ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

‘বঙ্গমাতার আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:১৭ পিএম, ৮ আগস্ট ২০২০ শনিবার | আপডেট: ০৩:৩৪ পিএম, ৮ আগস্ট ২০২০ শনিবার

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দেশের মানুষের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না।’

আজ শনিবার (৮ আগস্ট) বঙ্গমাতার ৯০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ সঠিকভাবে ধারণ করেছিলেন আমার মা। দেশের জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে দিয়ে গিয়েছেন তিনি। রাজনৈতিক সহযোদ্ধা হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে সার্বক্ষণিক অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন বঙ্গমাতা। মা পরিবারকে দেখে রেখেছেন। এতে আমার বাবা দেশের জন্য কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গমাতা অসাধারণ বুদ্ধি, সাহস, মনোবল, সর্বসংহা ও দূরদর্শিতার অধিকারী ছিলেন এবং আমৃত্যু দেশ ও জাতি গঠনে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী হওয়া স্বত্ত্বেও আমার মায়ের কোনো অহমিকা ছিল না। ১৯৫৮ সালে মার্শল ল’ জারি হওয়ার পর আব্বা আলফা ইন্সুরেন্সে চাকরি করতেন। এই দু’বছর আমার মা সংসারের স্বাদ পেয়েছিলেন। কারণ তখন রাজনীতি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল।’

একাত্তরের ১৫ আগস্টের ঘটনা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যখন জাতির পিতাকে হত্যা করা হলো, তখন তিনি সেখানে যেতে চেয়েছিলেন। ঘাতকদের কাছে তিনি জীবন ভিক্ষা চাননি। কিন্তু সেখানেই তাকে হত্যা করা হয়।’

বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা সন্তানদের মাটির দিকে চেয়ে চলতে শিখিয়েছেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা শিক্ষা পেয়েছি বাবা-মায়ের কাছ থেকে মাটির দিকে তাকিয়ে চলার। অন্তত তোমার চেয়ে খারাপ অবস্থায় কে আছে তাকে দেখো। উপরের দিকে না, তোমার চেয়ে কে ভালো আছে সেটা তোমার চেয়ে খারাপ যারা আছে তাদের দিকে দেখো এবং সেটাই উপলব্ধি করো। কখনো নিজের দৈন্যতার কথা বলতেন না। কখনো কোন চাহিদা ছিল না। নিজে কোন দিন কিছু চাননি। সবসময় তিনি দিয়ে গেছেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গণভবনে বা সরকারি বাসভবনে থাকেননি। না থাকার কারণটা হচ্ছে তিনি বলতেন, আমার ছেলে-মেয়েকে নিয়ে সরকারি বাসভবন বা শানশওকতে থাকব না। তারা বিলাসী জীবনে অভ্যস্ত হোক সেটা আমি চাই না। বিলাসিতায় আমরা যেন গা না ভাসাই সেটার ব্যাপারে তিনি যথেষ্ট সচেতন ছিলেন। তিনি সবসময় আমাদের সেই শিক্ষাই দিয়েছেন।’

চাওয়া-পাওয়ার ঊর্ধ্বে উঠে বঙ্গমাতা নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন উল্লেখ করে দেশের নারীদের তাকে অনুসরণ করার আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধু-কন্যা।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী রওশন আক্তার। 

এ সময় বঙ্গমাতার কর্মময় জীবনের উপর একটি প্রামাণ্যচিত্র পরিবেশন করা হয়। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেগম মতিয়া চৌধুরী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি।

এ সময় ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে গোপালগঞ্জ প্রান্তে সংযুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে ১ হাজার ৩০০ সেলাই মেশিন, ১০০টি ল্যাপটপ ও ১৩ হাজার উপকারভোগীদের মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়।

এদিকে বেগম মুজিবের জন্মদিন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী এবং ভাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করছে। বনানী কবরস্থানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলো বঙ্গমাতা শহীদ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য অপর্ণ, কোরান খতম, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে।

উল্লেখ্য, ১৯৩০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে তিনি জাতির পিতার হত্যাকারীদের হাতে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে নির্মমভাবে নিহত হন।
এসএ/