ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

রোগীর সঙ্গে কথা বলতে বলতেই মস্তিষ্কে জটিল অস্ত্রোপচার!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:৩৯ এএম, ১২ আগস্ট ২০২০ বুধবার

যে কোন ধরনের চিকিৎসার জন্য অনেকেই ভারত সফর করে থাকেন। দক্ষ চিকিৎসক আর সঠিক যন্ত্রপাতির মেলবন্ধন হলে শুধু ভারতের কলকাতাই নয়, অসাধ্য সাধন করতে পারে পশ্চিমবঙ্গের ছোটখাটো হাসপাতালও। এবার এমনই এক বিরল পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করল বর্ধমানের একটি বেসরকারি হাসপাতাল। 

ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, এক নতুন পদ্ধতিতে পুরো অজ্ঞান না করেই করা হয়েছে মস্তিস্কে অস্ত্রোপচার। যেখানে রোগীর বয়স প্রায় সত্তরের কাছাকাছি। পুরো অজ্ঞান করার ক্ষেত্রে তাই একটা ঝুঁকি থেকেই যায়। সেইসঙ্গে চিকিৎসায় যে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে সেটাই স্থানীয় জেলাস্তরে প্রয়োগ করা হলো এই প্রথম।

জানা যায়, পূর্ব বর্ধমানের গলসির মনোহর সুজাপুর গ্রামের বৃদ্ধ বদরে আলম পড়ে গিয়ে কিছুটা আহত হন। আঘাত লাগে তার মাথায়। চিকিৎসকরা মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করার কথা বলেন। কিন্তু চলমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে সাধারণ চিকিৎসাই যেখানে বড় একটা সমস্যা। সেই অবস্থায় বেশ চিন্তায় পড়েন রোগী ও তার পরিজনেরা। আর তখনই এগিয়ে আসেন ওই বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা।

রোগীর প্রাথমিক পরীক্ষার পর তাকে অপারেশনের জন্য তৈরি করা হয়। তবে সবচেয়ে মজার ও অবাক করা বিষয় হলো- রোগীকে অজ্ঞান না করেই পুরো অস্ত্রোপচারের প্রক্রিয়াটা সম্পন্ন করা হয়। যেখানে সত্তরোর্ধ ওই রোগীর মনোবলও ছিল তারিফ করার মতো। মস্তিষ্কের অস্ত্রোপচার সাধারণত এইভাবে করা হয় না। 

কিন্তু এই পদ্ধতি কেন গ্রহণ করা হলো? জবাবে চিকিৎসক জি পি গর্গ জানান, মস্তিষ্কের অপারেশন খুবই জটিল কাজ। শরীরের সমস্ত স্নায়ুর সরাসরি যোগাযোগ মস্তিষ্কের সাথেই। সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলে রোগী অনেক সময় আংশিক বা পুরো পক্ষাঘাতগ্রস্থ (প্যারালাইসড) হয়ে পড়ে। দৃষ্টি ক্ষীণ হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। শ্রবণক্ষমতাও কমে যায় অনেক ক্ষেত্রে। তবে এই পদ্ধতিতে ওই ঝুঁকিগুলো খুব কম।

তিনি আরও বলেন, মাথার যেখানে অস্ত্রোপচার হবে সেই স্থানে লোকাল অ্যানেস্থেসিয়া করা হয়। যে কারণে গোটা শরীরের বাকি অংশে হুঁশ বা জ্ঞান ছিল রোগীর। এই অস্ত্রোপচার পুরোটাই ভিডিও করেও রাখা হয়। জ্ঞান থাকা অবস্থায় অস্ত্রোপচার করার সময় রোগীর সঙ্গে কথা বলতে থাকেন চিকিৎসকরা। কখনও হাত নাড়তে বলেন, কখনওবা নাম জিজ্ঞেস করেন। এর মধ্যে দিয়েই চিকিৎসকরা বুঝে নিয়েছেন রোগীর সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গের নড়াচড়া স্বাভাবিক। রোগী ভালো আছেন। 

যদিও বর্ধমানের মতো একটা জেলা পর্যায়ে এই প্রথম এতবড় ঝুঁকি নিয়ে চিন্তায় ছিলেন চিকিৎসকরা। তবে পরীক্ষায় সফল হয়ে চিকিৎসকদের দাবি, মফঃস্বলে এইরকম আধুনিক ভাবনার প্রয়োগ অবশ্যই উল্লেখ করার মতো একটা ঘটনা।

এনএস/