতে নেই।
কাষ্ঠকঠিন পিতার চোখে আদরের জল মাখতে নেই।

দুরন্ত সেই কিশোরীটার চুলের বেণী খুলতে নেই।
প্রথম প্রেমের সেই ব্যাথাটা এক জীবনে ভুলতে নেই।
কাঁটা ঘুড়ির সুতোর লাটাই আর যে ধরে টানতে নেই
মুখোশ পরা মানুষগুলোর কোন কথাই মানতে নেই।

শীতলক্ষ্যার কাব্যকথার নতুন মানে বুঝতে নেই
হারিয়ে যাওয়া কাছের মানুষ নতুন করে খুঁজতে নেই।
লড়াই করে বাঁচে যারা তাদের সঙ্গ ছাড়তে নেই
বানভাসি সব কচুরীপানা তাদের ছাঁয়া মাড়তে নেই।
ধসে পড়া খুঁটির সাথে নতুন বেড়া ঘিরতে নেই
যে পথটা পিছলে গেছে সে পথে আর ফিরতে নেই।
খেলা করা ঘাস ফড়িংটা কখনোই তা ধরতে নেই
জীবন থাকতে লড়তে হবে মরার আগে মরতে নেই।

সন্ধ্যাবেলায় ভোরের শিশির দুচোখ মেলে খুঁজতে নেই
সরে যাওয়া ছাঁয়ার ভাষা, আর নতুন করে বুঝতে নেই।
কদম ফুলের গন্ধ সুবাস বৈরি হাওয়ায় চাইতে নেই
জোনাক জলা নিশুত রাতে ডোবা জলায় নাইতে নেই।

অনেক দামে কেনা জিনিস হেলা ফেলা করতে নেই
মায়ের ভালোবাসার দামটা হিসেব নিকেশ করতে নেই।
সঙ্গে থাকা সঙ্গীগুলোর সম্পর্কটা মাপকাঠিতে মাপতে নেই
আধাঁর কালো ভয়ের মাঝে মোটেও ভয়ে কাঁপতে নেই।
সরল গরল সকল স্মৃতি কখনোই মনে পুষতে নেই
পড়ে যাওয়া স্বাধের লজেন্স তুলে আবার চুষতে নেই।
সত্য মিথ্যের ঝুলিগুলো একসাথে আর রাখতে নেই
সব মানুষের পাশে যেতে কোন কারণ থাকতে নেই।

২.                        ছুঁয়ে দেখ

ছুঁয়ে দেখ আমি রাতের পাখিদের কেমন জমায়েত করি
ছুঁয়ে দেখ আমি ততবার জিতি, যতবার তোমার কাছে হারি।

ছুঁয়ে দেখ আমি তোমার গুমোট মুখে কেমন ঝরায় হাসিগুলো
ছুঁয়ে দেখ আমি ইচ্ছে করে হয়ে যাবো সঠিক পথেও পথভুলো।
ছুঁয়ে দেখ আমি  সমুদ্র আনবো তোমাকে ভোরের মুখ ধোয়াতে
ছুঁয়ে দেখ আমি ফোটাবো মরা গাছে ফুল, তোমার ছোঁয়াতে।
ছুঁয়ে দেখ আমি আমার কষ্টগুলো কেমন বিকোয় সোনার দামে
ছুঁয়ে দেখ আমি বুকের খুশবু কেমন মিলিয়ে দিই তোমারই ঘামে।
ছুঁয়ে দেখ আমি কেমন করে হামাগুড়ি দিয়ে তোমার আঙ্গুল ধরে
ছুঁয়ে দেখ আমি তেমনই রয়ে যাবো লজ্জাবতীর মতো করে।
ছুঁয়ে দেখ আমি কবিতার চরণ হবো, হবো ছড়া ছন্দের মিল
ছুঁয়ে দেখ আমি চাইলেই ও খোঁপায় বাসা বাঁধবে দম্পতি চিল।
ছুঁয়ে দেখ আমি আমার দুনিয়াটা কীভাবে ভাগ করে ফেলি
ছুঁয়ে দেখ আমি কীভাবে তোমার মন্ত্রমুগ্ধেই ক্রমাগত চলি।
ছুঁয়ে দেখ আমি শেষ বিকেলের আগে কত দ্রুত চলে যাই
ছুঁয়ে দেখ আমি তুমি না চাইলেই আছি চাইলে কোত্থাও নাই।
ছুঁয়ে দেখ আমি শেষ পথের নিশানা নিয়ে আসি সবার আগে
ছুঁয়ে দেখ আমি সবটুকু ভালোলাগা রেখে দেব তোমার ভাগে।
ছুঁয়ে দেখ আমি আমার রক্তের স্রোত সুরে তোমার নামটি বাজাই।
ছুঁয়ে দেখ আমি তোমার জন্য আঁধারেই কেমন বাসর সাজাই।
ছুঁয়ে দেখ আমি ভবিতব্যকে দেখে সিংহকে কীভবে মারি থাবা
ছুঁয়ে দেখ আমি বাবুই হয়ে বানাবো ঘর সেখানে বিশ্রাম নিবা।
ছুঁয়ে দেখ আমি তোমার জমিনে লিখে দিতে পারি প্রতিদিনের গল্প
ছুঁয়ে দেখ আমি আমার জন্য তোমাকে নিয়ে ভাবি কতটা অল্প।
ছুঁয়ে দেখ আমি তোমার কাছে বয়স বাড়াবো আগে চলে যাবার জন্য
ছুঁয়ে দেখ আমি তোমার নিত্য অবেহলায় কেমন সুখাতুরে হই ধন্য।
ছুঁয়ে দেখ আমি নীলপদ্ম আনবো গুনে বিশ্ব খুঁজে দুইশত ষোলো
ছুঁয়ে দেখ আমি কবিতার ছন্দ ছেড়ে দেব, তুমি একবার যদি বলো। 

আরকে//