ঢাকা, সোমবার   ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ২৫ ১৪৩১

শুভ জন্মদিন আপা

সেলিম জাহান

প্রকাশিত : ০৭:০৯ পিএম, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ সোমবার

শেখ হাসিনা

শেখ হাসিনা

এ পত্রটি আপনার কাছে হয়তো কখনও পৌঁছুবে না। তবুও আপনার জন্মদিনে কিছু লিখতে ইচ্ছে করলো। আপনি বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমারও প্রধানমন্ত্রী। আনুষ্ঠানিক পরিবেশে আপনাকে ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’ বলে সম্বোধন করলেও অনানুষ্ঠানিক আবেষ্টনীতে আপনাকে সবসময়েই ‘আপা’ বলেই ডেকেছি। সেই মধ্য আশির দশক থেকে, যখন বিরোধী দলীয় নেত্রী হিসেবে আপনার সঙ্গে প্রায়ই নানান আলাপ-আলোচনা ও কাজে বসতে হতো। 

১৯৯৬ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করে আপনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। তার কিছুদিন বাদে আপনি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে নিউইয়র্কে আসলেন। মাসটা ছিল সেপ্টেম্বর। আপনার সফর সঙ্গীদের অন্যতম ছিলেন প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী। 

এক বিকেলে তাঁকে কিছু একটা পৌঁছে দিতে আমি হায়াট রিজেন্সি হোটেলে গিয়েছিলাম। আমার দপ্তর থেকে পাঁচ মিনিটের পথ। আমি ওখানে গিয়েছি জেনে আপনি আমাকে দেখা করে যেতে বলেছিলেন।

আপনার কামরায় আমাকে যখন নিয়ে যাওয়া হলো- তখন চেনা-অচেনা অনেকেই ছিলেন সেখানে। হয়তো আগেই বলা ছিল, আমি যেতেই সবাই বেরিয়ে গেলেন। আপনি আমাকে সাদরে অভ্যর্থনা জানালেন, কুশলাদি জিজ্ঞেস করলেন। বিশেষত: বেনুর কথা, অনুযোগও করলেন বহুদিন দেখা হয়নি বলে। অনেক কথা হলো- মধ্য আশির দশকের দিনগুলোর কথা, সামনের সম্ভাবনা ও সমস্যার কথা। মাঝে চা-বিস্কুট দিয়ে যাওয়া হলো। খেতে খেতে কথা চলছিল।

চা-বিস্কুট খেতে গেলে যা হয়- প্রচুর বিস্কুটের গুঁড়ো পড়ছিল টেবিলের ওপরে। এক পর্যায়ে দেখলাম, আপনি সামনের দিকে একটু ঝুঁকে এক হাত টেবিলের কিনারের নাচে রেখে, অন্য হাত দিয়ে সযত্নে কিনারের হাতে নিয়ে নিচ্ছিলেন। তারপর ঝেড়ে ফেলছিলেন টেবিলের ওপরের খালি পিরিচে। কথা বলতে বলতেই খুব স্বাভাবিকভাবেই আপনি এ কাজটি করছিলেন।

দৃশ্যটি আমার কাছে অভাবনীয় মনে হচ্ছিল। আমার বিস্মিত চোখের দিকে তাকিয়ে আপনি স্মিতমুখে খুব হালকা স্বরে বলেছিলেন, ‘অবাক হচ্ছেন কেন? আপনারা ছেলেরা করেন না, কিন্তু আমাদের দেশে মেয়েরা এটা সব সময়েই করে থাকে’। অতি সত্যি কথা-  দেশে ঘরে-বাইরে নানান জায়গায় মেয়েদের আমি এ কাজটি করতে দেখেছি। তাই বলে একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী! যিনি কিনা বললেই অন্য কেউ এসে বিস্কুটের গুঁড়ো পরিস্কার করে নেবে।

আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম এমন একটি স্বাভাবিক ঘরোয়া আচরণে। আপনাকে আমার খুব আপন মনে হয়েছিল। সত্যি একটি বিস্মিত মুগ্ধতা নিয়ে আমি আপনার কক্ষ থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম। বলতে দ্বিধা নেই, সেই মুগ্ধতার স্মৃতি এখনও আমার মনে সদা জাগরুক। সেই মুগ্ধতাটুকুই আপনার জন্মদিনে আমার শ্রদ্ধার্ঘ্য।

আপনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘজীবন কামনা করি।
শ্রদ্ধান্তে
সেলিম জাহান

এনএস/