ঢাকা, শনিবার   ১৮ মে ২০২৪,   জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

সানেম ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কনফারেন্স ২০২০-এর দ্বিতীয় দিন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:০৫ পিএম, ৩ অক্টোবর ২০২০ শনিবার

গতকাল দোসরা অক্টোবর বাংলাদেশ সময় বিকাল আড়াইটায় সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)-এর উদ্যোগে সানেম ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কনফারেন্স ২০২০-এর দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রম শুরু হয়। এই সম্মেলনের প্রতিপাদ্য “কভিড-১৯ এবং উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ”। অনলাইনে ওয়েব কনফারেন্স এপ জুম এর মাধ্যমে এই সম্মেলন আয়োজিত হচ্ছে। সানেম এর ফেসবুক পাতা এবং ইউটিউব চ্যানেল থেকেও সম্মেলনটি সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। 

সম্মেলনে গতকাল তিনটি সেশন আয়োজিত হয়। প্রথম ও তৃতীয় সেশন দুটি “সামষ্টিক অর্থনীতির প্রভাব” নিয়ে এবং দ্বিতীয় সেশনটি “অর্থনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক চ্যালেঞ্জসমূহ” নিয়ে।

“সামষ্টিক অর্থনীতির প্রভাব”-এর ওপর আয়োজিত প্রথম সেশনটিতে সভাপতিত্ব করেন শ্রীলঙ্কার ইন্সটিটিউট অব পলিসি স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক ড. দুশনি উইরাকুন। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশের গবেষণা পরিচালক ড. এম এ রাজ্জাক। সূচনা বক্তব্যে ড. উইরাকুন বলেন, কভিড-১৯ এর প্রভাব প্রথমে সরবরাহ খাতে পড়লেও, দ্রুতই চাহিদার ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়া শুরু করে। 

সেশনটিতে চারটি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপিত হয়। “ইজ কভিড-১৯ রিয়েলি এন এক্সোজেনাস শক?” শীর্ষক  সেশনের প্রথম প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন ড. ডেভ নাথান, যিনি দিল্লী ইন্সটিটিউট ফর হিউম্যান ডেভেলপমেন্টের বহিরাগত অধ্যাপক ও ভারতের জেনডেভ সেন্টার ফর রিসার্চ এন্ড ইনোভেশনের গবেষণা পরিচালক। প্রবন্ধটিতে পরিবেশ এবং মানুষের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের মধ্যকার সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করা হয়। 

এর পরে “কভিড-১৯: দ্যা ইমপ্যাক্ট এন্ড দ্যা ইম্পেটাস ফর পলিসি ইন এশিয়া এন্ড দ্যা প্যাসিফিক” শীর্ষক একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্যাংককের ম্যাক্রোইকোনমিক পলিসি এন্ড এনালাইসিস সেকশন, ইউনেস্ক্যাপ এর প্রধান ড. স্বেতা সি সাক্সেনা। মহামারীর আগে এশিয়া প্যাসিফিক ২০৩০ সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল বা এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য সঠিক পথে ছিল না বলে, প্রবন্ধে মন্তব্য করা হয়। 

মিনিস্ট্রি অভ ইকোনমি এন্ড ফিন্যান্স, মরক্কোর অধীনস্থ মাল্টিসেক্টোরাল মডেলস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. সাইদ আইত ফারাজি, “কভিড-১৯ এন্ড ডেভেলপমেন্ট চ্যালেঞ্জেসঃ পসিবল সোশিও-ইকোনমিক ইম্প্যাক্টস অন দ্যা মরক্কান ইকোনমি” শীর্ষক একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। মরক্কোর অর্থনীতির ওপর কভিড-১৯ এর প্রভাব নিয়ে প্রবন্ধটিতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। 

“গ্রোথ-এট-রিস্ক ইন ইন্ডিয়া এমিডস্ট কভিড-১৯ আনসার্টেইনটি” শীর্ষক সেশনের সর্বশেষ প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার গবেষণা বিভাগের এসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার ড. ইন্দ্রানি মান্না। ভারতের প্রবৃদ্ধির ওপর চাহিদা শর্ত, কভিড-১৯ সংকটের প্রেক্ষাপটে যে প্রভাব ফেলছে সেটি এই প্রবন্ধে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। 

