ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৭ মে ২০২৪,   বৈশাখ ২৪ ১৪৩১

সীমান্তে মাদক-স্বর্ণ পাচারে ব্যবহার হচ্ছে নারীরা

বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৩:৫০ পিএম, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ রবিবার

যশোরের বেনাপোল-শার্শা সীমান্তে মাদক ও স্বর্ণ পাচারে ব্যবহার করা হচ্ছে নারীদের। গত ১৬ দিনে পাচারের সাথে সরাসরি জড়িত থাকায় ৯ নারী পাচারকারীকে হাতেনাতে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এসব মাদক ও স্বর্ণ পাচারে, অল্প সময়ে অধিক অর্থের লোভে পাচারকারী খাতায় নাম লেখাচ্ছে তারা। সেই সাথে অনেক নারী গড ফাদারদের খপ্পরে পা দিয়ে অল্প দিনে কোটিপতি হওয়ার আশায় জড়িয়ে পড়ছে পাচার কাজে। 

বেনাপোল-শার্শা ভারত সীমান্ত ঘেঁষা হওয়ায় এ পথে পুরুষের পাশাপাশি নারী পাচারকারীর সংখ্যাও দিনদিন বেড়ে চলেছে। গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায়, পাচারকারীরা আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে এসে আবারও গড ফাদারদের প্রলোভনে জড়িয়ে পড়ছে পাচার কাজে।

সীমান্ত এলাকা ঘুরে জানা যায়, বেনাপোল-শার্শা সীমান্তের কায়বা, রুদ্রপুর, গোগা, অগ্রভুলাট, পাঁচভুলাট, শালকোনা, পাকশিয়া, ডিহি, গোড়পাড়া, পুটখালী, দৌলতপুর, গাতিপাড়া, সাদিপুর, রঘুনাথপুর, ঘিবা ও ধান্যখোলা সীমান্তে পাচারকারীরা অনেক বেশি সক্রিয়। আর এসব রুট সীমান্ত ঘেঁষা হওয়ায় এসব রুটকে বেছে নেয়া হচ্ছে।

সীমান্তের পুলিশ ও বিজিবি সূত্রে জানা যায়, গত ১০ সেপ্টেম্বর বাগআঁচড়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ শার্শার রাড়িপুকুর গ্রাম থেকে পানি ভর্তি কলসিতে করে ফেনসিডিল বহনের সময় রিপন হোসেনের স্ত্রী কাকলী বেগম (২৬)-কে ১৩ বোতল ফেনসিডিলসহ আটক করে। একই দিন বেনাপোল পোর্ট থানার গয়ড়া গ্রাম থেকে যশোরের অভয়নগর থানার গুয়াখোলা এলাকার ইকবালের স্ত্রী পারভীন বেগম বুলু (৩০) ও কোতয়ালী থানার নরেন্দ্রপুর গ্রামের আব্দুল আজিজ খানের মেয়ে রোকেয়া খাতুন (২০) কে দুই কেজি গাঁজাসহ আটক করে পোর্ট থানা পুলিশ। 

এর আগে ৮ সেপ্টেম্বর শার্শার সাতক্ষীরা-নাভারণ সড়কের আমতলা এলাকা থেকে বাগআঁচড়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ থানার সাতপুর গ্রামের শুভ আহমেদের স্ত্রী জুলেখা বেগম (২৫) ও একই গ্রামের আব্দুল্লাহর স্ত্রী আকলিমা খাতুন খাদিজা (২৬) কে ১১০ বোতল ফেনসিডিলসহ আটক করে। ৬ সেপ্টেম্বর সকালে বেনাপোল পৌর এলাকার ভবেরবেড় গ্রাম থেকে বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশ যশোরের কোতয়ালী থানার নরেন্দ্রপুর (আমড়াতলা) এলাকার আব্দুল আজিজের মেয়ে মনি (৩৭) ও বাগেরহাট সদরের যাত্রাপুর গ্রামের আইয়ুব আলী শেখের মেয়ে ফাতেমা খাতুন (২৫) কে তিন কেজি গাঁজাসহ আটক করে।

৫ সেপ্টেম্বর শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়া সাতমাইল এলাকার আমতলা থেকে বাগআঁচড়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ একাধিক মামলার আসামি রিজিয়া বেগম ওরফে তানিয়া (৪২) কে সাত বোতল ফেনসিডিলসহ আটক করে। ২৮ আগস্ট বেনাপোল পোর্ট থানার সাদিপুর সীমান্ত থেকে ওই গ্রামের দুখু মিয়ার স্ত্রী বানেছা (৪৫) কে ৫৭ পিস (৯ কেজি ২শ’ গ্রাম) স্বর্ণেরবারসহ আটক করে বিজিবি সদস্যরা।

এ ব্যাপারে বেনাপোল ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব বজলুর রহমান বলেন, ‘মাদক বর্তমান সমাজকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। সেখানে নারীদের মাদকসহ বিভিন্ন পাচারের সাথে যুক্ত থাকা সত্যিই দুঃখজনক। তারা জেনে হোক, আর না জেনে হোক এই পাচারের সাথে জড়িত থাকলে তাদের এ পেশা অবিলম্বে ত্যাগ করা উচিত। যেন মায়ের এ নেতিবাচক প্রভাব তার সন্তানের উপর না পড়ে।’

শার্শার বাগআঁচড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের অফিসার ইনচার্জ উত্তম কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘আমি এই ফাঁড়িতে যোগদান করার পর থেকে যত মাদকদ্রব্য এবং তার সাথে বহনকারী যানবাহন আটক হয়েছে তা অন্য সময় হয়নি। আমি দেশে মাদকদ্রব্য যাতে প্রবেশ করতে না পারে সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।’

শার্শা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বদরুল আলম খান বলেন, ‘আমরা মাদক উদ্ধারের পাশাপাশি যারা এ ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্ট রয়েছে তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। কোন মাদক ব্যবসায়ী এবং তাদের মদদ দাতাদের ছাড় দেওয়া হবে না।’

বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন খান বলেন, ‘আমি বেনাপোল পোর্ট থানায় যোগদানের পর থেকে মাদক বিরোধী অভিযান ও মাদক উদ্ধার কার্যক্রম অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এর আগে এ থানায় মাদক উদ্ধারের এতো রেকর্ড নেই। আমি মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে যদি কোন গডফাদার জড়িত থাকে তাদেরও ছাড় দেওয়া হবে না।’

যশোর ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের বেনাপোল সদর ক্যাম্পের সুবেদার হান্নান মিয়া বলেন, ‘চোরাচালানীরোধে সীমান্তে বিজিবি সতর্ক আছে। গত এক বছরে ১৩টি পিস্তল, ২৪টি ম্যাগজিন, ৫৮টি গুলি, ২৫ দশমিক ৪১ কেজি স্বর্ণেরবার, ২০ হাজার ৮২৭ বোতল ভারতীয় ফেনসিডিল, ৫৪৭ কেজি গাঁজা, ৪০৬ বোতল মদ, ৫৬৭ পিস ইয়াবা ও ৪০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধারসহ ২০১ জনকে আটক করেছে বিজিবি সদস্যরা। এ সময়ে ১৭ কোটি ৭৫ লাখ ৪০ হাজার ৫শ’ টাকার মালামাল আটক করা হয়।’
এআই/এসএ/