ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

কুড়িগ্রামে বন্যায় ফসলের ক্ষতি ১৪০ কোটি টাকা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৫৭ পিএম, ১০ আগস্ট ২০২০ সোমবার | আপডেট: ১২:০৩ এএম, ১১ আগস্ট ২০২০ মঙ্গলবার

কুড়িগ্রামে বন্যার পানি নেমেছে প্রায় ৫ দিন হলো; কিন্তু বানভাসীদের কষ্ট কমেনি। অধিকাংশ বানভাসীরা ইতোমধ্যেই উঁচু বাঁধ ও স্কুল কলেজসহ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়িতে ফিরছেন।

১৬টি নদ-নদী বেষ্টিত এ জেলায় প্রতি বছরের ন্যায় এবারের বন্যায় কৃষকদের বিভিন্ন প্রকার ফসলি আবাদ বন্যার পানিতে তলিয়ে ১৪০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে লক্ষাধিক কৃষক পরিবার। বন্যায় ভেসে গেছে এ অঞ্চলের কৃষকদের স্বপ্ন।

এ বছর বন্যায় পানি বন্দি ছিলো জেলার ৯টি উপজেলার ৫৬টি ইউনিয়নের প্রায় ৪ লক্ষাধিক মানুষ। বন্যার কারণে বিভিন্ন ফসল পানির নিচে তলিয়ে। 

জেলা প্রশাসনের ত্রাণ ও পুণর্বাসন অফিস সুত্র জানায়, তিন দফা বন্যায় জেলার ৯ উপজেলার ৬২ হাজার ৮'শ পরিবারের ঘরবাড়ি ও অন্যান্য সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে নদীর তীরে বসবাসরত উঁচু বাঁধে থাকা ঘরবাড়ি ভেঙে যাওয়া পরিবারসহ চরাঞ্চলের বানভাসীদের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। 

জেলা প্রশাসক রেজাউল করিম জানান, এসব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামত বাবদ কিছু নগদ অর্থ ও ঢেউটিন পাওয়া গেছে। এগুলো অতি দ্রুত ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বন্টণ করা হবে। 

তিনি আরও বলেন, জেলার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষকরা। পরপর কয়েক দফা বন্যা হওয়ায় এখানকার সবকটি উপজেলার অনেক ফসলী জমি পানিতে ডুবে ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষি বিভাগ তালিকা প্রস্তুত করেছে কৃষকদেরও সহায়তার সর্বোচ্চ আশ্বাস জেলা প্রশাসকের। এদিকে,বানভাসীদের অনেকের তিনদফা বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে কৃষি ও মৎসে। নদী তীরের চাষীদের যারা বিভিন্ন সবজি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন তারা এখন জানেন না কিভাবে এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠবেন। 

সদর উপজেলার ধরলা পাড়ের কৃষক মমিন মিয়া জানান,আমি অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি এই কয়েক দফা বন্যায়।পটল,ঝিঙে,লাউ,বরবটি,মরিচ,বেগুনসহ নানা সবজি আমি জমিতে চাষ করেছিলাম। প্রথম বন্যায় কিছুটা বিক্রি করতে পারলেও পরের দুটি বন্যায় সব শেষ। আমি এখন পথের ফকির। কি করব তা জানিনা।

অপর কৃষক আসমত আলী জানান,গত দুদিন যাবত নষ্ট হয়ে যাওয়া সবজি খেত পরিস্কার করছি। দেখি পরে কি চাষ করতে পারি। শুনছি সরকার নাকি সুবিধা দেবে। আমন বীজতলা নষ্ট হয়ে এখন চোখে সরষে ফুল দেখছেন একই এলাকার কৃষক রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন,জমিতে পলি পড়ছে আমন আবাদ ভালো হবে। কিন্তু বীজ পামু কই।টাইমও এখন কম।

সরকারি হিসেব অনুযায়ী জেলার কৃষি বিভাগের উপপরিচালক ড.মুস্তাফিজুর রহমান প্রধান জানান, তিনদফা বন্যায় ১৮ হাজার হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত হয়। দীর্ঘ সময় পানিতে তলিয়ে থাকায় প্রায় ১১ হাজার ৬৬২ হেক্টর জমির আউশ ধান,আমন চারা,পাট,শাকসবজি ও ভূট্টা খেত সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। জেলার ৯ উপজেলার লক্ষাধিক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। 

তিনি বলেন,আমরা কৃষি পুনর্বাসনে  ইতোমধ্যেই ১০৫টি কমিউনিটি বীজতলা ও ১০০টি ভাসমান বীজতলা প্রস্তুত করেছি যা ইউনিয়ন পর্যায়ে একটি থেকেই ৬৬ জন কৃষককে চারা দেয়া যাবে। এছাড়াও তিনি ইতোমধ্যেই করোনাকালে ও বন্যায় দুই দফা ৫হাজার কৃষককে ডালের বীজ প্রদান করেন বলে জানান। সেইসাথে কয়েক দিনের মধ্যে ২১ হাজার কৃষককে সবজি বীজ প্রদান করে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সহায়তা করবেন বলে জানান উপ-পরিচালক। 
কেআই//