ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

সঙ্গীতা ইয়াসমিন-এর দুটি কবিতা

সঙ্গীতা ইয়াসমিন

প্রকাশিত : ০৪:৫৪ পিএম, ৩ অক্টোবর ২০২০ শনিবার

ছবি- কবির নিজ হাতে আঁকা

ছবি- কবির নিজ হাতে আঁকা

দেখা হবার আগে ও পরে

তোমার সাথে দেখা হবার আগে
পৃথিবী কম করে হলেও ৩৬৫ দিনের
একটা সূর্য-ভ্রমণ সমাপ্ত করেছে।
তখন ক্যালেন্ডারের গা থেকে 
কেবল একটি পাতাই খসে যায়নি 
দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে 
বদলে গেছে অনেক কিছুই।
এই যেমন ট্রাম্প-কিমের কয়েকদফা 
রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়েছে,
বিশ্ববাজারে সোনার চেয়ে তেলের মূল্য 
বেশী হওয়ার একটা ঝুঁকি বেশ কবার তৈরি হয়েছে, 
শেয়ারবাজার এবং মূদ্রাস্ফিতি ছাড়াও 
অস্ত্রের বৈধ কিংবা অবৈধ চালানের সূচক 
কয়েক দফা ওঠানামা করেছে।

তোমার সাথে দেখা হওয়ার আগেই 
বিদেশী দূতাবাসসমূহে রটে গিয়েছিল 
আমরা ঠিক নির্দিষ্ট কোন দিনে কোথায় 
কী পোশাকে থাকব!
আমাদের ওপর কড়া নজরদারি হচ্ছিল,
কেনো বলো তো!
কার পাকা ধানে মই দিয়েছি আমরা?
কিংবা কার সীমান্ত আগ্রাসনের তথ্য পাচার করেছি তুমি-আমি?

বিংশ শতাব্দীর শোকের আয়ু এক বছর হলেও
তোমার সাথে দেখা হওয়ার পরে,
একবিংশ শতাব্দীতে তা এসে দাঁড়িয়েছে এক হপ্তায়!
তোমার সাথে দেখা হওয়ার পরই 
এক নুলো ভিখিরির বিরুদ্ধে একশ একটা 
রাষ্ট্রায়াত্ব ব্যাংক লুটের মামলা উঠেছে আন্তর্জাতিক আদালতে;
খবর আছে, তার বিরুদ্ধে মারণাস্ত্র পরীক্ষার তেজস্ক্রিয়তা ধ্বংসের এক সমান্তরাল 
অভিযোগ পত্রও দাখিল হতে পারে!

বিশ্বব্যাপী এতোকিছু ওলোটপালোট হয়ে গেলেও
আমাকে না পেলে তুমি বড়জোর সীমান্ত মিস করে কপোতাক্ষ ধরবে,
একা একা ঝুম বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর বাধাবে,
সাতদিন জ্বরের ঘোরে আমার নামে 
প্রেমহীন প্রলাপ বকবে,
একলা হবার ভয়ে শুভ্র বরফকুচিতে 
রক্ত লাল তুফান ছুটিয়ে দেবে!
চাকরিতে ইস্তফাও দিয়ে দিতে পার 
নেশা একটু বেড়ে গেলে!
মানিক মিয়া এভেন্যুর বিশাল ভরাট বুকের ওপর দাঁড়িয়ে
আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে এক বিকেল কাঁদবে!
স্লোগানে স্লোগানে ভেঙে দেবে এই শহরের এক দুপুরের গুমোট নির্জনতা!

তাই বলে নাসার মহাকাশযান ছিনতাই? 
বিস্মিত ইউএস কংগ্রেস এবং হাউজ অব কমন্স! 
কারণ MI6, CIA, ASIS সবাই একবাক্যে স্বীকার করেছে,
এত্তো বড় ঝুঁকি নেবার দুঃসাহস 
কোনো কালেই তোমার ছিলোনা!


কেমন আছো তুমি

জানি, সময় ঘড়িতে সাত বছর
খুব লম্বা নয়,
তবুও এ প্রতীক্ষা কণ্টকময়।
তোমাকে দেখার অপেক্ষায়
ক্লান্ত দু'চোখ ঘুমহীন জেগে রয়,
পথও শ্রান্তি খোঁজে অবসাদে,
উদ্ভ্রান্ত সময় দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়।
তৃষ্ণাকাতর এ বিরহ কাটে না যে আর!
কেমন আছো প্রিয়তমা আমার!

সেই সাত বছর আগে,
যেমনটা রেখে এসেছিলাম, 
তার থেকে কিঞ্চিত মেদ জমেছে কি শরীরে তোমার?
বয়সের ভারে ভঙ্গুর, কিছুটা নুব্জ্য হয়েছো কি তুমি?
অযাচিত গ্লুকোজ শরীরে কি মধুমেহ এনে দিল?
সর্বাঙ্গে ব্যথার জ্বালা নিয়ে আজ তুমি ব্যথাহীন!
বোধের এতো মৃত্যু মাড়িয়ে হেঁটে যেতে যেতে;
ক্ষমা করো, সয়ে যাও দ্বিধাহীন,
তবু থেকে যায় অনাহুত বেদনার ঋণ। 

নাকি চোখে মেখে কৃত্রিম সুরমার শান
সেজেছো সুরঞ্জনা আবার!
হাসলে কি আজও গালে টোল পড়ে তোমার?
কাজলদিঘীর কালো জলে 
ফোটে কি জোৎস্না সরোবর?
অমন নিটোল জলধারায়
আসে কি যৌবন জোয়ার?

কে বলে দাসী তুমি ছিন্ন বসনা,
শ্যামাঙ্গিনী তুমি! সে রূপ অনন্ত যৌবনা।
মারি আর মড়কের দুঃসহ এই অশনিপাতে
কেমন কাটছে তোমার দিন!
কেমন আছে ওরা, 
অনাহারে, অর্ধাহারে, দুঃখসন্তাপে!
ধূলোকাদায় বেড়ে ওঠা সন্তান তোমার,
খুব জানতে ইচ্ছে করে,
কেমন আছো তুমি, প্রিয়তমা আমার!

কবি- শিক্ষা কর্মকর্তা, টরন্টো, কানাডা।

এনএস/