ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

গর্ভবতী মায়ের মানসিক যত্ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:০৪ পিএম, ১০ আগস্ট ২০২০ সোমবার

নারীর জীবনে খুব গুরুত্বপূর্ণ সময় তার গর্ভবতী অবস্থা। এসময় নারী শারীরিকভাবে যেমন নানা প্রতিকূল অবস্থার মুখোমুখি হয় তেমনি মানসিকভাবে প্রায় বিপর্যস্ত থাকেন। কিন্তু আমাদের সমাজে গর্ভবতী মায়ের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কোন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। ফলে তা মায়ের মনে যেমন সুদূর প্রসারী ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে তেমনি সন্তানের জন্যও ক্ষতিকর।

গর্ভবতী মায়ের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য কেমন যত্ন নিবেন তা নিয়ে বলেছেন, সাইকোলজিস্ট, থেরাপিউটিক কাউন্সিলর ও অ্যাডিকশন প্রফেশনাল তন্বিতা ঘোষ। 

তিনি বলেন, ‘আগের দিনে দেখা যেত কোন মা যখন গর্ভধারণ করত তখন তাকে নিয়ে খুব আনন্দ করা হতো এবং কয়েকমাস গেলে তাকে তার বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হতো। অর্থাৎ বাবা-মা ভাই-বোনসহ কাছের মানুষগুলোর সান্নিধ্যে রেখে তার মনকে সবসময় খুশীতে রাখার চেষ্টা করা হতো। সন্তান প্রসবের কিছুদিন পর সে সন্তান নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে ফিরতো। কিন্তু বর্তমানে যৌথ পরিবারের সংখ্যা কমছে। এখন অধিকাংশ পরিবারই একক পরিবার। একটা মেয়ে যখন মা হন তখন তাকে অনেকগুলো সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। 

‘প্রথমত, তার শারীরিক কিছু কষ্ট থাকে। শরীরে কিছু ভাঙ্গা গড়া হতে থাকে। হরমোনাল কিছু পরিবর্তন আসে। অনেক কিছু না জানা না বুঝা দোদুল্যমানতা তার ভেতরে কাজ করে। এর সঙ্গে সঙ্গে তার ভেতরে কিছু বৈকল্য বা মানসিক অস্বাভাবিকতা কাজ করে। তখন সে কিছুটা আনন্দে থাকে, কিছুটা হতাশায় থাকে, একটা কষ্ট দীর্ঘ সময় নেওয়ার কারণে কিছুটা বিরক্তও থাকে। আমরা দেখি, মেয়েরা এ সময়টায় অনেক কিছু নিতে পারে না। অনেক কিছু শেয়ার করতে পারে না। এ সময় তারা খুব বেশি তার স্বামীকে কাছে পেতে চান বা তার কাছের মানুষকে আগলে ধরতে চান। কিন্তু বেশীরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় তারা সেই সুযোগ পান না। তখন তাদের মধ্যে বিষণ্ণতা তৈরি হতে থাকে।’

তন্বিতা ঘোষ বলেন, ‘আমরা দেখি, কর্মজীবী নারীদের তাদের গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে ছুটিটা সেভাবে নেওয়া হয় না। এই সময়টায় আমরা মাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই। সেটা হয়ে থাকে গাইনি ডাক্তার। অর্থাৎ গর্ভবতী নারীর শারীরিক স্বাস্থ্য, তার গর্ভস্থ সন্তান- এসব নিয়ে নিয়মিত একটা ফলোআপ পাওয়া যায়। কিন্তু তার মনের খবরটা রাখা হয় না।’

‘এসময় অনেক গর্ভবতী মায়ের ঘুমের সমস্যা হয়। বমির ভাব থাকে। খাওয়ার রুচি থাকে না। এই সব লক্ষণ মায়ের মানসিক কী কী সমস্যা হতে পারে তা নিয়ে খোঁজ নেওয়া জরুরি। কারণ, মায়ের মানসিক অবস্থার প্রভাব তার বাচ্চার ওপরও পড়ছে। যে সব মা গর্ভাবস্থায় অনিদ্রায় ভোগেন, দেখা যায় সে সব মায়ের সন্তান খুব অস্থির প্রকৃতির হয়। একটা নির্দিষ্ট সময় পর দেখা যায় বাচ্চা অনিদ্রায় ভুগছে। কখনো দেখা যায় বাচ্চা সারা রাত ঘুমায় না কিন্তু দিনে ঘুমায়। তাই সবার আগে মায়ের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘মায়ের গর্ভকালীন আমরা মায়ের খাওয়া, শারীরিক যত্নের দিকে খুব মনোযোগ দিয়ে থাকি। ঠিক তেমনিভাবে এখন জরুরি হয়ে গেছে মা কী পছন্দ করে, কী করলে তাকে হাসি খুশী রাখা যায় সে সব দিকে খেয়াল রাখা। তার পছন্দের মানুষ বা প্রিয় মানুষদের সান্নিধ্যে তাকে রাখা, ভালো সিনেমা দেখানো, ভালো বই পড়তে দেওয়া- এসব করা জরুরি। পাশাপাশি মা যেন এ সময় ভালো সৃজনশীল কিছু চিন্তা করে সেজন্য তাকে উৎসাহ দেওয়া যেতে পারে।’

‘আরেকটি বিষয় হলো, সন্তান গর্ভে থাকা অবস্থায় বাবা মা যা যা চিন্তা করেন, পরিকল্পনা করেন- তা তাদের সন্তানের উপর প্রভাব পড়ে। পরবর্তীতে সন্তানের জীবনে ও ভবিষ্যতে সেই প্রভাব পড়ে।’
এসএ/