ঢাকা, বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ঘুষ না দেয়ায় প্রতিবন্ধীর ভাতার কার্ড আটকে রেখেছেন ইউপি সদস্য 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৫১ পিএম, ১৪ আগস্ট ২০২০ শুক্রবার | আপডেট: ১১:৫২ পিএম, ১৪ আগস্ট ২০২০ শুক্রবার

সাতক্ষীরার কলারোয়ায় ঘুষ হিসেবে দাবি করা ৪ হাজার টাকা দিতে না পারায় এক প্রতিবন্ধীর ভাতার কার্ড আটকে রেখেছে ইউপি সদস্য। গত দুইদিন ধরে কার্ডের জন্য পাড়া মহল্লায় বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে গিয়ে কান্নাকাটি করায় বিষয়টি জানাজানি হয়।

ঘটনাটি কলারোয়া উপজেলার ১নং জয়নগর ইউনিয়নের। ইউপি সদস্যের নাম রেজাউল বিশ্বাস ওরফে ধোপা রেজাউল। তিনি পুলিশের উপর হামলা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। এলাকায় সে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী হিসাবে পরিচিত।

জয়নগর ইউনিয়নের ক্ষেত্রপাড়া গ্রামের মৃত মোবারক গাজীর প্রতিবন্ধীপুত্র আকছেদ আলীর (৬০) ওরফে (আকছেদ পাগল) এর স্ত্রী রওশনারা বেগম জানান, তাদের কোনো পুত্র সন্তান নেই। তিনটি কন্যা সন্তান। স্বামী আকছেদ আলী জন্ম থেকে পাগল হওয়ায় (প্রতিবন্ধী) বিভিন্ন এলাকায় ভিক্ষা করে সংসার নির্বাহ করে আসছে। করোনার কারণে গ্রাম ঘুরলেও কেউ ভিক্ষা না দেওয়ায় সংসার চলে না।

এ অবস্থায় ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রোজাউল বিশ্বাস ওরফে ধোপা রেজাউলের কাছে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ডের জন্য আবেদন করি। পরে তিনি আইডিকার্ডসহ ফটো নিয়ে একটি কার্ড করে দেন। গত সপ্তাহে আমার স্বামীর কার্ড হয়েছে জানিয়ে রেজাউল মেম্বার ৪ হাজার টাকা দাবি করে। আমরা ভিক্ষুক হওয়ায় অত টাকা কোথায় পাবো জানালে ভিক্ষা করে টাকা যোগাড় করে আনার কথা বলে প্রতিবন্ধী কার্ডটি আটকিয়ে রেখেছে। গত তিন মাসের ভিক্ষার জমানো চাল বিক্রি করে দুই হাজার টাকা মেম্বারকে দিলেও তার মন গলেনি। রেজাউল মেম্বারের ঘুষ চাওয়ার বিচার দাবি করে বিষয়টি রওশানারা বেগম স্থানীয়দের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন বলে জানান।

এ বিষয়ে ইউপি সদস্য রেজাউল ইসলাম বলেন, আকছেদ প্রতিবন্ধী কিনা সেটি পরীক্ষার জন্য আমার কিছু টাকা খরচ হয়েছিল। আকছেদের বউয়ের কাছে আমার ওই পাওনা টাকা দাবি করেছিলাম। তারা সে টাকা এখনো দেয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে ইউপি মেম্বার বলেন, রাগ করে তারা কার্ডটি গ্রহণ করেনি।

ইউপি চেয়ারম্যান ছামছুদ্দিন আল মাসুদ বাবু ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, রেজাউল মেম্বার ঘুষ ছাড়া কোনো কাজই করে না। এর আগেও সে ক্ষেত্রপাড়া গ্রামের খলিল সানার নিকট থেকে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেয়ার নামে ৫ হাজার টাকা গ্রহণ করেছিলো। এনিয়ে গত বছরের ১৬ জুলাই কলারোয়া ইউএনওর দফতরে অভিযোগ হলে উপজেলা পর্যায়ের এক নেতার সুপারিশে তার কিছু হয়নি।

এলাকাবাসী জানায়,ইউপি সদস্য রেজাউল এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তার ভয়ে এলাকার মানুষ মুখ খুলতে সাহস পায় না। তার বিরুদ্ধে থানা ও আদালতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে একাধিক মামলা আছে।

স্থানীয় সরসকাটি পুলিশ ফাঁড়ি সূত্র জানায়,রেজাউল মেম্বারের বিরুদ্ধে পুলিশের উপর হামালা করার অভিযোগ আছে। গত ২৯-০৫ ২০১৮ ইং তারিখে রেজাউল মেম্বার সরকারি কাজে বাধা প্রদান করে সরসকাটি পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মাজরিহাকে হাতুড়ি পেটা করে আহত করে। এ ঘটনা তার বিরুদ্ধে একটি মামলা (নং-০৫) দায়ের হয়। রেজাউল মেম্বার পেনাল কোড ১৪৩/৩৪১/১৮৬/৩৩২/৩৫৩/১১৪ ধারার চার্জশিট ভুক্ত আসামি। মামলাটি চলমান।

এ বিষয়ে কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমি জেরিন কান্তা বলেন, তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কেআই//