ঢাকা, সোমবার   ২০ মে ২০২৪,   জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

চাকরি কি আসলেই সোনার হরিণ?

লায়লা নাজনীন

প্রকাশিত : ১০:৩২ এএম, ৩১ আগস্ট ২০২০ সোমবার | আপডেট: ০১:২৮ পিএম, ৩১ আগস্ট ২০২০ সোমবার

চাকরি যখন সোনার হরিণ তখন তাকে পাওয়া নিশ্চয় সহজ ব্যাপার না। বাংলাদেশে ২৬ লাখ ৭৭ হাজার লোক বেকার তার মধ্যে ১০ লাখ শিক্ষিত বেকার। আর মহামারির এর কারণে বহু লোক চাকরিহারা হওয়ায় এই বেকারত্বের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের দেশে সরকারি, আধা সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, এনজিওসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। 

মানবসম্পদ বিভাগে কাজ করার সুবাদে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ কর্মীকে বলতে শুনি, লোক পাচ্ছি না। যেমন লোক চাচ্ছি তেমনটা পাচ্ছি না। এই ক্রান্তিকালে কর্মী ছাঁটাই এর কথা যেমন জোরালোভাবে শোনা যাচ্ছে আবার কিছু চাকরির সার্কুলার ও চোখে পড়ছে। তার মানে সম্ভাবনার দ্বার এখনো খোলা আছে। 

এছাড়া আমি নিজেও এ সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি বহুবার করোনা পূর্ববর্তীকালে চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণ লোকের যোগান দিতে পারছিলাম না আবার রিকোয়ারমেন্ট অনুযায়ী লোক পাচ্ছিলাম না। কি বিশ্বাস হচ্ছে না তাই না? কিন্তু এটা সত্যি যে একদিকে কেউ চাকুরি খুঁজে পাচ্ছে না অপরদিকে আমরা চাকুরি নিয়ে বসে আছি কিন্তু যোগ্য ব্যক্তিকে খুঁজে পাচ্ছি না। তাহলে বুঝতে হবে চাকুরি খোঁজার ব্যাপারে আমাদের কোথাও গ্যাপ রয়ে গেছে অথবা আমরা জায়গা মতো চাকরি খুঁজছি না।

চাকরি পাবার জন্য নিজেকে তো যোগ্য করে তুলতে হবে পাশাপাশি সঠিক জায়গায় আমাদের চাকরির খোঁজ করতে হবে। এই জন্যে আসুন জেনে নেই চাকরি খোঁজার এর সোর্সগুলো কী কী?

১। অনলাইন জব পোর্টাল: বিভিন্ন অনলাইন জব পোর্টাল আছে। যেমন- bdjobs.com, prothom-alojobs, my jobs, NRB jobs, globaljob.com এসব জব পোর্টালগুলোতে সিভি আপলোড করে রাখতে পারেন এবং টাইম টু টাইম চাহিদা অনুযায়ী চাকরি খুঁজতে পারেন।

২। নিউজ পেপার: চাকরি খোঁজার জন্য নিউজ পেপারও অন্যতম একটি মাধ্যম। বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরির সার্কুলারগুলো দেশের বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়ে থাকে।

৩। রেফারাল: রেফারেন্সের মাধ্যমে চাকরি পাওয়া যেতে পারে যেমন আপনার আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব এবং পরিচিতজনকে আপনি জানিয়ে রাখতে পারেন। আপনার গ্রাজুয়েশন শেষ আপনি চাকরি খুঁজছেন, হতে পারে আপনার পরিচিতদের মধ্যে থেকেই কারো অফিসে লোক নেবে সেখানে আপনি চাকরির জন্য আবেদন করতে পারেন।

৪। নেটওয়ার্কিং: বর্তমান সময়ে চাকরি খোঁজার ক্ষেত্রে নেটওয়ার্কিংকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন সেমিনারে যাওয়া, গ্রুপ ডিসকাশন, সংগঠনের মেম্বার হওয়া, প্রফেশনাল গেট টুগেদার এর মাধ্যমে আপনি চেনা জানা মহল থেকেও জবের ব্যাপারে ইনফরমেশন নিতে পারেন। অনেক সময় দেখা যায় চাকরির অফারও পেয়ে যেতে পারেন।

৫। জব ফেয়ার: জব ফেয়ারে অংশগ্রহণের মাধ্যমে আপনি সিভি সাবমিট করতে পারেন। অনেক কোম্পানি আছে যারা জব ফেয়ার করে সিভি কালেক্ট করে এবং অনেক সময় ডাইরেক্ট জব ইন্টারভিউ করেও লোক হায়ার করে।

৬। কোম্পানি ওয়েবসাইট: বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ওয়েবসাইট থাকে, সেখানে ক্যারিয়ার জব রিলেটেড ইনফরমেশন এবং ভাক্যান্ট পজিশনগুলো দেওয়া থাকে, সেই প্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইনে সার্চ করে আপনি সিভি সাবমিট করতে পারেন।