গবেষণা প্রবন্ধগুলো নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে ড. এম এ রাজ্জাক বলেন, অভ্যন্তরীন অর্থনীতিতে পরবর্তী বিনিয়োগের উৎস কী হবে সেটি নিয়ে চিন্তা করতে হবে। 

“অর্থনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক চ্যালেঞ্জসমূহ” শীর্ষক দিনের দ্বিতীয় সেশনটিতে সভাপতিত্ব করেন ইউএনডিপির হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট অফিসের সাবেক পরিচালক ড. সেলিম জাহান। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। 

সভাপতির বক্তব্য ড. সেলিম জাহান বলেন, ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য অতীতের প্রতিষ্ঠান যথেষ্ট নয়। তিনি আরো বলেন, কভিড-১৯ সংকট শুধু একটি জনস্বাস্থ্য সংকটই নয়, এটি রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ইস্যুও। 

সেশনটিতে চারটি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপিত হয়। “প্যানডেমিক ক্যাচ-২২: হাউ এফেক্টিভ আর মোবিলিটি রেস্ট্রিকশনস ইন হল্টিং দ্যা স্প্রেড অব কভিড-১৯ ইন ডেভেলপিং কান্ট্রিস?” শীর্ষক  সেশনের প্রথম প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন আদনান ফকির, যিনি ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির পিএইচডি শিক্ষার্থী। প্রবন্ধে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কভিড-১৯ সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউন ও অন্যান্য ব্যবস্থার নানা দিকে তুলে ধরা হয়েছে। 

এর পরে “লকডাউন, কমিউনিটি এবাইড্যান্স এন্ড ইনডিভিজুয়াল কমপ্লায়েন্স উইথ কভিড-১৯ গাইডলাইনসঃ এভিডেন্স ফ্রম ইন্ডিয়া” শীর্ষক একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভারতের কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. প্রসেনজিৎ সারখেল। কমিউনিটি কিভাবে ব্যক্তিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাতে সহায়তা করতে পারে সে ব্যাপারে প্রবন্ধটিতে আলোকপাত করা হয়। 

ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অর্থনীতি বিভাগের পিএইচডি শিক্ষার্থী ইলিনর ওয়াইজম্যান, “ট্রেড, করাপশন এন্ড কভিড-১৯: এভিডেন্স ফ্রম স্মল-স্কেল ট্রেডারস ইন কেনিয়া” শীর্ষক একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। উন্নয়নশীল দেশগুলোর সীমান্ত এবং মহামারী সামলাতে নেয়া ব্যবস্থাগুলো নিয়ে একটি তুলনামূলকা আলোচনা প্রবন্ধে উপস্থাপিত হয়। 

“দ্যা মোরাল ইকোনমি অব দ্যা প্যানডেমিক ইন বাংলাদেশঃ উইক স্টেটস এন্ড স্ট্রং সোসাইটিস ডিউরিং কভিড-১৯” শীর্ষক সেশনের সর্বশেষ প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন যুক্তরাজ্যের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের গবেষণা ফেলো ড. নওমি হোসাইন। প্রবন্ধে বিভিন্ন শাসন ব্যবস্থা ও মহামারী সংকট বিধানে তাদের গৃহীত পদক্ষেপসমূহের সম্পর্ক প্রতিফলিত হয়েছে।  

গবেষণা প্রবন্ধগুলো নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে ড. সেলিম রায়হান বলেন, স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে জনগণের চলাফেরা হ্রাস করতে বিভিন্ন বিধি-নিষেধের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার জায়গা আছে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের সক্ষমতা এবং জনগণের নিয়ম মানার অভ্যাস—ইত্যাদি বিবেচনা নিতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

“সামষ্টিক অর্থনীতির প্রভাব” সংক্রান্ত দিনের সর্বশেষ সেশনটিতে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ব ব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের চিফ ইকোনমিস্ট ড. হ্যান্স টিমার। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সানেমের চেয়ারম্যান ড. বজলুল হক খন্দকার। সূচনা বক্তব্যে ড. টিমার বলেন, মহামারীর ফলে চাহিদা ও সরবরাহ ধারা উভয়ই বিঘ্নিত হওয়ায়, আর্থিক প্রণোদনার কার্যকারিতা কমেছে। 

