ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

যে যুক্তিতে মিন্নির খালাস চেয়ে আপিল

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৫৫ এএম, ৭ অক্টোবর ২০২০ বুধবার

বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার স্ত্রী ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়েছে। মিন্নির পক্ষে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই আবেদন করেন তার আইনজীবী মাক্কিয়া ফাতেমা ইসলাম।

আবেদনে মিন্নির দণ্ড বাতিল ও খালাস চাওয়া হয়েছে। আইনজীবী মাক্কিয়া ফাতেমা ইসলাম ‘মিন্নি খালাস পেতে পারেন’ এমন যুক্তি দেখিয়েছেন। 

আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘সে (মিন্নি) তার স্বামী রিফাতকে দুর্বৃত্তদের হামলা থেকে বারবার প্রাণপণে বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আদালত রায়ে- মিন্নি রিফাতকে বাঁচানোর চেষ্টা করেনি বলা হয়েছে। অথচ এসব স্পষ্ট হওয়া সত্ত্বেও আদালত আবেগপ্রবণ হয়ে মিন্নিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন। তাই এ রায় বাতিলযোগ্য।’

মিন্নির খালাস চেয়ে করা আপিলের যুক্তিগুলো হচ্ছে-
১. গত ৩০ সেপ্টেম্বর বরগুনার দায়রা আদালতে যে রায় ঘোষণা করা হয়েছে তা আইন, ঘটনা এবং পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনায় একটি খারাপ নজির তৈরি করেছে।

২. প্রাথমিকভাবে আপিলকারী (মিন্নি) এই মামলায় সাক্ষী ছিল। পরে তাকে মামলার আসামি করা হয়েছে। তাকে ৫ দিন পুলিশ রিমান্ডে রাখা হয়েছিল। ম্যাজিস্ট্রেট আদালত রিমান্ডের মধ্যবর্তী সময়ে ‘ফিল্মি স্টাইলে’ আইনবহির্ভুতভাবে তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করে। যার কারণে ওই রায়টি বাতিলযোগ্য।

৩. মামলার চার্জশিটে ৭৫ জন সাক্ষী রাখা হয়েছিল। এর মধ্যে ৭, ১৩, ১৪ এবং ১৭ নম্বর সাক্ষী নিজেদের চাক্ষুষ সাক্ষী দাবি করা সত্ত্বেও তাদের তথ্য-প্রমাণ ছিল পক্ষপাতদুষ্ট। তাই ওই রায়টি বাতিলযোগ্য।

৪. মিন্নি এ মামলার গুরুত্বপূর্ণ ও নির্ভরযোগ্য সাক্ষী ছিলেন। কিন্তু মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তাকে অপরাধী হিসেবে সাজা প্রদান করে রায় ঘোষণা করায় তা বাতিলযোগ্য।

৫. মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা অস্বচ্ছতার সঙ্গে এ মামলার তদন্ত করেন এবং কোনোরকম আইনি ভিত্তি ছাড়া মামলার চার্জশিট দাখিল করেন, যা মোটেই নির্ভরযোগ্য নয়।

৬. মিন্নির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ আমলে না নিয়েই বরগুনার দায়রা জজ আদালত তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এখানে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারা সঠিকভাবে অনুসরণ করা হয়নি। যা তাকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

৭. আইনের সঠিক অনুসরণের অভাবে এ মামলায় মিন্নি নিজেকে রক্ষায় উপযুক্ত সুযোগ পায়নি।

৮. মামলা দায়েরের সময় বাদী (রিফাতের বাবা) জানান, ঘটনাস্থল থেকে মিন্নি রিফাতকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে রিকশাযোগে এনে ভর্তি করেন এবং মিন্নিকে একমাত্র সাক্ষী করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে মামলার তদন্ত শেষে মিন্নিকে আসামি করে দণ্ড দেয়া হয়, এতে করে মিন্নি পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন।

৯. আদালত (বরগুনার) সন্দেহপূর্ণ, মৌখিক সাক্ষ্য এবং ধারণানির্ভর অন্যান্য পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনায় এ রায় দিয়েছেন, যা বাতিলযোগ্য।

১০. ওই ঘটনায় ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার তথ্য থেকে এটা স্পষ্ট দেখা গেছে যে, সে বারবার তার স্বামী রিফাতকে আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আদালত তার রায়ে মিন্নি রিফাতকে বাঁচানোর চেষ্টা করেনি বলে উল্লেখ করেছেন। অথচ এসব স্পষ্ট হওয়া সত্ত্বেও আদালত আবেগপ্রবণ হয়ে মিন্নিকে সাজাপ্রদানের রায় ঘোষণা করেছেন। তাই এ রায় বাতিলযোগ্য।

১১. মিন্নিকে সাজাপ্রদানের ঘটনা অনুমান ও ধারণানির্ভর। এ মামলায় সাক্ষীদের জেরাও বিবেচনা করা হয়নি। ফলে মিন্নিকে অপরাধী সাব্যস্ত করে সাজা সংক্রান্ত আদালতের রায়টি ভুল সিদ্ধান্ত।

১২. মিন্নির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা সন্দেহাতীতভাবে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেননি।

১৩. যেকোনো দৃষ্টিকোণ থেকে বিচারিক আদালতের পক্ষ থেকে মিন্নিকে সাজাপ্রদানের বিষয়টি নির্ভরযোগ্য না হওয়ায় এ রায় বাতিলযোগ্য।

১৪. আপিলকারীকে প্রহসনমূলক ও অযৌক্তিকভাবে সাজা প্রদান করা হয়েছে।

১৫. রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীরা রাষ্ট্রপক্ষের স্বার্থ হাসিলের জন্য এই মামলায় অতিরঞ্জিত করেছেন।

১৬. আপিলকারীকে দোষী সাব্যস্ত করা ব্যতীত বিচারক এই মামলায় অন্য আর কিছুই বিবেচনা করেননি।

১৭. দণ্ডবিধি আইনের ৩০২ ধারা প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় আপিলকারী এ মামলায় খালাস পাবেন।

১৮. সময়ে সময়ে এ মামলার যুক্ত হওয়া সাক্ষীদের ওপর নির্ভর করে সাজা দেয়া হয়েছে, কিন্তু সেসব সাক্ষীরা বিশ্বাসযোগ্য ছিল না।

১৯. পুলিশ বা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে সাক্ষীরা বিভিন্ন বক্তব্য দেয়ায় সেসব সাক্ষীরা মোটেও নির্ভরযোগ্য ছিল না।

২০. অগ্রহণযোগ্য পদ্ধতি অনুসরণ করে এ মামলার বিচারপ্রক্রিয়া পরিচালিত হয়েছে।

২১. যেকোনো দৃষ্টিকোণ থেকে এ মামলার ঘটনা, পারিপার্শ্বিকতা, তথ্য-প্রমাণের ওপর নির্ভর করে রাষ্ট্রপক্ষ (প্রসিকিউশন) সন্দেহাতীতভাবে মামলার অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে। তাই এ মামলায় মিন্নি খালাস পাওয়ার যোগ্য।

এর আগে আলোচিত রিফাত হত্যা মামলায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর মিন্নিসহ ৬ আসামির মৃত্যুদণ্ড ও চারজনকে খালাস দিয়ে রায় ঘোষণা করেন আদালত।
এসএ/