ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচার হয়নি আজও

বশেমুরবিপ্রবি সংবাদদাতা

প্রকাশিত : ১১:৩৭ এএম, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ বুধবার

গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর রাত থেকেই দুর্নীতিবাজ ও স্বৈরাচারী ভিসির অপসারণের দাবিতে আন্দোলনে নামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন দমাতে তৎকালীন ভিসি নাসিরউদ্দিনের নির্দেশে আন্দোলনের ৩ দিনের মাথায় ২১ সেপ্টেম্বর নৃশংস হামলা করা হয় শিক্ষার্থীদের ওপর। 

ভিসির নির্দেশে স্থানীয়দের ওই হামলায় আহত হয়েছিলেন প্রায় অর্ধ শতাধিক শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীরা জানান, ‘মূলত আন্দোলন বন্ধ করতেই তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের নির্দেশে ওই হামলা করা হয়েছিল।’

এ ঘটনায় ওই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক কোনো মামলা দায়ের না করায় প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী ও পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে। তবে এক বছর পার হয়ে গেলেও হামলার জড়িত পাচঁ শিক্ষার্থীর স্থায়ী বহিষ্কার এবং এক শিক্ষার্থীর দুই  সেমিস্টারের বহিষ্কারাদেশ ব্যতীত এ ঘটনার আর কোনো বিচার পাননি শিক্ষার্থীরা।

মামলার একজন বাদী প্রিয়তা দে বলেন, ‘মূলত আন্দোলন বন্ধ করতেই আমাদের ওপর হামলা করানো হয়েছিল। হামলার পর বিচার নিশ্চিত করতে মামলা করাটা বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব হলেও তারা ওই সময়ে মামলা না করায় আমরা ৭-৮ জন শিক্ষার্থী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি উল্লেখ করে মামলা করেছিলাম। পরবর্তীতে আমরা হামলাকারীদের ছবিসহ বিভিন্ন ডকুমেন্টস প্রদান করেছি। কিন্তু এক বছর পার হলেও হামলাকারীদের শনাক্ত ও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।’

এদিকে, দীর্ঘ এক বছরেও বিচার না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হামলায় আহত শিক্ষার্থীরা। কৃষি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মাশুকুর রহমান বলেন, ‘আমি সামনে থেকে খুব খারাপভাবে হামলার শিকার হওয়া একজন  শিক্ষার্থী হিসেবে বলতে পারি, এতগুলো শিক্ষার্থীর ওপর এমন হামলা, একজন মানুষের পক্ষে কল্পনাও করা সম্ভব নয়। সাবেক উপাচার্যের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখতে আমিসহ আমার ভাই-বোনের ওপর নির্বিচারে যে হামলা করা হয়েছিল তার বিচার আমরা আজ অবধি পাইনি। নবনিযুক্ত নতুন ভিসি মহোদয় এবং প্রশাসনের কাছে দাবি থাকবে, যে বা যারা এই জঘন্যতম হামলার সাথে জড়িত ছিল সকলকে বিচারের আওতায় এনে ন্যায়বিচারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করা। যাতে পরবর্তীতে কেউ এমন ঘৃণ্য কাজ করার সাহস না পায়। আমি আমার কিংবা আমাদের ওপর নির্মম আঘাতের সুষ্ঠ বিচার চাই।’

হামলার শিকার আরেক শিক্ষার্থী মানোস তালুকদার বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ওপর এর আগেও হামলা হয়েছে কিন্তু কখনও বিচার হয়নি। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অবশ্যই অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা প্রয়োজন। কিন্তু সামগ্রিক অবস্থা দেখে এখন আর বিচারের বিষয়ে আশাবাদী হতে পারছি না। আমার মনে হয় এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে জড়িতদের বিচারের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ প্রত্যেককেই দায়িত্বশীল হতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের শতভাগ আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।’

মামলার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ল’সেলের কর্মকর্তা সাজিদুর রহমান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের পর থেকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সাথে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হওয়ায় এবং করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকায় সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে অবগত নই।’

মামলাটির বিষয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মনিরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে কিছু জানাতে রাজি হননি। এ বিষয়ে আদালত থেকে তথ্য সংগ্রহের পরামর্শ দেন তিনি।

শিক্ষার্থীদের ওপর বারবার এ ধরনের হামলা এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে বশেমুরবিপ্রবির প্রক্টর ড. রাজিউর রহমান বলেন, ‘হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিচারের ক্ষেত্রে আমাদের পক্ষে যতটুকু করা সম্ভব ছিল আমরা সেটা করেছি। যে সকল শিক্ষার্থীরা হামলার সাথে জড়িত ছিল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। এছাড়া বর্তমানেও কোনো সমস্যা তৈরি হলে সেগুলো সমাধান করছি এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করছি।’

এআই//এমবি