ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

প্রত্যাশা প্রাপ্তির গল্পগুলো

তানভির আহমেদ

প্রকাশিত : ০৪:২৭ পিএম, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ শুক্রবার

১৯৭৬ সালে ‘এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন ট্রেনিং ইনস্টিটিউট’ নামে প্রতিষ্ঠিত হয় উত্তরবঙ্গের একমাত্র কৃষি সম্পর্কিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এরপর কৃষি কলেজে উন্নীত হয়ে ১৯৯৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ঘোষিত হয় পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় রূপে। সম্প্রতি দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মাদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি) ২১ বছরে পা দিল। বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষ্যে প্রাক্তন ও বর্তমান কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাফল্য ও অগ্রগতি এবং তাদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন মো. তানভির আহমেদ।  

শত সহস্র বছরের প্রিয় ক্যাম্পাস:
মুহিউদ্দিন নুর, ১২ ব্যাচ ,মৎস্য বিজ্ঞান অনুষদ
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি) আমার কাছে একটি অনুভূতির নাম। সেই ২০১১ সালের শেষের দিকে ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসেই পুষ্প শোভিত এই ক্যাম্পাসের প্রেমে পড়ে যাই। চারদিকে সবুজের হাতছানিতে ঘেরা সাজানো গুছানো একটি ক্যাম্পাস। লাল ইটের সারি-সারি ভবন, দৃষ্টিনন্দন গেট, টিএসসি, ফোয়ারা, উটপাখি সহ বিভিন্ন প্রাণীর গবেষণা ফার্ম, হোয়াইট হাউজ খ্যাত উপাচার্য মহোদয়ের বাসভবন, শত শত প্রজাতির ফলদ,বনজ ও ঔষধি গাছ যে কারো নজর কাড়তে বাধ্য। ছাত্রজীবনে পড়াশুনার পাশাপাশি সাংবাদিকতার সাথে জড়িত থাকায় ক্যাম্পাসের প্রতি ইঞ্চি জায়গা নিয়মিত চষে বেড়াতাম। তাই এর প্রতি ভালোবাসাও ছিল অগাধ। ভালো লাগার, ভালোবাসার প্রিয় হাবিপ্রবির ক্যাম্পাস শত সহস্র বছর মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাক, ২১তম জন্মদিনে এটাই কামনা।

ছাত্র সংসদ ও অ্যালামনাই এসোসিয়েশন অতি দ্রুত প্রয়োজন:
মোঃরিয়াদ খান, এম.এস ইন কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ
উত্তরবঙ্গের কৃতি সন্তান, তেভাগা আন্দোলনের নেতা মরহুম হাজী মোহাম্মদ দানেশ এর নামে ১৯৯৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সময় থেকে অনেক ক্ষেত্রেই এই বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে গেছে, তবে বলতে কষ্ট নেই গবেষণা ক্ষেত্রে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। শিক্ষক সংকটসহ বিভিন্ন প্রতিকূলতায় একাডেমিক দিকেও অনেক সময় কিছুটা বাঁধাগ্রস্থ হয়েছে। তবে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে গুণী শিক্ষক ও মেধাবী শিক্ষার্থীও রয়েছে, এজন্যই বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে, একাডেমিক উন্নয়ন হয়েছে এবং আমি বিশ্বাস করি অতি দ্রুত এই বিশ্ববিদ্যালয় একটি একাডেমি ও গবেষণা ভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হবে। বর্তমান মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড.মু.আবুল কাসেম স্যার একাডেমি উন্নয়ন করণ, গবেষণা বৃদ্ধি  ও শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য কৃষক সেবা কেন্দ্র, ক্যারিয়ার এডভাইজরী সার্ভিস সেন্টার ও অবকাঠামো উন্নয়ন  করেছেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়কে আরো গতিশীল করতে এখানে ছাত্র সংসদ ও অ্যালমেনাই এসোসিয়েশন অতিদ্রুত প্রয়োজন। সবশেষে বলতে চাই, আমার বিশ্ববিদ্যালয় আমার কাছে সব সময়ই সেরা।

শিক্ষায়, গবেষণায় সেরা প্রতিষ্ঠানে রুপান্তরিত হোক:
পল্লব হোসেন রাঙ্গা, এম বি এ ইন ফিনান্স এন্ড ব্যাংকিং 
বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনা ছোট হলেও বাংলাদেশের  বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশী বিদেশি শিক্ষার্থী নিয়ে সগৌরবে এগিয়ে যাচ্ছে  উত্তরবঙ্গের সর্বোচ্চ এ বিদ্যাপীট। ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর নানাবিধ সমস্যায় (ক্লাস রুম সংকট, আবাসন সমস্যা,  ল্যাব সমস্যা) জর্জরিত এ বিদ্যাপীঠ, ধীরে ধীরে থেকে অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে।  তারপরও কিছু সমস্যা এখন ও বিদ্যমান,  আশাকরি অতিদ্রুত এসব সমস্যা লাঘব হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা, গবেষণা এগিয়ে রাখার পাশাপাশি বর্তমানে মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর স্যার প্রফেসর ড. মুহম্মদ আবুল কাসেম স্যারের একান্ত আন্তরিক প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম ক্যারিয়ার কাউন্সিলিং এন্ড এন্টারপেনারশিপ ডেভেলপমেন্ট সেন্টার যা শিক্ষার্থীদের বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলারশিপ ও ক্যারিযার বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এছাড়াও কৃষক সেবা কেন্দ্র ও ভ্রাম্যমান ভেটেরিনারি ক্লিনিক দিনাজপুর সহ আশেপাশের এলাকার কৃষকদের বিভিন্ন সেবা দিয়ে একটি  জনকল্যাণমূখী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিনত হয়েছে। হাবিপ্রবির ২১ তম জন্মবার্ষিকীতে সকলের প্রত্যাশা আমাদের এ প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষায়, গবেষণায়, মননে, সংস্কৃতিতে,  জনকল্যাণে বাংলাদেশের একটি অন্যতম সেরা প্রতিষ্ঠানে রুপান্তরিত হবে।

