ঢাকা, বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১০ ১৪৩১

কোভিড-১৯ : নর্দান ইউনিভার্সিটির কার্যক্রমে নতুনমাত্রা

প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন

প্রকাশিত : ১০:০৬ পিএম, ১২ আগস্ট ২০২০ বুধবার | আপডেট: ১০:০৭ পিএম, ১২ আগস্ট ২০২০ বুধবার

প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন

প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন

কোভিড-১৯ প্রায় সমস্ত সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, একাডেমিক এবং ধর্মীয় উপাসনা বন্ধ করে দিয়ে জীবন ও জীবনযাত্রার স্বাভাবিক প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। বাজার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সবই বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

এ পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় সাহসিকতার সাথে তাদের একাডেমিক এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম অনলাইনে চালাতে এগিয়ে আসে। নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ তাদের মধ্যে শীর্ষে ছিল। 

ইতিপূর্বে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি এবং মালয়েশিয়ার একটি অনুষদের সাথে দু’টি এমবিএ কোর্স অনলাইনে পরিচালনার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিল নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীরা এই দু’টি কোর্সের অত্যন্ত প্রশংসা করেছিল। এই অভিজ্ঞতায় এবং এনইউবি ট্রাস্টের চেয়াররম্যান প্রফেসর ড. এ.ওয়াই.এম আবদুল্লাহর স্বপ্নদর্শী উদ্যোগে উৎসাহিত হয়ে আমরা আমাদের সমস্ত বিভাগের জন্য অনলাইন কোর্স চালু করেছি। সে অনুযায়ী ক্লাস রুটিন ঢেলে সাজানো হয় এবং শিক্ষার্থীদেরকে অনলাইনে ক্লাসে উপস্থিত থাকতে বলা হয়।

লকডাউন চলাকালীন বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ঘরে অলস অবস্থায় বসে থাকায় তারা এই পদক্ষেপকে সুস্বাগত জানায়। তবে তারা প্রত্যন্ত গ্রামের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার কারণে ইন্টারনেটের অপর্যাপ্ততা এবং ব্যবহার বান্ধব সঠিক ইলেকট্রনিক ডিভাইসের অভাবে তাদের সমস্যা আমাদের সাথে শেয়ার করে। 

যাই হোক, শিক্ষকরা তাদেরকে অনলাইন ক্লাসে আসতে রাজি করান এবং তাদের ক্লাস করার সুবিধার্থে প্রতি শিক্ষার্থীকে নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় ৫ এমবি ইন্টারনেট ডেটা বিনামূল্যে প্রদান করে। একই সাথে নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি প্রায় এক তৃতীয়াংশ কমিয়ে দেয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তুকি দিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে ল্যাপটপ কেনার সুযোগ করে দেয়। সামগ্রিকভাবে শিক্ষার্থীরা এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানায় এবং প্রকৃত উৎসাহ নিয়ে তারা ক্লাসে ফিরে আসে। বেশিরভাগ ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ৯০% থেকে ১০০% পর্যন্ত ছিল, যা পূর্ববর্তী ক্যাম্পাসে নিয়মিত মুখোমুখি ক্লাসের তুলনায় ছিল অভাবনীয়।

যদিও ইউজিসি প্রাথমিকভাবে অনলাইন ক্লাসগুলির বৈধতা অনুমোদনে কিছুটা অনিচ্ছুক ছিল। তবে মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী দিপু মনির নেতৃত্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গৃহীত সাহসী এবং প্রগতিশীল উদ্যোগ অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা অনুমোদনের পথ প্রশস্ত করে যেটি বহির্বিশ্বের শিক্ষা প্রতিষ্ঠাগুলোর নিয়মিত অনুশীলন। 

অনলাইনে পাঠদান ও মূল্যায়নের পদ্ধতিতে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সময়োপযোগী নেতৃত্ব সেশনজটের সম্ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক জীবনকে রক্ষা করে। এটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উন্নত বিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশকে ডিজিটাল দেশ হিসেবে রূপান্তরিত করার স্বপ্নকে বেগবান করেছে।

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, কম্পিউটার এবং আইসিটি ডিভাইসগুলি থেকে ট্যাক্স উঠিয়ে নেয়া এবং ইন্টারনেট সংযোগ বাড়িয়ে বাংলাদেশকে উন্নয়নের আন্তর্জাতিক মহাসড়কের সাথে সংযুক্ত করার জন্য বর্তমান সরকারের বাস্তববাদী নীতি আমাদের একাডেমিক কার্যক্রম সহজ এবং দক্ষতার সাথে পরিচালনা করার জন্য একটি চমৎকার প্লাটফর্ম দিয়েছে।

কোভিড-১৯ এর কারণে নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় গত স্প্রি ২০২০ সেমিস্টারের মাঝামাঝি থেকেই অনলাইনে সুইচ করতে বাধ্য হয়েছিল। এ দুই মাসের অভিজ্ঞতা পরবর্তী সেমিস্টারে আমাদের অনলাইন কৌশলগুলিকে আরও শানিত করতে, নতুন করে সব কিছু তৈরি করতে ব্যাপক সহযোগিতা করে। অনুষদের সদস্যদের পুনরায় প্রশিক্ষণ, শিক্ষার্থীদের জন্য পরিশীলিতকরণ এবং ব্যবহার-বান্ধব পদ্ধতি অবলম্বন আমাদেরকে সামার সেমিস্টারে পূর্ণ গতিতে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে।

কোভিড-১৯ আমাদের কাছ থেকে একটি বড় শুল্ক আদায় করে নিয়েছে। যাতে অনেক মূল্যবান জীবন হারিয়েছে, জীবিকা নির্বাহের অনেক পথ স্তব্ধ হয়েছে। তবে বাংলাদেশের তরুণ-যুবকদের স্বপ্ন এখনও বেঁচে আছে এবং তারা শিক্ষার সাধনাকে বাধাগ্রস্তহীনভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে দৃঢ় প্রত্যয়ী।

লেখক : উপাচার্য, নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ

এসি