ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

কচুর লতির নানান গুণ 

ছৈয়দ আহমদ তানশীর উদ্দীন  

প্রকাশিত : ১০:৩৬ এএম, ২৩ আগস্ট ২০২০ রবিবার

গ্রামবাংলার অতি পরিচিত খাবার কচুর লতি। গলা ধরে বলে অনেকে কচুর লতি খেতে ভয় পায়। কিন্তু সুস্বাদু এই খাবারটি সঠিক পদ্ধতিতে রাঁধলে গলা ধরার ভয় নেই মোটেই।

চিংড়ি দিয়ে রান্না কচুর লতির তরকারির স্বাদের তুলনা হয় না। অনেকে চিংড়ির সঙ্গে নারকেলও দেন। খেতে মালাইকারির চেয়ে কোনও অংশে খারাপ নয়। এছাড়া ছুরি, ফাঁইস্যা, লইট্টা বা চিংড়ি শুঁটকি দিয়ে রান্না কচুর লতিও অতুলনীয়। এত স্বাদের এই সবজিটির গুণাগুণ সম্পর্কে অনেকেই জানেন না।

এছাড়া অভিজাত সবজির ভিড়ে কচুর লতিরও যেন স্থান নেই। অথচ পুষ্টিগুণে অনন্য এই সবজি।

পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, কচুর লতিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। খেলোয়াড়, গর্ভাবস্থা, বাড়ন্ত শিশু ও কেমোথেরাপি নিচ্ছেন-এমন রোগীদের জন্য কচুর লতি খুবই উপকারী একটি উপাদান।

এতে ক্যালসিয়াম পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। যা দেহের হাড় শক্ত করে ও চুলের ভঙ্গুরতা রোধ করতে সক্ষম। এর মধ্যে ডায়াটারি ফাইবার বা আঁশের পরিমাণ খুব বেশি আছে। এই আঁশ খাবার খুব সহজে হজম করে, দীর্ঘদিনের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়া যেকোনো বড় ধরণের অপারেশনের পর খাবার হজমে উপকারী পথ্য হিসেবে কাজ করে এই কচুর লতি।

যে কারণে খাবেন-
- গরমে শরীর থেকে পানি বেরিয়ে যায়। কচুর লতিতে প্রচুর পানি থাকে। সে কারণে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কচুর লতি রাখা যেতে পারে।
- কচুর লতির আঁশ দেহ থেকে বর্জ্য বের করে দেয়, খাবার হজমে সাহায্য করে।
- যারা দ্রুত ওজন কমাতে চান তারা কচুর লতি খেতে পারেন।
- মুখি বা কচুর চেয়ে লতিতে শর্করার পরিমাণ কম। ফলে যারা শর্করা পরিহার করে চলেন তারা কচুর লতি খেতে পারেন।
- কচুর লতির ক্যালসিয়াম হাড়ের গঠন শক্ত করে।
- এতে থাকা আয়োডিন ও ভিটামিন-বি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। ভালো রাখে ত্বক আর চুল।
- কচুর লতিতে থাকা ভিটামিন-সি মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- কচুর লতিতে আছে প্রচুর লোহা। যারা রক্তশূন্যতায় ভুগছেন কচুর লতি তাদের জন্য ভালো পথ্য হতে পারে।
- এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ফোলেট, থায়োমিনও রয়েছে।
- কচুর লতি রক্তের কোলেস্টরলের মাত্রা কমায়। 
- কোলন ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে। তবে, শিশুদের বেশি করে তেল দিয়ে খাওয়ানো ভালো। এতে রাতকানা রোগের আশঙ্কা কমে।

সতর্কতা :
প্রথমত, কচুতে অক্সলেট রয়েছে। তাই রান্নার পরও কোনো কোনো ক্ষেত্রে গলা খানিকটা চুলকায়। তাই কচুর লতির তরকারি খাওয়ার সময় কিছুটা লেবুর রস মিশিয়ে নিন। 

দ্বিতীয়ত, অনেক ক্ষেত্রে কচু খেলে শরীরে অ্যালার্জি এবং হজমে সমস্যা দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে যাদের এ ধরনের সমস্যা রয়েছে তারা কচু খাবেন না।

এছাড়া, যারা হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরলজনিত সমস্যায় আক্রান্ত বা উচ্চ রক্তচাপে (হাই ব্লাড প্রেশা) ভুগছেন, তারা কচুর লতি খাওয়ার সময় চিংড়ি ও শুঁটকি বর্জন করুন। নিরাপদ খাবার খান, সুস্থ থাকুন।  

লেখক 
নার্সিং কর্মকর্তা
জেলা সদর হাসপাতাল, কক্সবাজার
এআই/এসএ/