৭। রিক্রুটমেন্ট এজেন্সিস: দুই ধরণের রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি আছে (১) যারা আপনার কাছ থেকে পেমেন্ট নিয়ে আপনার চাকরির জন্য সিভি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পাঠাবে। (২) যারা প্রেমেন্ট ছাড়াই আপনার জন্য কাজ করবে এরা অনেক ক্ষেত্রে কোম্পানি থেকে পেমেন্ট নিয়ে থাকে। এইসব রিক্রুটমেন্ট এজেন্সির সাথে ও যোগাযোগ করতে পারেন।

৮। ইন্টার্নশীপ: আপনি বিভিন্ন কোম্পানিতে ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে জব পেতে পারেন। অনেক সময় দেখা যায় ইন্টার্নশিপ করতে গেলে পারফরম্যান্স ভালো হলে পার্মানেন্টলি জবে রেখে দেয়।

৯। সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেল: ইদানিং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতেও জব অ্যাপস দেওয়া হয়ে থাকে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ বিভাগের কর্মীরা তাদের পার্সোনাল ফেসবুক পেইজে, বিভিন্ন গ্রুপে জব সার্কুলার আপলোড করে থাকে। এছাড়াও লিংকডিন এর মাধ্যমে আপনি জব রিলেটেড ইনফর্মেশন নিতে পারেন এবং এপ্লাই করতে পারেন।

১০। ক্যাম্পাস রিক্রুটমেন্ট: অনেক কোম্পানি বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে জব ক্যাম্পেইন করে এবং ইউনিভার্সিটি থেকে সিভি কালেক্ট করে, তাই আপনি আপনার ইউনিভার্সিটি টিচার বা ক্যারিয়ার ক্লাবের কাউন্সিলর এর কাছে সিভি সাবমিট করে রাখতে পারেন। এছাড়াও পড়াশোনার পাশাপাশি ইউনিভার্সিটিতে বিভিন্ন কাজকর্ম এ অংশগ্রহণ করতে পারেন এবং পরবর্তী পর্যায়ে ইউনিভার্সিটিতেই এডমিনিস্ট্রেটিভ জব ও পেয়ে যেতে পারেন।

১১। ফ্রিল্যান্সিং: আধুনিক যুগের সবচেয়ে স্মার্ট কাজ হিসেবে ধরা হয় ফ্রিল্যান্সিংকে। আপনি যদি কোন কাজে বিশেষ করে কম্পিউটার রিলেটেড কাজে দক্ষ হয়ে থাকেন তাহলে চাকরি না করেও আপনি ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন। যেমন: আপনি যদি গ্রাফিক্স ডিজাইনের খুব ভালো হয়ে থাকেন চাকরি না করে আপনি ঘরে বসেই অর্থের বিনিময়ে সেটা করে দিতে পারেন। আপনার দক্ষতা ভালো হলে আপনি কাজ পাবেনই। এছাড়াও ডেটা এন্ট্রি, ভিডিও এডিটিং, এক্সেল মাস্টার, ইউটিউব এ ভিডিও করে আপনি ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন।

১২। টার্গেট জব: আপনার পছন্দ সই কয়েকটি কোম্পানিকে টার্গেট করুন এবং সেই কোম্পানীর ইমেইলে নিজের সিভি মেইল করুন অথবা সেই কোম্পানিগুলোতে গিয়ে তাদের সিভি বক্স এ সিভি জমা দিয়ে আসতে পারেন।

১৩। ওয়াক ইন ইন্টারভিউ: অনেক সময় বিভিন্ন বিলবোর্ড এবং দেয়ালে এ পোস্টার ওয়াক ইন ইন্টারভিউ দেয়ার জন্য বলা হয়ে থাকে। তবে এ সকল ইন্টারভিউ তে যাওয়ার আগে কোম্পানি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে যাবেন।

১৪। ওন জবস: চাকরি যে করতে হবে এমন কোন কথা নাই, আপনি নিজেও বিজনেস করতে পারেন একজন উদ্যোক্তা হয়ে অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে পারেন।

১৫। ক্রিয়েট উর ওন ব্র্যান্ড: কোন বিশেষ খাতে নিজের ব্র্যান্ড বা ইমেজ ক্রিয়েট করুন, অনেক সময় বিশেষ ক্ষেত্রে এক্সপার্ট লোকদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলো নিজ থেকে ডেকে স্বেচ্ছায় কল করে নিয়ে যায়।

১৬। স্কলারশিপ: স্কলারশিপ এর মাধ্যমে আপনি দেশ-বিদেশে চাকরির সুযোগ পেতে পারেন। 

তবে একটা কথা মনে রাখবেন, চাকরির জন্য শুধুমাত্র এসব সোর্সগুলোতে আবেদন করলেই হবে না। ইন্টারভিউতে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর চাহিদা অনুযায়ী এবং বর্তমান চাকরির মার্কেটে টিকে থাকার জন্য আপনাকে যোগ্যতাসম্পন্ন হতে হবে এবং নিজেকে আপডেট রাখতে হবে, সর্বদা নিজেকে আপগ্রেড করতে হবে। অন্যথায় চাকরি সোনার হরিণই হয়ে থাকবে সহজে ধরা দেবে না। 

কাজেই করোনার এই ক্রান্তিকালে যাদের চাকরি নাই তারা হতাশ না হয়ে চলুন এগিয়ে যাই, যেন আমাদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি না থাকে।

লেখক: হেড অফ এইচআর, স্টার সিনেপ্লেক্স

এমবি//