সেশনটিতে চারটি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপিত হয়। “কভিড-১৯ ইন বাংলাদেশঃ ইম্প্যাক্টস অন প্রোডাকশন, পোভার্টি এন্ড ফুড সিস্টেমস” শীর্ষক  সেশনের প্রথম প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন ড. পল ডরোশ, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইন্সটিউট-এর ডেভেলপমেন্ট স্ট্র্যাটেজি এন্ড গভর্নেন্স বিভাগের পরিচালক। মহামারী মোকাবিলায় গৃহীত লকডাউনের অর্থনৈতিক প্রভাব প্রবন্ধটিতে তুলে ধরা হয়েছে। 

এর পরে “কভিড-১৯ ইন ইমার্জিং মার্কেটসঃ ফার্ম সার্ভে এভিডেন্স” শীর্ষক একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টেরা নোভা ক্যাপিটালের ম্যানেজিং পার্টনার বারটন ফ্লিন। প্রবন্ধটির জন্য পরিচালিত জরিপে অংশ নেয়া কোম্পানীগুলোর মহামারী প্রেক্ষাপটে নানা সিদ্ধান্ত প্রবন্ধটিতে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।  

ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট কলকাতার ডক্টরাল রিসার্চ ফেলো হিমাদ্রী শেখর চক্রবর্তী, “প্যানডেমিক আনসার্টেইনটিস এন্ড ফিস্ক্যাল প্রোসিক্লিক্যালিটিঃ এ ডায়নামিক নন-লিনিয়ার এপ্রোচ” শীর্ষক একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। কভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য খাতে প্রণোদনা দেয়ার ক্ষেত্রে তথ্যের অসামঞ্জস্য এ প্রবন্ধে উঠে আসে। 

“একজামিনিং দ্যা ইকোনমিক ইম্প্যাক্ট অব কভিড-১৯ ইন ইন্ডিয়া থ্রু ডেইলি ইলেকট্রিসিটি কনসাম্পশান এন্ড নাইট-টাইম লাইট ইন্টেন্সিটি” শীর্ষক সেশনের সর্বশেষ প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন বিশ্ব ব্যাংক, ওয়াশিংটন ডিসি-এর রিসার্চ এনালিস্ট ড. সেবাস্তিয়ান ফ্রাঙ্কো-বেদোয়া। প্রবন্ধটিতে ভারতের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের জন্য বিদ্যুৎ এবং বৈদ্যুতিক আলো সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করা হয়েছে। 

গবেষণা প্রবন্ধগুলো নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে ড. বজলুল হক খন্দকার বলেন, সুশাসন না থাকায় বিভিন্ন স্বল্পোন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশের স্বাস্থ্যখাতে অতিরিক্ত অর্থ বিনিয়োগ করলেও ঐ খাতগুলো সেটি ঠিকমত ব্যবহার করতে পারবে না। 

সম্মেলনে গতকাল জুম-এর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের প্রায় দেড়শ জন অর্থনীতিবিদ, গবেষক, শিক্ষক, সাংবাদিক, উন্নয়ন কর্মী এবং শিক্ষার্থী যোগ দেন।

আজকে এই সম্মেলনের শেষ দিন। বাংলাদেশ সময় দুপুর আড়াইটার সময় সম্মেলনটির আজকের (তৃতীয় বা সর্বশেষ দিনের) কার্যক্রম শুরু হবে। সানেম-এর ফেসবুক পাতা এবং ইউটিউব চ্যানেল থেকে সম্মেলনটি সরাসরি সম্প্রচারিত হবে। এর আগে গত পহেলা অক্টোবর সম্মেলনটি শুরু হয় এবং সেদিন দুটি সেশন আয়োজিত হয়।

কনফারেন্সে কভিড-১৯ মহামারীর সাথে সম্পর্কের সূত্র ধরে সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, জনস্বাস্থ্য ও জনস্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা, শ্রম বাজার, কর্মসংস্থান, রেমিট্যান্স, অভিবাসন, দারিদ্র্য, বৈষম্য এবং সামাজিক সুরক্ষা, ইত্যাদি বিষয়ের ওপর ২৪টি গবেষণা প্রবন্ধ তিন দিন ব্যাপি উপস্থাপিত হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সানেম-এর নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান এই সম্মেলনের আহ্বায়ক। 

আরকে//