ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক প্রতিষ্ঠায় মানা হচ্ছেনা সরকারি আইন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:১০ পিএম, ১১ আগস্ট ২০২০ মঙ্গলবার | আপডেট: ০২:০৪ এএম, ১২ আগস্ট ২০২০ বুধবার

ভান্ডারিয়া উপজেলা সাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশে সেই ডায়গনস্টিক সেন্টার।

ভান্ডারিয়া উপজেলা সাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশে সেই ডায়গনস্টিক সেন্টার।

রাজধানীসহ দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সরকারি হাসপাতালের সামনে ও আশপাশে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। আইন অনুযায়ী, সরকারি হাসপাতালের এক কিলোমিটার বা কিছুক্ষেত্রে আধা কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে বেসরকারি ক্লিনিক, ডায়গনস্টিক সেন্টার স্থাপন করা যাবে না। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে আইন তো মানা হচ্ছেই না, উল্টো এসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত বেতনভুক্ত দালালরা সরকারি হাসপাতালের রোগীদের নিচ্ছে ভাগিয়ে।

সরকারি হাসপাতালের এক শ্রেণির ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ড বয় ও আয়ারাও রোগী ভাগিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে পাচ্ছেন নির্ধারিত কমিশন।

তেমনি পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলা সাস্থ্য কমপ্লেক্সের দেয়াল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে লাবন্য ডায়গনস্টিক সেন্টার। প্রশাসনের নাকের ডগায় বছরের পর বছর চলছে এর রমরমা বাণিজ্য। সরজমিনে দেখা গেছে, সরকারি আইনের তোয়াক্কা না করেই সরকারি হাসপাতালের সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে তৈরি করা হয়েছে ডায়গনস্টিক সেন্টারটি।

এ বিষয়ে উপজেলা সাস্থ্য কমপ্লেক্সের পঃ পঃ ডাক্তার শেখ কামাল হোসেন জানান, তিনি এখানে সম্প্রতি যোগদান করেছেন। আর এটা যেহেতু অনেক আগেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাই এ বিষয়ে বিস্তারিত তার জানা নেই বলে জানান।

তবে করণীয় প্রসঙ্গে এই চিকিৎসক বলেন, এ বিষয়ে আমরা আগামী শনিবার একটা প্রতিবেদন দাখিল করবো। পরবর্তীতে জেলা সিভিল সার্জন এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন। তিনি আরও বলেন, আসলে বিষয়টা যেহেতু সরকারি, তাই সরকারিভাবেই এর বিহিত হবে বলে আমি আশা করি। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, একশ্রেণির দালাল ও সরকারি হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে সিন্ডিকেট করেই এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন। কোনো কোনো হাসপাতালে ডাক্তার-নার্স নেই। আবার গাইনি বিশেষজ্ঞ না থাকলেও অন্য ডাক্তার দিয়ে সিজার করানো হচ্ছে। এ কারণে তৃণমূলে ৫০ শতাংশ সিজার হচ্ছে ত্রুটিপূর্ণ। এসব ত্রুটিপূর্ণ সিজারের কারণে মা ও শিশু উভয়ের জীবন পরবর্তী সময়ে বিপন্ন হয়ে পড়ে। বেঁচে থাকলেও স্বাভাবিক জীবনে তাদের ফিরে আসার সম্ভবনা কম বলে গাইনি বিশেষজ্ঞরা জানান। সম্প্রতি একটি গবেষণায়ও এসব তথ্য বেরিয়ে আসে। টাকার ভাগ পায় সিভিল সার্জন অফিস, বিভাগীয় পরিচালকের কার্যালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক শ্রেণির কর্মকর্তা।

বিভিন্ন সময় র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত এসব হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ভুয়া ডাক্তারের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়, আটক করে জেলে পাঠায় এবং জরিমানার দণ্ডও জারি করে। অভিযুক্ত ক্লিনিকগুলো সিলগালাও করে দেওয়া হয়। কিন্তু নানা কৌশলে প্রতিষ্ঠানগুলো সচলই থাকে। মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সমন্বয়ে একটি ভিজিলেন্স টিম আছে। তারাও এ ব্যাপারে দেখভাল করে না।

এদিকে, রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত সোহরাওয়ার্দী, কিডনি, পঙ্গু, হূদরোগ, চক্ষু, নিউরোসায়েন্স ও শিশু হাসপাতালকে কেন্দ্র করে মোহাম্মদপুরের বাবর রোড ও এর আশপাশের অলিগলিতে গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। সড়কের দুই পাশে শুধু হাসপাতাল আর হাসপাতাল। আধা কিলোমিটার রাস্তায় সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৬০টি হাসপাতাল। শত শত রোগী আর দালালে গিজগিজ করে ওইসব এলাকা। এসব সরকারি হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীদের দিকে দৃষ্টি থাকে ওই এলাকার বেসরকারি হাসপাতালগুলোর।এজন্য নিয়োগ করা হয়েছে দালাল। রোগী ধরার ফাঁদ পেতে বসে থাকে দালালরা।

ওই এলাকার বেসরকারি হাসপাতালগুলোর নিজস্ব মার্কেটিং প্রতিনিধি আছে যারা বেতন হিসেবে আবার কমিশন হিসেবে কাজ করেন। দালাল চক্র সকাল থেকেই সরকারি হাসপাতালে শুরু করে জটলা। চলে গভীর রাত পর্যন্ত। এক-দুই জন নয়, কয়েকশ প্রতিনিধি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মিডফোর্ট হাসপাতাল, মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতাল ও ক্যানসার হাসপাতালের আশপাশের পরিস্থিতিও একই। ওইসব এলাকায়ও রয়েছে বেশ কিছু সংখ্যক বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার।

দালালরা রোগী ভাগানোর প্রতিনিধি নামে পরিচিত। রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু করেন তারা। লোভনীয় অফার আর হয়রানি। চলে টানাহ্যাঁচড়াও। অসহায় রোগী আর তাদের অভিভাবকরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাদের ফাঁদে আটকা পড়েন। হাসপাতালে ভর্তি করার পর শুরু হয় অন্যরকম হালচাল। টাকা আদায়ের যত কলা-কৌশল, চিকিৎসার বালাই নাই। উল্টো আদায় করা হয় বিভিন্ন অজুহাতে বড় অঙ্কের টাকা। আর এই চিকিৎসা সেবার ভার বহন করতে গিয়ে অনেকেই হারিয়েছেন মূল্যবান অনেক কিছু।

এনএস/