ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

চার দেয়ালের মাঝে হাঁপিয়ে উঠেছে শিশুরা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:৪৭ পিএম, ১১ আগস্ট ২০২০ মঙ্গলবার | আপডেট: ০১:০৪ এএম, ১২ আগস্ট ২০২০ বুধবার

“এখন বিকেলে আর শিশুরা মাঠে আসে না, খেলাধুলা বন্ধ। শিশুদের অস্থির পদচারনা নেই বলে মাঠের ঘাসগুলো ঘন সবুজ হয়ে উঠেছে। আগে প্রতিদিন ছেলে মেয়েরা মাঠে আসতো, খেলাধুলা  করতো, চিৎকার-চ্যাঁচামেচি করতো,আনন্দ করতো আর এখন সব ফাঁকা। এখন বাসার বেলকুনি থেকে মাঠের দিকে ঠিকই তাকিয়ে থাকে শিশুরা। চারদিকে চাপা আতঙ্ক। করোনাভাইরাস শিশুদের সব আনন্দ নষ্ট করে দিয়েছে ”এমনটিই বলছিলেন সাভারের  আশুলিয়া বসুন্ধরা আবাসিক  এলাকার একটি মাঠের দায়িত্বে থাকা কর্মচারি মো. খলিল মিয়া।   

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকেই ঘরবন্দী জীবনযাপন করছে শিশুরা। বাড়ির বড়দের বিভিন্ন কাজের প্রয়োজনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাহিরে যাওয়ার সুযোগ থাকলেও ছোটদের বেলায় তা একেবারেই নেই বললেই চলে।

ঘরে থেকে কিভাবে সময় কাটছে জানতে চাইলে প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাহসিন মাহজাবিন প্রিয়ন্তী বলেন, “বাহিরে যেতে মন চায়, বন্ধুদের সাথে খেলতে চাই। বাসায় শুধু পারিশার ( ছোট বোন ) সাথেই খেলতে পারি ,কিন্তু বন্ধু দের সাথে খেলতে পারিনা। বাসায় থাকতে ভালো লাগে না।”  

শিশুদের ঘরবন্দী জীবনে পরিবারের অন্য সদস্যরা কি ভূমিকা রাখছে?এ অবস্থায় শিশুদের আচরণে বিশেষ কোনো পরিবর্তন এসেছে কিনা এবিষয়ে জানতে একজন অভিভাবক মাহফুজা ইয়াসমিনের সাথে কথা বললে তিনি বলেন,“করোনার কারণে শিশুরা বাহিরে যেতে পারছে না। ঘরবন্দী থাকতে থাকতে ওরাও হাঁপিয়ে উঠেছে। সারাক্ষণ বাহিরে যাওয়ার বায়না করে। কিন্তু এখন তো সেটা সম্ভব নয় তাই ওদের মন ভালো করতে খেলাধুলা করার জন্য বাসার ছাদে নিয়ে যায়।

এছাড়া বাসাতেই ওদের প্রচুর সময় দিচ্ছি আমরা, একসাথে গল্প করছি, খেলায় সঙ্গ দিচ্ছি, নাচ,গান, অঙ্কন করতে উৎসাহিত করছি, এমনকি ওদের সাথে বসেই সবাই মিলে ছোটদের জন্য নির্মিত বিভিন্ন মুভি দেখছি, সেই সাথে অনেক কিছু রান্না করে খাওয়াচ্ছি।  তারপরেও বুঝতে পারি এত কিছুর পরেও ওদের মন পড়ে থাকে বন্ধুদের সাথে খেলার মাঠে।”

দীর্ঘদিন ঘরবন্দী থাকলে কি ধরণের প্রভাব শিশুদের উপর পড়তে পারে? এমন প্রশ্নের উত্তরে  গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান ও সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক তাহমিনা সুলতানা বলেন, “এসময় শিশুরা বাহিরে যেতে না পারায় একাকিত্বে ভুগছে। যা তাদের আচরণে নানাভাবে প্রকাশ পাচ্ছে। তারা অহেতুক জেদ করছে, কান্নাকাটি করছে, মেজাজ খিটমিটে হয়ে যাচ্ছে। প্রায় সারাদিন টেলিভিশন কার্টুন অথবা মোবাইলে গেইম খেলে সময় কাটছে যা তাদের স্বাভাবিক বুদ্ধি বিকাশে বাঁধা সৃষ্টি করছে। আবার চারপাশের করোনা ভীতি তাদের মধ্যে ট্রমা সৃষ্টি করছে। 

এসময়ে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপরে আমাদের বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। তারা যেন করোনা নিয়ে অহেতুক ভয় না পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সেই সাথে স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। তাদের বেশি বেশি সময় দিতে হবে। তাদের একাকিত্ব ও মানসিক চাপ নিরাময়ে তাদের সাথে গল্প বলা,খেলা করা, ছবি আঁকা অথবা তাদের পছন্দ অনুযায়ী গল্পের বই পড়ে শোনানো যেতে পারে। পাশাপাশি তাদের পড়ালেখার দিকেও খেয়াল রাখা যেত পারে। দুঃসময়ের ঘনঘটা পেরিয়ে আবার খেলার মাঠ ভরে যাবে শিশুদের দুরন্তপনায়, এখন সেই প্রত্যাশায় সকলের।
কেআই//