সাংস্কৃতিক চর্চা বৃদ্ধিতে মনোযোগী হওয়া দরকার 
সোয়াদুজ্জামান সোয়াদ, লেভেল- ২ সেমিস্টার-২, এগ্রীকালচারাল ইঞ্জিনিয়ারং বিভাগ 
দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় শিল্প সাহিত্য চর্চার তীর্থ ভুমি হলেও আমার মতে সাংস্কৃতিক চর্চায় হাবিপ্রবি একটু পিছিয়ে। প্রথমত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায়  নাট্যকলা, সঙ্গীত, বাংলা বিভাগ ও লোকসাহিত্য সম্পৃক্ত তেমন কোনো বিষয় (ইংরেজী ও সমাজ বিজ্ঞান ব্যাতিত) না থাকায় এর পেছনে অন্যতম কারণ।  দ্বিতীয়ত সাংস্কৃতীক চর্চার উপকরন (মুক্তমঞ্চ, নির্ধারিত ভবন/কক্ষ) নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাংস্কৃতিক চর্চা বৃদ্ধিতে মনোযোগী হওয়া দরকার। শিক্ষার্থীদের মাদক ও সন্ত্রাস থেকে দূরে রাখতে সুস্থ সামাজিক বিনোদন এর ব্যাবস্থা আমাদেরই করতে হবে। অদুর ভবিষতে ১৩০ একরের ভালোবাসার প্রিয় ক্যাম্পাস  সুপরিকল্পিত ভাবে আরো নান্দনিক ও পরিচ্ছন্ন ক্যাম্পাসে পরিনত হবে এটাই প্রত্যাশা।

অধ্যায়ন শেষে  শিক্ষার্থী ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে
নায়লা আফরিন, লেভেল-১ সেমিস্টার-২, মাৎস বিজ্ঞান অনুষদ
আয়তনে খুব একটা বড় না হলেও শিক্ষার্থীদের স্বপ্নগুলো ঠিকই আকাশ ছোয়া। খেলার মাঠ থেকে গবেষণার ল্যাব, দেশ ছাপিয়ে বিশ্বের মাটিতে প্রতিনিয়ত সফলতার স্বাক্ষর রাখছেন এ ক্যাম্পাসের সন্তান তুল্য শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে গবেষণার দিক দিয়ে অনেক এগিয়েছে হাবিপ্রবি, বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন গুলো তারই সাক্ষ্য দেয়। প্রতি বছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে দেশ বিদেশের বিভিন্ন নামকরা প্রতিষ্ঠানে কর্মের জন্য  ছড়িয়ে পরছেন  এবং সুনাম বয়ে আনছেন। তবে প্রতিবছর যে হারে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে সেই অনুপাতে আধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত গবেষনাগার, গ্রন্থাগার, ক্লাস রুম ও আবাসন সুযোগ সুবিধা বাড়ছে না। যা পরবর্তীতে মান-সম্মত গ্রাজুয়েত তৈরিতে  অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। সব সংকট কাটিয়ে শীক্ষার্থী বান্ধব প্রতিষ্ঠানটি এগিয়ে চলুক এটাই প্রত্যাশা।  

পরিপূর্ণরূপে বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠুক: 
হোসনে আরা দোলন, লেভেল ২  সেমিস্টার ২, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ
একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে কখন আমরা বিশ্ববিদ্যালয় বলি? যখন এটি চিন্তা, চেতনা মমনে ও বাস্তবে বিশ্ব মাপের হয়। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হওয়া উচিত সর্বদা বৈশ্বিক। আধুনিক বিশ্বে কি চলছে? কিসের চাহিদা রয়েছে তা আমাদের বুঝতে হবে।  সেই অনুপাতে কাজ করতে হবে। সেইসাথে বিশ্ববিদ্যালয় হলো মুক্তজ্ঞান চর্চার উর্বর ভূমি। একজন শিক্ষার্থীর মনোজগত, দক্ষতা, সম্ভবনাগুলোকে প্রস্ফুটিত করার সুযোগ, একটি মনোরম ও উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি কর্তৃপক্ষকেই করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে এসে একটা কথাই শুধু বলতে চাই, প্রিয় হাবিপ্রবি অবস্থানগত ও নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও অনেক এগিয়ে গেছে এবং যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এ স্বপ্নভূমি বিশ্ববিদ্যালয় দিন-দিন হয়ে উঠুক পরিপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়রূপে এটাই প্রত্যাশা সকলের।

আরকে//